শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিবন্ধ

গ্যাসের অপচয় বন্ধ করতে হবে

প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ডক্টর শেখ সালাহ্উদ্দিন আহ্মেদ
বাংলাদেশ বিশ্বের সেসব দেশের একটি যারা দ্রুত উন্নয়নের সাফল্য দেখাচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে ইউরোপের অনেক উন্নত দেশও বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়বে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি আশাজাগানিয়া হলেও হতাশার দিকগুলোও কম নয়।
আজকের যুগে অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। শিল্পায়নের জন্য চাই পর্যাপ্ত ইন্ধন শক্তি। এদিক থেকে বাংলাদেশ খুবই পিছিয়ে। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন ইন্ধন শক্তির মধ্যে রয়েছে গ্যাস ও কয়লা। দেশের স্থলভাগের গ্যাসের মজুদ এখন ফুরিয়ে যাওয়ার পথে। নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কারের সম্ভাবনাও খুব একটা বেশি নয়। ভরসা একমাত্র সাগরের গ্যাস। এ ভরসা আদৌ পূরণ হবে কি না গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের ওপর তা নির্ভরশীল।
বাংলাদেশে কয়লার মজুদ মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও ঘনবসতির এই দেশে কয়লা উত্তোলন কতটা লাভজনক তা সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। কয়লা উত্তোলনের প্রযুক্তি নিজেদের আয়ত্তের মধ্যে না থাকায় বিদেশি কোম্পানির পকেটে মুনাফার সিংহভাগ যাওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ এ মজুদ সম্পদের ব্যবহারে আপাতত আগ্রহী নয়। অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিশেষত শিল্পায়নের জন্য ইন্ধন শক্তির সহজলভ্যতা একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত, সেহেতু সাগরের গ্যাসের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত স্থলভাগের মজুদ গ্যাস সতর্কভাবে ব্যবহার জরুরি হয়ে উঠেছে।
এ উদ্দেশ্যে আবাসিক খাতে নতুনভাবে গ্যাস সংযোগ না দেওয়া, সিএনজি স্টেশনগুলো এবং সার উৎপাদনে গ্যাস ব্যবহার বন্ধ রাখাসহ প্রতিকারমূলক বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। ইন্ধন শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং উৎপাদন ব্যাপকহারের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য ভুটান, নেপাল ও ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় উপনীত হয়েছে। তার পরও নিজস্ব ইন্ধন শক্তির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এবং সে বিষয়টি বিবেচনা করে গ্যাসের অপচয় বন্ধেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। পাশাপাশি সাগরের গ্যাস অনুসন্ধানে যতœবান হতে হবে।
পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড় বিতরণ কোম্পানি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি তার বিতরণ এলাকার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর পুরোনো প্রযুক্তির বয়লার নতুন প্রযুক্তিতে রূপান্তর করে দৈনিক ১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় করতে পারে। এই রূপান্তরে ব্যয়ও বেশি নয়। এছাড়া তিতাসের আওতাধীন এলাকার আবাসিক গ্রাহকদের চুলাগুলো উন্নত প্রযুক্তির করা হলে এবং রাস্তা থেকে রান্নাঘরে গ্যাস নেওয়ার লাইনগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে প্রতিদিন গ্যাস সাশ্রয় হবে ১০ কোটি ঘনফুট। এই কাজেও ব্যয় সামান্য।
সূত্রমতে, বর্তমানে প্রতিদিন উৎপাদিত মোট গ্যাসের ১২ শতাংশ (২৭ কোটি ঘনফুট) ব্যবহৃত হচ্ছে আবাসিক খাতে। আর শুধু তিতাসের এলাকায় প্রতিদিন ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের অপচয় হচ্ছে। সুতরাং শুধু তিতাসের এলাকার অপচয় বন্ধ করা গেলে সারাদেশে বর্তমানে যতজন আবাসিক গ্রাহক আছেন, আরও প্রায় ততজনকে সংযোগ দেওয়া সম্ভব। তিতাস অবশ্য শিল্পে উন্নত প্রযুক্তির বয়লার ও চুলা ব্যবহার উৎসাহিত করে গ্যাস সাশ্রয়ের উদ্যোগ কয়েক বছর আগেই নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। তিতাসের এলাকার বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানে গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও গ্যাস অপচয়ের চিত্র একই রকম।
দেশে এখন অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গ্যাসনির্ভর। গ্যাসের সুনিশ্চিত সরবরাহের অভাবে দেশে চাহিদামতো বিনিয়োগ হচ্ছে না। শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে যারা গ্যাস সংযোগের অপেক্ষায় রয়েছে, তাদের গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। অপচয় কমিয়ে গ্যাসের সঙ্কট অনেকখানি মোকাবিলা করা সম্ভব। মানুষ গৃহস্থালির অতিপ্রয়োজনীয় কাজেও ঠিকভাবে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে না; অপচয়ের পরিমাণ এত বিশাল, যা কল্পনাতীত। এ অপচয় রোধের দায়িত্ব কার? অসংখ্য সমস্যা সমাধানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। আর সে প্রবৃদ্ধির অন্যতম শর্ত বিনিয়োগ ও উৎপাদন। গ্যাস এখন উৎপাদনের ক্ষেত্রে মৌলিক জ্বালানি হিসেবে ব্যবহƒত হচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট মহলকে যতটা সম্ভব দ্রুত গ্যাস সাশ্রয়ী প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে নজর দিতে হবে এবং জ্বালানি সেক্টরে কর্মরত সর্বস্তরের কর্মচারীকে নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কঠোর নির্দেশের আওতায় আনতে হবে। গ্যাস ও কয়লা অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সামর্থ্য গড়ে তুলতে হবে। ইন্ধন শক্তির ক্ষেত্রে নিরাপদ অবস্থান সৃষ্টির জন্য বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।
লেখক : এডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সভাপতি, সাউথ এশিয়ান ল’ ইয়ার্স ফোরাম।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন