ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় একটি ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের সহায়তায় বিক্রি করে দেয়া এক নবজাতক শিশুকে ৮ দিন পর উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিল পুলিশ। এ ঘটনায় ক্লিনিক মালিক ও সেই চিকিৎসকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সোমবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদুল হক। এর আগে রবিবার আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে রাতভর পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে তাদের আটক গ্রেপ্তার করে।
এঘটনায় নবজাতকের বাবা অবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে সোমবার আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযানে অংশ নেয়া আশুলিয়া থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পবিত্র কুমার মালাকার বলেন, আসামীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নবজাতককে উদ্ধার করতে আমরা রাতেই সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করি। সকালে সেই নবজাতকসহ আশুলিয়ায় ফিরে আসি। বাচ্চা সুস্থ আছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- নরসিংহপুর এলাকার নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও চিকিৎসক মোস্তফা কামাল (৩৯), এ চক্রের সদস্য আবু হানিফ (৪০), হানিফ বিন কুতুব (৪২), মোহাম্মদ সুমন মিয়া (২৯), এছাড়া নবজাতক ক্রয়কারী ফয়েজুল।
ভুক্তভোগী দম্পতি হলো- রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার সূর্যপাড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে মো: অবুল কালাম আজাদ (২৮) ও তার স্ত্রী শিখা বেগম (২৬)।
নবজাতকের পিতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ১৭ মে আমার স্ত্রীর পেটে অনেক ব্যথা শুরু হলে ওই ক্লিনিকে (ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে) গেলে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দেন। তাদের কথামত আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, নবজাতক উল্টো হয়ে আছে মা ও শিশুর জীবন সঙ্কটাপন্ন, দ্রুত প্রসব করাতে হবে। ভুক্তভোগী ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কথায় রাজি হলে তাদের এক নারীকর্মী এসে পার্শবর্তী ঘোষবাগ এলাকার একটি বাড়িতে আমার স্ত্রীকে নিয়ে যায়। পরে সেই বাড়িতে তার ডেলিভারি হয় এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শিখা। এরপরে ডাক্তার এসে বলেন, আমাদের মেয়ে খুব বেশি হলে ৩ দিন বাঁচতে পারে। ১৫ দিন বাঁচাতেও অনেক টাকার দরকার। এসব ভুল বুঝিয়ে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে যায়। পরে সন্তান ফেরত চাইলে তারা ৫৫ হাজার টাকা দাবি করেন।
নবজাতকের মা শিখা খাতুন বলেন, আমি গার্মেন্টসে হেলপার হিসাবে কাজ করি। আমি তো অতো কিছু বুঝি না। উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মিলে আমার মেয়েকে সিরাজগঞ্জে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। পরে থানায় খবর দিলে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে আনে পুলিশ।
এসআই এমদাদুল হক জানান, সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের মানবপাচার মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন