চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের শরীরে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া যাদের করোনা নেগেটিভ তাদের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের অ্যান্টিবডির উপস্থিতি সংক্রান্ত ক্রস বিভাগীয় গবেষণা ফলাফলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। শনিবার গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রধান গবেষক হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মোঃ আব্দুর রব ইনকিলাবকে বলেন, সবচেয়ে চমকপ্রদ তথ্য হল, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষভাবে করোনা পজিটিভ রোগীদের প্রায় ৯০ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়। আরটিপিসিআর নেগেটিভ এমন ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নয় মাস পর্যন্ত থাকতে দেখা গেছে।
ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর ও বিএমএ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুজিবুল হক খান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও উপসর্গযুক্ত রোগীদের শরীরে কোভিড-১৯ বিরোধী অ্যান্টিবডির উপস্থিতি ও এর স্থায়িত্ব অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্যে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। একই সাথে রোগীদের আর্থসামাজিক অবস্থা, কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সময় তাদের মধ্যে কি কি উপসর্গ বিদ্যমান ছিল এবং কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরও কোন ধরনের দীর্ঘ মেয়াদি জটিলতা রয়ে গেছে কিনা এসব তথ্য আহরণ করা ছিল এ গবেষণার অন্যতম উদ্দেশ্য।
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হয়ে গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাত মাস যাবৎ চলমান এ গবেষণায় দৈবচয়নের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের এক হাজার ৫৩০ জন (আরটিপিসিআর পজিটিভ-৯৪১ ; আরটিপিসিআর নেগেটিভ-৫৮৯) ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এস আলম গ্রুপ ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশ পুরুষ (৭৫ শতাংশ) এবং চাকুরিজীবি (৭০ শতাংশ)। কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের প্রধান লক্ষণগুলো ছিলো জ্বর (৯২ শতাংশ), কাশি (৬৩ শতাংশ), ঘ্রাণশক্তি লোপ (৫২ শতাংশ)। এছাড়াও গলাব্যথা, মাথাব্যথা, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা গেছে অনেকের।
আক্রান্তদের অনেকেই আগে থেকে ডায়াবেটিস (১৫ শতাংশ), উচ্চ রক্তচাপ (২৩ শতাংশ), শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা (৯ শতাংশ), হৃদরোগ ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরে তাদের প্রায় ৫৭ শতাংশের কোন না কোন উপসর্গ দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যমান ছিল। তার মধ্যে শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথা, দুশ্চিন্তা, অবসাদ, কাশি, চুল পড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ উল্লেখযোগ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান গবেষক ডাঃ মোঃ আব্দুর রব বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছি। কোভিড-১৯কে আরো বিষদভাবে জানার লক্ষ্যে রোগীদের লক্ষণ, সেরে ওঠার পর দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা এবং অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নিয়ে এই গবেষণা অত্যন্ত সময়োপযোগী।
গবেষণা কর্মটির সমন্বয়ক ডাঃ মোহাম্মদ আসিফ খান বলেন, আমাদের জানামতে জেলা পর্যায়ে কোন হাসপাতালে নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালিত গবেষণার এটিই প্রথম উদাহরণ। সংগৃহীত তথ্যের আলোকে ডাঃ এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী বলেন, এই গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল সরকারের চলমান কোভিড-১৯ টীকা কর্মসূচীকে আরো গ্রহণযোগ্য ও গতিশীল করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন