উত্তরের জেলা জয়পুরহাটের লতিরাজ কচুই কৃষকদের ভাগ্য বদলেছে। প্রতি বিঘায় কচু চাষে কৃষকের লাভ হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। বছরের প্রায় দশ মাসই উৎপাদন হওয়ায় অন্য ফসলের তুলনায় কৃষকদের আগ্রহ বেশি লতিরাজ কচু চাষে। এতে করে জেলায় দিন দিন বাড়ছে লতিরাজ কচুর চাষ। হাজার হাজার মেট্রিক টন লতিরাজ কচু রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি এবং এপ্রিল থেকে মে পর্যন্ত দুই মৌসুমে লতিরাজ কচু চাষ হয়। এটি দুই ভাবে রোপণ করা যায়। একটি চারার মাধ্যমে অপরটি কান্ডের মাধ্যমে। কান্ড রোপণের এক মাস এবং চারা রোপণের আড়াই থেকে তিন মাস পর লতিরাজ কচু উৎপাদন শুরু হয়।
এক বিঘায় লতিরাজ চাষে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি মৌসুমে বিঘায় ৬০ থেকে ৭০ মণ কচুর লতি উৎপাদন হয়। লতি ছাড়াও কান্ড উৎপাদন হয় ২৫০ থেকে ২৬০ মন। বাজারে প্রতি মণ লতি বিক্রি হয় ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকা। কান্ড বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা মণ দরে। এক বিঘায় খরচের পর কৃষকের লাভ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
প্রায় তিন দশক আগে শখের বসে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার পাটাবুকা গ্রামের ভূমিহীন দুই কৃষক লুৎফর রহমান ও আমির আলি জেলায় প্রথম পরীক্ষামূলক ভাবে লতিরাজ কচু চাষ শুরু করেন। অল্প সময়ে এতে উৎপাদন ও বেশি লাভ হওয়ায় দ্রæত কচু চাষে অপর কৃষকরা ঝুঁকে পড়েন। প্রায় সারা বছরই চাষ হয়। স্বাদ-পুষ্টিতে সেরা হওয়ায় লতিরাজ দ্রæত জনপ্রিয়তা লাভ করে। লুৎফর আর আলির উদ্ভাবিত কচুর লতি এ অঞ্চলের অনেক কৃষকের দারিদ্রতা জয় করেছে।
কচুর লতি স্বাস্থ্যসম্মত, পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হওয়ায় জেলায় বর্তমানে এটি জনপ্রিয় সবজির তালিকায় স্থান পেয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে। যা থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন লতি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
পাঁচবিবি উপজেলার বটতলী বাজারের লতি ব্যবসায়ী শাহজাহান দেওয়ান বলেন, গত ২৩ বছর ধরে আমরা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন ব্যবসায়ী লতি কেনাবেচা করি। প্রতিদিন ট্রাকে করে এই লতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে যায়। তারা বলেন, এই বাজার থেকে কচুর লতি মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত ও সউদী আরবসহ ইউরোপের ২৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে।
লতিরাজ বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রক্রিয়াজাত কাজে প্রায় তিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করে। এতে এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কিন্তু সমস্যা একটাই, আর তা হচ্ছে বাজারের স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা আজো হয়নি।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স ম মেফতাহুল ইনকিলাবকে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে কচুর লতি চাষ হয়েছে। যা থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন লতি উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
চিকিৎসকদের কথা, কচুর লতিতে প্রচুর আয়রন-ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন রয়েছে। আর এসব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এতে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকায় হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ডায়াবেটিক রোগীসহ সুস্থ এবং অসুস্থ্য সবার শরীরের জন্যই সবজি হিসেবে কচুর লতি খুব উপকারি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন