নেপালের মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পের শেরপা এবং আরোহীরা একত্রে অন্য তাঁবুতে অবাধে চলাফেরা করতেন, সমাবেশ করতেন ও আনন্দ করতেন। পর্বতারোহীদের এভারেস্টের চুড়ায় পৌঁছে দেয়া সেই শেরপাদের এখন নতুন কাজ সামাজিক-দূরত্বের নিয়মাবলীর প্রয়োগ করা। তাদের একজন ফুনুরু শেরপা বলেছেন, ‘এভারেস্টে উঠা সবসময় বাঁচা ও মরার বিষয়। তবে এই বছর কোভিডের কারণে ঝুঁকিটি দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’
ইতিমধ্যে, সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত কয়েক ডজন মানুষকে হেলিকপ্টার দিয়ে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এভাবেই করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার প্রাদুর্ভাব ভরত সীমান্তে থাকা পুরো নেপাল জুড়ে পরিলক্ষিত হচ্ছে। হিমালয়ের এ দেশটিতে সংক্রমণ সংখ্যা এপ্রিল ১১ থেকে মে ১১ পর্যন্ত ত্রিশগুণ বেড়ে দৈনিক ৯ হাজার ৩ শ’ তে পৌঁছেছে। ভারতের ভয়াবহ করোনা সংকট যে আরও বড় বৈশ্বিক সঙ্কটে রূপান্তরিত হতে পারে, তারই এক বাস্তব উদাহরণ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতে অক্সিজেন, ভ্যাকসিন এবং চিকিৎসা সরবরাহ করলেও তারা ভারত এবং সংলগ্ন দেশগুলির জন্য তাদের সীমানা বন্ধ করে দিচ্ছে। তবে এরই মধ্যে হয়ত অনেক দেরি হয়ে গেছে। ভারতে প্রথম সনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাসের বি.১.৬১৭ প্রজাতিটি বর্তমানে বিশে^র ৪৪টি দেশে ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এড়াতে সক্ষম আরও সংক্রামক এবং আরও শক্তিশালী ভাইরাস। গত ১০ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে ‘বৈশ্বিক উদ্বেগ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে। জন্স হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর ক্লিনিকাল গ্লোবাল হেলথ এজুকেশন এর উপ-পরিচালক অমিতা গুপ্ত বলেছেন, ‘ভারতে মাত্র ০.১ শতাংশ নমুনাগুলি জিনগতভাবে অনুক্রমকৃত হচ্ছে। সেখানে অন্যান্য প্রজাতিগুলির উদ্ভব ঘটে থাকতে পারে।
যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের কাঁচামাল পাঠাচ্ছেন এবং অ্যাস্ট্রা-জেনিকার ভ্যাকসিন রফতানির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ভারতের ধরতে দীর্ঘ সময় লাগবে। ১২ মে পর্যন্ত দেশটির মাত্র ২.৮ শতাংশ জনগণ পুরোপুরি ভ্যাকসিন নিয়েছে।
এখন, ভারতের ভয়াবহ করোনা সংক্রমণ উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে যে, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি এখনও ঘটতে বাকি আছে। বিশেষত আফ্রিকান দেশগুলির ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে অনেকগুলি এখনও বড় আকারের করোনা প্রকোপ অনুভব করতে পারেনি। ইতিমধ্যে বি.১.৬১৭ ভাইরাস অ্যাঙ্গোলা, রুয়ান্ডা এবং মরক্কোতে সনাক্ত হয়েছে।
এই জাতীয় দেশগুলিতে করোনা ঠেকানোর ভ্যাকসিনগুলি ভারতের কারখানাগুলি থেকে আসার কথা ছিল। ভারত এখন তার উৎপাদিত বেশিরভাগ ভ্যাকসিন অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। করোনার মারাত্মক নতুন প্রকোপগুলি সংশ্লিষ্ট দেশগুলির মহামারী পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে। সূত্র: টাইম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন