শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ক্ষমা লাভের শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে রমজান

জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

মহান আল্লাহর অনুকম্পা লাভের ও গুনাহ থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে মাহে রমজান। সারা বছরের কৃত অপরাধের মার্জনা লাভের শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে রমজান। গতকাল রমজানের দ্বিতীয় জুমায় বিভিন্ন মসজিদে খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম-খতিবরা এসব কথা বলেন। চলমান লকডাউনের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদগুলোতে জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে। মসজিদে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে। করোনা মহামারি থেকে মুক্তি দেশ জাতির উন্নতি এবং মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি কল্যাণ কামনা করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়।

ঢাকার বাংলা মটর বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, মহানবী (সা.) পবিত্র রমজান মাসকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। প্রথম দশ দিন রহমতের, দ্বিতীয় দশ দিন মাগফিরাতের এবং শেষ দশ দিন নাজাতের। (বাইহাকি, হাদীস নং-৩৩৩৬)। রহমতের দশক গতকাল শেষ হয়েছে। শুরু হয়েছে মাগফিরাতের দশক। মাগফিরাত শব্দের বাংলা অর্থ ক্ষমা। মহান আল্লাহর অসংখ্য গুণবাচক নামের একটি ‘আল-গাফুর’ অর্থাৎ ক্ষমাশীল। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। (সূরা হজ¦ আয়াত নং-৬০)।

খতিব বলেন, রমজান মাস আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য এক মহা নিয়ামত। মহান আল্লাহর অনুকম্পা লাভের ও গুনাহ থেকে মুক্তির বার্তা নিয়ে আসে রমজান। সারা বছরের কৃত অপরাধের মার্জনা লাভের শ্রেষ্ঠ সময় এই মাহে রমজান। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজান মাসে একজন আহ্বানকারী (ফেরেশতা) এই বলে আহ্বান করেন, হে কল্যাণ অনুসন্ধানকারীগণ! আল্লাহর কাজে আগ্রসর হও। হে পাপাচারী! (অকল্যাণ থেকে) থেমে যাও। এ মাসে আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত করেন এবং এটা রমজানের প্রত্যেক রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী, হাদীস নং-৬৮২)।

নবীজী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রমজানের রাতে কিয়ামুল লাইল করে তার পিছনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। (বুখারী, হাদীস নং-২০০৮)। মালিক বিন হাসান তার পিতামহ হতে বর্ণনা করেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সা.) মিম্বারে চড়েন। প্রথম ধাপে চড়েই বলেন, আমীন। এমনিভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে চড়েও আমীন বলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমার নিকট জিবরীল উপস্থিত হয়ে বললেন, হে মুহাম্মদ! যে ব্যক্তি রমজান পেল অথচ ক্ষমা প্রাপ্ত হলো না, আল্লাহ তাকে ধ্বংস করুন। তখন আমি (প্রথম) আমীন বললাম।

খতিব বলেন, অসহায় ক্ষুধার্থকে খাদ্য প্রদান করতে স্বয়ং আল্লাহ নির্দেশ করেছেন। মহান আল্লাহ আরো বলেন, নিশ্চয়ই মুমিনরা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার টানে খাদ্য দান করে অভাবী, ইয়াতিম ও কয়েদীদেরকে। (সূরা ইনসান, আয়াত নং-৮)। মহিমান্বিত এই রমজানে আল্লাহ আমাদের সকলের গুনাহ মাফ করুন অধিক পরিমাণে দান করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মিজানুর রহমান গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, রমাদানে মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৩)। রমাদান মাস বান্দার আমলের প্রশিক্ষণের মাস। তাকওয়া সবর, সংযম, সহনশীলতা শিক্ষা দেয় রমাদান। পেশ ইমাম বলেন, রমাদানে বান্দা ক্ষুৎপিপাসা সহ্য করার মাধ্যমে দুঃখী-অভাবী মানুষের দুঃখ বুঝতে সক্ষম হয়। দান-সাদকা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা, ক্ষমা, পরোপকারিতা, সহানুভ‚তি, সমবেদনা প্রভৃতি সদাচরণ জন্মায়। আল্লাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদা নির্ধারণের একমাত্র উপায় তাকওয়া। এটিই মানুষের মনে সৎ ও মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। সুতরাং, যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে পারলেই রোজা পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা নিজেদের একজন সৎ ও খোদাভীরু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহপাক সবাইকে কবুল করুন। আমীন!

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম গতকাল জুমার খুৎবাপূর্বে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি দিয়ে ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন। নামাজের পর ইসলামে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো যাকাত। যাকাতকে অস্বীকারকারী কাফের। যাকাতের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা, পরিছন্নতা, আধিক্য। তাই যাকাত দিলে মাল পরিশুদ্ধ হয় এবং বৃদ্ধি পায়। খতিব বলেন, যাকাত প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, নামাজ কায়েম করো যাকাত আদায় করো। সূরা বাকারা আয়াত নং ৪৩। তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে, এরা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, সৎকাজের নির্দেশ দিবে এবং অসৎ কাজে নিষেধ করবে। আর সকল কাজের পরিণাম আল্লাহ তায়ালার ইখতিয়ারে। (সূরা হজ্জ আয়াত নং ৪০, ৪১)। খতিব বলেন, যাকাতভিত্তিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অধিকার বঞ্চিতদের দিতে পারে মুক্তির গ্যারান্টি। আল্লাহ আমাদেরকে যথাযথভাবে যাকাত আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমীন!

মাগুরা নিজনান্দুয়ালী বায়তুন-নূর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা ওসমান গণী-সাঈফী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, যাকাতের খাত সম্পর্কে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যাকাত তো কেবল ফকির মিসকিন আমিলীন-যাকাত সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গের জন্য ও যাদের চিত্তাকর্ষণ প্রয়োজন তাদের জন্য এবং তা দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য। আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের এবং মুসাফিরদের জন্য। এ হলো আল্লাহর বিধান। আল্লাহ সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা ৬০)। আল্লাহ কোরআনে যাকাতের আটটি খাত বর্ণনা করেছেন। এর যে কোনো একটি খাতে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে উত্তম হলো ইয়াতিমখানা লিল্লাহ বোডিং। এরপর নিজের গরিব আত্মীয় স্বজনদের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

ঢাকা উত্তরার ৩নং সেক্টর মসজিদ আল মাগফিরার খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার খুৎবায় বলেন, যাকাত ঈমান ও নামাজের পর ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ এবং ফরজ বিধান। রমজান মাসে যাকাত আদায় করা উত্তম। এতিম, গরিব, অভাবী ও ঋণগ্রস্তকে যাকাত দেয়ার কারণে মাল পবিত্র হয়। নবী করীম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত প্রদান করে তার সম্পদের অমঙ্গল ও অনিষ্ট দূর হয়ে যায়। (মাযমাউয যাওয়ায়িদ)।
নবী (সা.) আরো বলেছেন, প্রথম যে তিন ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে তাদের একজন হলো ঐ সম্পদশালী ব্যক্তি যে, তার সম্পদ হতে আল্লাহর অধিকার (যাকাত) প্রদান করে না। (ইবনু হিব্বান)। খতিব বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ অনুগ্রহ করে যে সম্পদ দান করেছেন, সেই সম্পদ নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন কখনো মনে না করে যে, তাদের এই সম্পদ তাদের জন্য উপকারী বরং ঐ সম্পদ তাদের জন্য ক্ষতিকর। কৃপণতার দ্বারা অর্জিত সম্পদ হাশরের দিন তাদের গলার বেড়ী হবে। (সূরা আল ইমরান-১৮০)। সঠিকভাবে যাকাত আদায় করার জন্য বিজ্ঞ মুফতিদের পরামর্শ নিতে হবে। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের সহী বুঝ দান করুন। আমীন!

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে পবিত্র মাহে রমজানের দ্বিতীয় জুমায় মসজিদে মসজিদে ব্যাপক মুসল্লির সমাগম হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজের আগে জীবাণুমুক্ত করা হয় মসজিদ। মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে আদায় করা হয় জুমার জামাত। নামাজ শেষে করোনা থেকে মুক্তি পেতে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

আজানের আগেই মুসল্লিরা মসজিদে আসতে শুরু করেন। জামাতে মুসল্লির কাতার মসজিদের ছাদ, বারান্দায় এবং পাশের রাস্তা ও খোলা মাঠ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বয়স্ক, অসুস্থ এবং শিশুরা বাসা-বাড়িতে নামাজ আদায় করেন। সরকারি ঘোষণা মেনে বাসায় সুন্নাত নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। জুমার খুতবায় ইমাম ও খতিবগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।

নগরীর ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, জমিয়াতুল ফালাহ, কাজির দেউড়ি জামে মসজিদ, হযরত মিসকিন শাহ জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, হযরত আমানত শাহ দরগা মসজিদ, আগ্রাবাদ জাম্বুরি ময়দান জামে মসজিদ, হযরত আলী শাহ মসজিদসহ নগরীর সব মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন