শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কৃষিখাতে বিপুল দক্ষ লোক প্রয়োজন

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

দেশে কৃষির অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে। স্বাধীনতাত্তোর এ পর্যন্ত উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। তবুও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ম্বর হয়নি দেশ। ধান উৎপাদনে কিছুটা স্বয়ম্বর হয়েছিল। কিন্তু গত বছর ভয়াবহ বন্যায় আমন-আউশের উৎপাদন অনেক কম হয়েছে। গমের উৎপাদন হয়েছে চাহিদার সামান্যই। তাই বর্তমানে খাদ্য ঘাটতি বিপুল। মার্কিন কৃষি বিভাগের প্রতিবেদন মতে, ‘চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতি মেটাতে চাল ১১ লাখ টন ও গম ৬৬ লাখ টন মোট ৭৭ লাখ টন আমদানি করতে হতে পারে’। এ অবস্থায় গত ৪ এপ্রিল আচমকা লু হাওয়ায় নিমিষেই কয়েকটি জেলায় কমপক্ষে ২০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া জমির পরিমাণ আরো কয়েকগুণ। ফলে বোরো উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি-না সংশয় রয়েছে। এছাড়া, বর্তমানে খাদ্য মজুদের পরিমাণও সর্বনিম্ন ৫ লাখ টনের মতো! দেশে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, দুধ ও বিভিন্ন ধরনের মসলার বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। সব মিলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে খাদ্য পণ্য আমদানি করতে হয়। তাতে প্রায় লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হয়। দেশে খাদ্যপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত, গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত নয়। মজুদদারি ও অতিমুনাফাও ব্যাপক। ফলে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েই চলেছে বছরের পর বছর। আর এ বছর তা অস্বাভাবিক হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন মতে, ‘বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে মিলার, আড়তদার ও পাইকাররা দায়ী’। তবুও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয় না। টিসিবি ও ওএমএস-এর ন্যায্যমূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রিও নগণ্য। তাই খাদ্যদ্রব্যের মূল্য লাগামহীন হয়েছে। সাধারণ মানুষ চরম সংকটে পড়েছে। তাই টিসিবি ও ওএমএস’র দোকানে নারী-পুরুষের প্রচন্ড ভিড় হচ্ছে। দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স’-২০২০ মতে, ‘বিশ্বের ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম (২০১৯ সালে ছিল ৮৩তম)। খাদ্যক্রয়ক্ষমতা, খাদ্যের পর্যাপ্ততা, গুণগত মানসহ নিরাপদ খাদ্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সক্ষমতা নিয়ে এই সূচক তৈরি’। এফএও’র সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন মতে, ‘বাংলাদেশ বড় ধরনের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে’। তাই খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার ও মূল্যনিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। টিসিবি ও ওএমএস-এর কার্যক্রম সার্বক্ষণিক ও পর্যাপ্ত হলে মানুষ ব্যাপক সুফল পাবে। কিন্তু এ জন্য সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় খাদ্য মজুদ থাকা দরকার। চলতি ইরি-গম মওসুমে খাদ্যমজুদ বাড়িয়ে কমপক্ষে ৪০ লাখ টন করা প্রয়োজন। কারণ, চরম খাদ্য সংকট চলছে বিশ্বব্যাপীই। দুর্ভিক্ষও দেখা দিয়েছে অনেক দেশে। খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি করে নিরাপদে থাকা তাই শ্রেয়। অভ্যন্তরীণ ক্রয়মূল্য বৃদ্ধি ও আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে এটা করতে হবে।

দেশের কৃষি এখনও সেকেলে। তাই উৎপাদনের হার খুব বেশি নয়। উপরন্তু কৃষিশ্রমিকের ব্যাপক ঘাটতিজনিত কারণে মজুরী অত্যধিক। ফলে কৃষি উৎপাদনের ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত। এই অবস্থায় দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার কার্যক্রম শুরু হলে কৃষির ভর্তুকি ও প্রণোদনা উঠে যাবে। এতে মূল্য বৃদ্ধি ঘটবে অনেক। এছাড়া ক্রমান্বয়ে মানুষ বাড়ছে, আর কৃষি জমি কমছে। ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়তে পারে। সেটা যেন না হয়, সে জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও ব্যয় কমাতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন কৃষিকে শতভাগ আধুনিক করা। যার প্রধানতম কাজ যান্ত্রিকীকরণ। অর্থাৎ সেচ, চাষ, রোপণ-বপন, নিড়ানি, কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই, বস্তাবন্দী, ধান সিদ্ধ-শুকানো, ভাঙ্গা, ঝাড়াই, বস্তাবন্দি, পরিবহন সবই সর্বাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে করতে হবে। তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ব্যয় ও অপচয়ও হ্রাস পাবে কমপক্ষে ৪০%। ইতোমধ্যেই কৃষিতে যান্ত্রিকরণ শুরু হয়েছে। সরকার চলতি অর্থবছরে এ খাতে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কৃষিযন্ত্র ক্রয়ে ৫০-৭০% ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। কিছু বিদেশি সংস্থা দেশে কৃষি যন্ত্রের কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। আরও অনেক দেশি-বিদেশি সংস্থা যন্ত্র ও পার্টস তৈরি এবং সংযোজনের কারখানা করার উদ্যোগ প্রয়োজন। কারণ, কৃষিখাত শতভাগ যান্ত্রিকরণে বিপুল যন্ত্রের দরকার। তাই এটা খুবই সম্ভাবনাময় খাত। তাই কৃষিযন্ত্র তৈরি, সংযোজন, চালনা ও মেরামত খাতে কয়েক লাখ দক্ষ লোক দরকার হবে, যা তৈরি করতে হবে দেশেই। সে জন্য অসংখ্য তরুণ-তরুণী এবং বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে। একজন দক্ষ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হতে সময় লাগে ৪ বছর। দেশে বহু প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিপ্লোমা কলেজ রয়েছে। অন্যদিকে, একজন কৃষিযন্ত্র চালনা ও মেরামত করার দক্ষ লোক তৈরি হতে সময় লাগে ৬ মাস।দেশে বহু ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। একইভাবে কৃষিবিদ-ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ও টেকনিশিয়ানও তৈরি করতে হবে। কারণ, কৃষিখাতে নতুন উদ্ভাবন ও তার ব্যবহার এবং পণ্যসংরক্ষণ, প্রসেসিং ও প্যাকেটিংসহ নানা কাজে তাদের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও আছে দেশে। অর্থাৎ দেশে কৃষিখাতের দক্ষ লোক তৈরি করতে কোন সমস্যা নেই। এখন দরকার শুধু উদ্যোগের। তাহলে এক দশকের মধ্যেই কৃষিখাতে বহু দক্ষ লোক তৈরি হবে। তারা দেশের চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে কাজ করতে পারবে। দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকা মহাদেশে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ (৯৯ বছরের লীজ নিয়ে কৃষি কাজ করা)। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এটা শুরু হলে সেখানে বিপুল দক্ষ লোকের দরকার হবে। দেশেও কৃষিখাতে দক্ষ লোকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বদা লেটেস্ট উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টিসমৃদ্ধ বীজ এবং লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে। উপরন্তু এসবের মধ্যে এ পর্যন্ত যা উদ্ভাবন হয়েছে, তা দ্রুত দেশের সর্বত্রই ব্যবহার করতে হবে। তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পুষ্টিঘাটতিও দূর হবে। ব্যয় ব্যাপক হ্রাস পাবে। সব সময় হালনাগাদ নির্ভুল চাহিদা ও উৎপাদনের পরিসংখ্যান করতে হবে এবং সে মতে, ফসল উৎপাদনে চাষিকে উদ্বুদ্ধ ও ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। যেসব পণ্যের ঘাটতি বেশি, সেসব পণ্য বেশি ফলানার জন্য প্রণোদনা দিতে হবে। বিশেষ করে, গম ও ভোজ্য তেলে। কারণ, এসবের আমদানির পরিমাণ ও তার ব্যয় সর্বাধিক। ব্যাপকভাবে পাম ও সূর্যমুখী চাষ খুবই ফলদায়ক হতে পারে। উপরন্তু যখন যেখানে যে ধরনের বীজ তথা খরাসহিঞ্চু, লবণাক্তসহিঞ্চু, বন্যাসহিঞ্চু বীজ ব্যবহার করা দরকার, সেটা করার জন্য কৃষককে পরামর্শ দিতে হবে। সর্বোপরি মাটির উর্বরতা ও পরিবেশ বিবেচনা করে কোন অঞ্চলে কোন ফসল বেশি উৎপাদন হয়, তার জোন ম্যাপিং করা দরকার বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন।

দেশের কৃষিখাতের উদ্ভাবন অসামান্য। ব্রি দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে ১৬তম। এমনকি দেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা একই গাছে দুই ধরনের সবজির উদ্ভাবন করেছেন। এ পর্যন্ত বেগুন ও আলু এবং টমেটো ও আলু হচ্ছে একই গাছে। দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের সা¤প্রতিক কিছু সফল উদ্ভাবনের অন্যতম হচ্ছে: পেঁয়াজ, মাছের পাউডার ও মসলা প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটিং করা এবং স্বয়ংক্রিয় সেচের যন্ত্র। এর বাইরে সাধারণ মানুষ উদ্ভাবন করেছে ভাসমান চাষ, মাচা চাষ, ছাদ বাগান ইত্যাদি। এসব দেশব্যাপী প্রয়োগ করা দরকার। দেশে কিছু ফসলের ভালো বীজের প্রচন্ড ঘাটতি থাকে প্রতিবছরই। তাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু তার অনেকগুলোতে নানা সংকট দেখা দেয়। ফলে ফলন হয় না। তাই সব ফসলের প্রয়োজনীয় বীজ দেশেই উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা দরকার। উপরন্তু সব ফসলের আগাম জাত, সম্ভব হলে বারোমাসী জাত উদ্ভাবন করা প্রয়োজন।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স-২০২১ মতে, ‘সচেতনতার অভাবে পরিবহন, সরবরাহ ও খুচরা বিক্রি পর্যায়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১.০৬ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হচ্ছে’। অবশ্য এটা নতুন নয়। আদিকাল থেকেই হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মতে, ‘বাংলাদেশে কৃষিপণ্যের ৩০% অপচয় ও পচে যায়, যার মূল্য বিপুল’। সংরক্ষণ ও প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় এই ক্ষতি হচ্ছে। তবুও দেশে কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও প্রসেসিংয়ের ব্যবস্থা তেমন নেই। অথচ এটা খুবই সম্ভাবনাময় খাত। তাই মধুপুরে আনারস প্রক্রিয়াজাত শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বিসিক। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আনারস থেকে স্লাইস, জুস, চিপস, জ্যাম-জেলিসহ নানা খাদ্যপণ্য তৈরি হবে। পাশাপাশি অন্য ফল প্রক্রিয়াজাত করতে আলাদা প্লটও বরাদ্দ করা হবে বলে খবরে প্রকাশ। এটা খুব ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগের যথাসময়ে বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। এ ধরনের আরো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে বিসিকের সব শিল্প নগরেই। বর্তমানে বিসিকের ৭৯টি শিল্পনগরে ৫৩৪টি প্লট খালি আছে। উপরন্তু ২০৪১ সালের মধ্যে ১০০টি শিল্প পার্ক স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি। সর্বোপরি সরকার যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে, সেখানেও কৃষিশিল্প প্রতিষ্ঠায় প্রাধান্য দেয়া দরকার। তাহলেই দেশে প্রয়োজনীয় কৃষিশিল্প তৈরি হবে। তাতে কৃষক ও ভোক্তা লাভবান হবে। রফতানিও হবে। অপরদিকে, চাল, গম, মাছ, মাংস, তরকারি ইত্যাদির প্রয়োজনীয় গুদাম-হিমাগার তৈরি করতে হবে। এছাড়া, হালাল পণ্য উৎপাদনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। হেক্সা রিসার্চের মতে, ‘২০২৪ সালে বৈশ্বিক হালাল পণ্য ও সেবা বাজারের আকার দাঁড়াবে প্রায় ১২.১৪ ট্রিলিয়ন ডলার’। এর মধ্যে প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলারের ‘আন্তর্জাতিক হালাল বাজার’ ধরতে চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুবাই ভিত্তিক আইএইচএএফ’র সদস্যপদ প্রাপ্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই সংস্থাটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হালাল পণ্য ও সেবার সনদ প্রদানকারী সংস্থার অ্যাক্রিডিটেশন প্রদান করে থাকে। দেশের এই উদ্যোগ সফল হলে রফতানিতে নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে। বিপুল সংখ্যক প্রান্তিক মানুষের স্থায়ী কর্মসংস্থান হবে। পোশাক নির্ভর রফতানিতেও বৈচিত্র্য আসবে। হালাল পণ্য রফতানি করার মতো প্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে পশু, হাঁস-মুরগি রয়েছে দেশে। এখন দরকার দ্রæত এ সংক্রান্ত বিধান, কাঠামো তৈরি ও বাস্তবায়ন। পরিবেশ রক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী পাটপণ্যের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সদ্ব্যবহার করা দরকার। সে জন্য পাটপণ্যে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এ জন্য বন্ধ করা সব সরকারি পাটকলগুলো দ্রুত চালু করা দরকার। তাহলে পাটের সুদিন ফিরে আসবে। পরিবেশেরও ব্যাপক উন্নতি হবে। পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে সব উন্নতি মাঠে মারা যাবে।

দেশে এখনও বিপুল পরিমাণে জমি অনাবাদী রয়েছে। এছাড়া, সেচের আওতা বহির্ভূত জমির পরিমাণও অনেক। উপরন্তু যেসব জমি সেচের আওতায় এসেছে, তার অধিকাংশই সেচযন্ত্র চালিত হয় ব্যয়বহুল ডিজেলে। এ অবস্থায় সব অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনা, সব কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনা, সব সেচ মেশিনে বিদ্যুৎ সংযোগ ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ দেয়া দরকার। সব সেচ মেশিন সৌর বিদ্যুতে চালানো বেশি লাভজনক। সার ও কীট নাশকেরও অপব্যবহার রোধ করতে হবে। সম্ভব হলে এসব ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ, এতে ভূমি, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কৃষকরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তাই প্রাকৃতিক সার ও বালাই নাশক ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। দেশ-বিদেশে ব্যাপকভাবে অর্গান ফুডের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। নদী ভাঙ্গনেও বিপুল পরিমাণে কৃষিজমি বিলীন হচ্ছে। এক গবেষণা রিপোর্ট মতে, ‘বাংলাদেশে মোট ভূমির পরিমাণ ১৪.৪ মিলিয়ন হেক্টর। এর ৬৬.৬% জমি ব্যবহৃত হয় কৃষি কাজে। কিন্তু এ থেকে প্রতিদিন ২ হাজার বিঘা জমি কমে যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে কৃষিজমি শেষ হয়ে যাবে। ফলে চরম খাদ্য সংকট সৃষ্টি হবে। তাই কৃষি জমি রক্ষা করা অপরিহার্য্য। সেচ ও ব্যবহারে ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। জমিতে সেচও বেশি লাগছে। তাই ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করতে হবে। সে জন্য দেশের সব নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর ও পুকুর-দীঘি দখলমুক্ত ও সংস্কার করে বর্ষা ও বৃষ্টির পানি ধরে রেখে ব্যবহার করতে হবে। টেকসই হাওর ও নদী রক্ষা বাঁধও দরকার। ভারতের সাথে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য পাওনা আদায়ের পদক্ষেপ জোরদার করতে হবে। দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় রয়েছে অফুরন্ত সম্পদ। যার অন্যতম হচ্ছে মৎস্য, খনিজ ও শৈবাল। সমুদ্রের মৎস্য আহরণ করতে পারলে দেশের মৎস্য উৎপাদনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পাবে। কৃষির উন্নতির সাথে কৃষকেরও উন্নতি ঘটাতে হবে। তারা দীর্ঘদিন যাবত ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আর্থিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়েছে। এ থেকে রক্ষার জন্য প্রতিটি ফসল উঠার সাথে সাথে তা তাদের কাছ থেকে সরাসরি ন্যায্যমূল্যে ক্রয় করতে হবে। তবেই কৃষক লাভবান হবে, তাদের আর্থিক উন্নতি ঘটবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন