করোনাকালে তামাক কোম্পানিগুলো আইন অমান্য করে আগ্রাসী প্রচারণা চালাচ্ছে। ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আইন ভঙ্গকারী তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। গতকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সমন্বিত উদ্যোগে ‘করোনাকালীন সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রন আইন লংঘনের চিত্র এবং বাস্তবায়নের গুরুত্ব’ শীর্ষক অনলাইন সভায় আলোচকরাা এ দাবী জানান।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন এর নিবার্হী প্রধান মো: আরিফুর রহমান, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন এর সেক্রেটারী জেনারেল হেলাল আহমেদ, পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন এর সভাপতি আবু নাসের খান, বাংলাদেশ চলচিত্র পরিচলক সমিতি এর সহ-সভাপতি ছটকু আহমেদ, দ্যা ইউনিয়নের কারিগরি উপদেষ্টা সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আবু রায়হান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দা অনন্যা রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন কোভিড মহামারীর এই সময়ে সারা বিশ্ব যেখানে স্থবির, সেখানে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তামাক কোম্পানির ব্যবসা জমজমাট। ওদের ব্যবসায় কোনো ঘাটতি হয়নি। তামাক কোম্পানিগুলো তামাক পণ্যকে নিত্য পণ্য করে চালিয়ে নেওয়ার জন্য একটা প্রঞ্জাপন জারী করেছিল। আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছি। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, তামাক পন্য জাতীয় আন্তজাতিকভাবে খ্যাতি সম্পন্ন একটি পণ্য, এটি বর্জন করা হলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের চিঠির উত্তর আমাদের কাছে প্রত্যাশিত নয়।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক। শীঘ্রই দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধ করা হবে। সংশোধিত আইনে তামাক কোম্পানিগুলোকে আইন ভঙ্গে কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সকলকে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে হবে।
আবু নাসের খান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ভঙ্গ করে প্রচারণার জন্য কোম্পানিকে উচ্চহারে জরিমানা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগপযোগি করতে হবে। ছটকু আহমেদ বলেন, ধূমপান শুধু করোনা সময়ের জন্য ক্ষতিকর না, এটি সবসময়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। অভিনেতা- অভিনেত্রীদের মুখ দিয়ে ধূমপান করার ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হয়, তাহলে অনেক লোকই উৎসাহিত হবে এবং বিষয়টি আরও সক্রিয় হবে। চলচ্চিত্রে সাবটাইটেল দিতে ধূমপানের ক্ষতির বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শনের ক্ষেত্রে অবশ্যই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন মানা প্রয়োজন।
মো: আরিফুর রহমান বলেন, করোনার মহামারির সময়ে মাঠ পর্যায়ে তামাক কোম্পনির প্রচারণা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। তামাক কোম্পানিগুলো আইন ভঙ্গ করে অভিনব কায়দায় নতুন ধূমপায়ী তৈরী করছে। কোম্পানিগুলোর এ প্রচারা বন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে যুগোপোে করা প্রয়োজন। সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোকে আইন ভঙ্গ করে বিজ্ঞাপন প্রচারণা করছে। কিন্তু সেই তুলনায় কোম্পানিগুলো আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। কোম্পানিগুলোকে কঠোর শাস্তির বিধান করা উচিত।
মূল প্রবন্ধে আবু রায়হান বলেন, বাংলাদেশের প্রাপ্ত বয়ষ্ক জনগোষ্ঠীর ৩৫.৩% তামাকসেবী আছেন, যাদের মধ্যে পুরুষ ৪৬% এবং নারী ২৫.২%। তামাকজনিত কারনে আমাদের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০,৫৭০ কোটি টাকা। লক ডাউনের সুযোগ নিয়ে তামাক কোম্পানির প্রচার চালাচ্ছে এবং আইন লঙ্ঘনের কাজ চলছে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের মাধ্যমে তরুণদের কাছ থেকে তামাক কোম্পানিগুলি তথ্য সংগ্রহ করছে। কোভিডের সময়ে মাস্ক, পিপিই প্রদান করে প্রচারণা চালাছে।
উক্ত সভায় প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল এ্যাকশন, পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টসহ সারাদেশ থেকে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ও নাটাবের স্থানীয় প্রতিনিধিবৃন্দ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন