মধ্যরাতে হেফাজতে ইসলামে ভাঙ্গাগড়া ওলট-পালট হয়েছে। কমিটি বিলুপ্তির সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সেহেরির সময় গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। হেফাজতে ইসলামের সদ্য সাবেক আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তার আগে রোববার রাত নয়টার পর থেকে হাটহাজারীসহ চট্টগ্রামে একপ্রকার চাউড় হয়ে যায় হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী গ্রেফতার হচ্ছেন। এরমধ্যে রাত ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ কমিটি বাতিলের ঘোষণা দেন বাবুনগরী।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতার পরামর্শে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসাবে পরিচিত চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় রাতভর চলে ভাঙ্গাগড়া, নানা নাটকীয়তা। মাদরাসার ভেতরে বাইরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দেখা যায় সেখানে। এতে মাদরাসার ছাত্র শিক্ষকসহ স্থানীয়দের মাঝে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। জুনাইদ বাবুনগরীসহ নেতারা গ্রেফতার হচ্ছেন এমন আশঙ্কা জানান অনেকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন জুনাইদ বাবুনগরীকে গ্রেফতার প্রস্তুতি ছিলো। তবে কমিটি বিলুপ্ত করায় গ্রেফতার অভিযান শেষ পর্যন্ত হয়নি। তবে মাদরাসা ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারি অব্যাহত আছে।
এদিকে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রাত আড়াইটার দিকে তিন সদস্যের এই আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় জুনাইদ বাবুনগরীকে। অন্যরা হলেন আল্লামা মহিববুল্লাহ বাবুনগরী, নুরুল ইসলাম জিহাদী। এরমধ্যে মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। তিনি আগের কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন। নুরুল ইসলাম জিহাদী আগের কমিটির মহাসচিব। এরপর ভোর চারটার দিকে জানানো হয়, সালাউদ্দিন নানুপুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে আহবায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে। শিগগির আহবায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে আরও কয়েকজনের নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন হেফাজত নেতারা। আহবায়ক কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে সারাদেশে নতুন কমিটি গঠন করবে।
অপরদিকে হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করায় খুশি হেফাজতের ভেতরে বাইরে থাকা সরকার সমর্থক হিসাবে পরিচিতরা। বিশেষ করে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি থেকে বাদ পড়া নেতারা এই ঘটনায় এখন দারুণ চাঙ্গা। তারা আসন্ন নতুন পুর্ণাঙ্গ কমিটিতে ভাল পদ পেতে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এখনি হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যদের চাপ দিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। নতুন কমিটিতে সরকার সমর্থক হিসাবে পরিচিত মরহুম আল্লামা শফির পুত্র ও হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানি, সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মইনুদ্দীন রুহিসহ অনেকে ভাল পদে আসতে পারেন।
কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তি ঘোষণার পর পর আল্লামা শফির অনুসারী হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঈনউদ্দীন রুহি ফেসবুক লাইভে এসে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান। তিনি বলেন সদ্যবিলুপ্ত হেফাজতের সাবেক আমির বাবুনগরীর যে কমিটি তা ছিল অবৈধ। এ কমিটি বিলুপ্ত করায় তিনি বাবুনগরীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা অতি শিগগিরই হেফাজতের কমিটি করবো। প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আল্লামা শাহ আহমদ শফির আদর্শ ও সংগঠনের গঠনতন্ত্র সংবিধান অনুসারে আমরা কমিটি ঘোষণা করবো।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ সহিংসতার পর নতুন করে আলোচনায় আসে হেফাজত। ওই বিক্ষোভে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে হেফাজতের ১৭ জনের বেশি নেতাকর্মী নিহত হন। এই ঘটনায় হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯৭টি মামলা হয়। এসব মামলায় ৬৯ হাজারের মতো আসামি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের নারায়গঞ্জ রির্সোট কান্ডের অস্বস্তিকর বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর হেফাজতের পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে। গ্রেফতার হতে থাকেন কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা গ্রেফতার হচ্ছেন। এরমধ্যে এ পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অরাজনৈতিক এই সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্ত করে আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা করা হলো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন