আলাউদ্দিন ইমামী
॥ শেষ কিস্তি ॥
প্রিয় নবীর (সা.) এ কর্মসূচি আমাদের দেশের নেতা কর্মকর্তারা গ্রহণ করলে এখনো দেশের মানুষ সুফল ভোগ করতে পারবে। এটাই সুন্নতে রাসূলের ফজিলত। তবে এটা খুব কঠিন কাজ। এ জন্যই রাসূল (সা.) বলেছেন, যে আমার সুন্নতকে ভালবাসবে সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।
২নং কর্মসূচি : আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ
আল্লাহ বিশ্ববাসীদেরকে বলেছেন, তোমরা আল্লাহ এবং রাসূলের কথা মত চল। আল্লাহর গোলামী গ্রহণ কর এবং সীমা লঙ্ঘনকারীদের বর্জন কর। আদেশ পাওয়ার দেরী, সাথে সাথেই সে মতে আমল শুরু কর। আরবের বেদুঈন ও বর্বর মানুষগুলোকে তাদের পরিবর্তিত ঈমান ও চিন্তা এত আস্থাশীল করে দিয়েছিল যে, আল্লাহর রাসূলের প্রতিটি আদেশ-নিষেধ তারা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। প্রকৃত অর্থেই তারা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী, প্রিয় রাসূল (সা.)-এর পরিপূর্ণ আনুগত হয়ে গিয়েছিলেন। ঠিক যেন যুদ্ধ ময়দানে আনুগত বাহিনী। ইসলামী পরিভাষায় এরা ছিলেন পরিপূর্ণ মুসলমান। কারণ আল্লাহ বলেছেন, তোমরা পরিপূর্ণ মুসলমান হও, শয়তানের কথামত চলিও না। তারা তাই করেছিল। যদি অন্যদের কথামত চল তোমরা শিরিককারী হয়ে যাবে। প্রিয় নবীর (সা.) সাহাবী এবং আরববাসীকে পরিবর্তিত জীবন আল্লাহর এত পছন্দ হয়েছিল যে, আল্লাহ কোরআনের আয়াত নাজিল করে তাদের গুণ ও বৈশিষ্ট্যের স্বাতন্ত্র্য বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহ এদের উপর খুশী, এরা আল্লাহর উপর খুশী, ছুবহানাল্লাহ।
আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণ আর রাসূলের আনুগত্যের ফলে আরববাসী মানুষের পুরা জীবন ধারাই বদলে গিয়েছিল। অশান্তি-শান্তির, ভয়ভীতি, প্রশান্তি আর নিরাপত্তায় প্রবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। বর্বর সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ মানুষগুলো এত ন্যায়পরায়ণ, শান্তি প্রিয়, মানবতাবাদী ও খোদাভীরু হয়ে যায় যে, কোন অন্যায়কারীকে বরদাশত করা দূরে থাক নিজেরাও যদি ভুলে অথবা শয়তানি কুমন্ত্রণায় কোন অপকর্ম করে বসতে স্বয়ংপ্রণোদিত হয়ে নিজেরা এসে ইসলামী আদালতে বিচার প্রার্থী হয়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে যেতেন।
এভাবেই প্রিয় রাসূল (সা.) আরবের জাহেলী যুগের বর্বর, পাষাণ, দুর্নীতিগ্রস্ত, ভোগবাদী, স্বার্থপর এবং সন্ত্রাসী ও জঙ্গি মানুষগুলোকে সর্ব যুগের সেরা মানুষে পরিণত করেছিলেন। আমাদের সরকার, নেতা এবং কর্মকর্তাগণ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে চাইলে, তাদের প্রিয় নবীর (সা.) এই কর্মসূচিকেই মুক্তির মূল মন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
৩ নং কর্মসূচি-দায়িত্ব পালন ও সমাজ গঠন
আল্লাহ বলেন, মুমীন নারী ও পুরুষ পরস্পরের সহযোগী, তারা সৎ কাজের আদেশ দিবে অসৎ কাজে বাধা দিবে। আল কোরআন। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, তোমাদের যেই কোন অন্যায় দেখবে, তা হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে, অসম্ভব হলে মুখে প্রতিবাদ করবে। তোমরা যদি অন্যায়কারীকে বাধা না দাও, আল্লাহ সবার জন্য গজব নাজিল করবেন। তোমাদের ভাল লোকেরা দোয়া করবে, যে দোয়া কবুল হবে না। তোমাদের মাথার উপর জালিমদের বসিয়ে দিবেন তারা বড়দেরকে সম্মান করবে না। ছোটদেরকে ¯েœহ করবে না। মুসলমানদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে সারা দুনিয়ার বিশেষ করে মুসলমান দেশগুলোতে আজ এই অবস্থাই চলছে।
আরবের লোকেরা কোরআনের উক্ত আয়াত আর প্রিয় নবীর (সা.) হাদীস অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে প্রিয় নবীর (সা.) নেতৃত্বে পুরো সমাজকে সকল ধরনের দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মানবতা বিরোধী কাজ থেকে মুক্ত করে এক আদর্শ জাতি গঠন করেছিলেন। কেয়ামত পর্যন্ত যার মত আর কোন জাতি দুনিয়ায় আসবে না। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, আমার যুগের লোকেরাই শ্রেষ্ঠ জাতি।
আরবের বর্বর মানুষগুলো প্রিয় নবীর (সা.) নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় পরিশুদ্ধ চিন্তা ও বিশ্বাসের উপর ভর করে আল্লাহ রাসূলের অনুগত হয়ে যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে একটি ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গঠন করে, পুরা আরব জাতিকে সুন্দর, উন্নত, শান্তিপূর্ণ নিরাপত্তা ও মানবতাবাদী একটি সমাজ উপহার দিয়েছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন