বর্তমান সময়ে ভ্রমণপ্রিয় মানুষের বিশেষ করে তরুণদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুক। হরেক নামে শত-শত ট্রাভেলার গ্রুপে প্রায় সারাক্ষণই চলে ভ্রমণ বিষয়ক আলোচনা, থাকে নানা দিক-নির্দেশনা। ইদানিং এসব গ্রুপভিত্তিক নানা ইভেন্ট খুলে পরিচিত-অপরিচিত মিলে ভ্রমণে যেতে দেখা যায় প্রায়শই। আর এমনই একটি ফেসবুক ট্রাভেলার গ্রæপকেন্দ্রিক অভিনব প্রতারণার ফাঁদের তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
এরপর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ গত মঙ্গলবার রাজধানীর কল্যাণপুর, আশুলিয়া ও চাঁদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতাররা হলেন- ‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক ট্রাভেলার গ্রæপের পরিচালক ও চক্রের মূল হোতা জাকারিয়া, জাহিদ ইবনে জাহান ও সোহরাব হোসেন টিটু। এ সময় তাদের ব্যবহৃত নামে-বেনামে ১৮টি ফেসবুক আইডি উদ্ধার করা হয়। ‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ নামে গ্রæপ খুলে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পাতে চক্রটি। অ্যামাজন, ইবের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসার প্রস্তাব দিয়ে নানা পন্থায় হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, হরেক নামে শত-শত ট্রাভেলার গ্রæপে প্রায় সারাক্ষণই চলে ভ্রমণ বিষয়ক আলোচনা, থাকে নানান দিক-নির্দেশনা। ইদানিং এসব গ্রæপভিত্তিক নানা ইভেন্ট খুলে পরিচিত-অপরিচিত মিলে ভ্রমণে যেতে দেখা যায় প্রায়শই। এই সুযোগ নিয়েই ‘লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক ট্রাভেলার গ্রæপ খুলে ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পাতে চক্রটি। বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে নানা পন্থায় হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা।
সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে ভুক্তভোগী কাজল আন্তর্জাতিকভাবে বিখ্যাত বিপনন প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, ইবের সঙ্গে যৌথভাবে ব্যবসার প্রস্তাব পান। তারপরই ডোমেইন কেনানো, ওয়েবসাইট বানানোর নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয় তার।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের ইনচার্জ এডিসি আশরাফ উল্লাহ বলেন, যত বেশি ডোমেইন তত বেশি মুনাফার প্রলোভন, একে একে ৪২টি ডোমেইন বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জাকারিয়া। ওয়েবসাইট হ্যাকের নামে, তা উদ্ধারের কথা বলে, কখনো আবার সিকিউরিটি ইন্সটলেশনের কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জাকারিয়া নিজেই উন্নত ওয়েব ডিজাইনার, নিজেই হ্যাকার, আবার প্রতারণার প্রয়োজনে নিজেই আমেরিকান প্রবাসী কিংবা আইটি এক্সপার্ট সেজে কথা বলেন।
বিনিয়োগের মুনাফা দেওয়ার সময় এলেই জাকারিয়াসহ তার সহযোগীরা শুরু করতেন তালবাহানা। এমনকি ভুক্তভোগীর মেয়ের ছবি যুক্ত করে ওয়েবসাইটে পর্নো ছেড়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। বিভিন্ন সময়ে নানা পন্থায় ভুক্তভোগী যুবকের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।
প্রায় একইভাবে জাকারিয়ার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে টাকা খোয়ান জোবায়ের হোসেন নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, লঞ্চ ভ্যাসেল ফাইন্ডার্স বাংলাদেশ গ্রæপের মাধ্যমে ভ্রমণে গিয়ে জাকারিয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনিই ওই ফেসবুক গ্রæপের মাধ্যমে ট্যুরগুলো পরিচালনা করতেন। পরিচয় থেকে ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একপর্যায়ে অ্যামাজনের সঙ্গে অ্যাফিলিয়েট ব্যবসার প্রস্তাব দেন তিনি। এখানে বিনিয়োগ করলে ভালো লাভ হবে এবং এজন্য একটা ওয়েবসাইট বানাতে হবে বলে জানান।
ওই যুবক বলেন, প্রথমে এক লাখ এবং পরে আরও দুই লাখ টাকা দেই। টিউশানির জমানো টাকা এবং বাবার কাছ থেকে কিছু নিয়ে তাকে দেই। টাকা দেয়ার পর লভ্যাংশ আর দেয় না। নানাভাবে ঘোরাতে থাকে। যখন প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারি, ততক্ষণে টাকা হাত ছাড়া। যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন।
রাসেল নামে আরেক ভুক্তভোগী জানান, গ্রæপটি সাধারণত নৌযান কেন্দ্রিক ভ্রমণ পরিচালনা করে। এই গ্রæপের মাধ্যমে ভ্রমণে যাওয়ার সুবাদে অ্যাডমিনের সঙ্গে পরিচয়। একপর্যায়ে অ্যাডমিন তার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে মায়ের চিকিৎসার কথা বলে কিছু টাকা ধার চান। আমি তাকে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে ১৬ হাজার টাকা পাঠাই। পরে টাকা চাইতে গেলেই আমার সঙ্গে বাজে আচরণসহ নানা ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে। একইভাবে প্রতারিত হয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা খুইয়েছেন রমজান আলী। তিনি বলেন, তাদের পণ্য বিক্রিতে নাকি অনেক লাভ। এক রকম শেয়ারিং ব্যবসার জন্য তাকে ৩ লাখ টাকা দেই। এরপর একদিন আবার জরুরি দরকার বলে ৩০ হাজার টাকা ধার নেয়। এরপর যখনই যোগাযোগ করা তখনই খারাপ আচরণ, হুমকি-ধামকি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা উত্তর ও সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক নামী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসার প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। শুধুমাত্র একজনের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছি। তাদেরকে গ্রেফতারের খবরে অনেকেই ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসায়ে ওয়েবসাইট বানানোর নামে প্রথমে টাকা হাতিয়ে নিতো চক্রটি। তারপর নির্দিষ্ট সময় পর পর বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মুনাফার কিছু টাকাও ফেরত দেয়া হতো। এভাবে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন