গাজীপুরের টঙ্গীতে দুটি পরিবারের উপর নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িত কিশোর গ্যাং ‘ডি কোম্পানির’ পৃষ্ঠপোষক বাপ্পি ওরফে লন্ডন বাপ্পি ও নীরব ওরফে ডন নীরবসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত অন্যান্যরা হলো-তানভীর হোসেন ওরফে ব্যাটারি তানভীর (২৪), পারভেজ ওরফে ছোট পারভেজ (১৯), তুহিন ওরফে তারকাটা তুহিন (২১), রাজিব আহমেদ নীরব ওরফে টম নীরব (৩০, সাইফুল ইসলাম শাওন (২৩), বিউল হাসান (২০), শাকিল ওরফে বাঘা শাকিল (২৮), ইয়াছিন আরাফাত ওরফে বিস্কুট ইয়াছিন (১৮), মাহফুজুর রহমান ফাহিম (২২) ও ইয়াছিন মিয়া ওরফে প্রিন্স ইয়াছিন (১৯)।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, বর্তমান সময়ে কিশোর গ্যাং তথা গ্যাং কালচার এবং উঠতি বয়সি ছেলেদের মাঝে ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে এক গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের মারামারি করা বহুল আলোচিত ঘটনায় পরিনত হয়েছে। গ্যাং সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেধে ঘুরে বেড়ায়, বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়, পথচারীদের উত্ত্যক্ত করে এবং ছোট খাট বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হয়ে মারামারি-খুনোখুনি করে। এছাড়াও তারা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একই এলাকায় অন্যান্য গ্রুপের সাথে প্রায়সই কোন্দলে লিপ্ত থাকে। এই এড়ানোর বিষয়টিকে তারা তাদের ক্ষমতা হিসেবে ভাবে এবং কোন ঘটনায় কেউ কোন প্রতিবাদ করলেও ক্ষমতা জাহির করতে মারামারি করাসহ অনেক সময় খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না।
তিনি আরো বলেন, গত ১ জুন কিশোর গ্যাং ডি কোম্পানীর কয়েকজন সদস্য গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকাস্থ ভূঁইয়া পাড়া জামে মসজিদের সামনে জনৈক তুহিন আহম্মেদ এবং তুষার আহম্মেদ’কে দেশীয় অস্ত্র দ্বারা আঘাত করতঃ গুরুতর জখম করে। এই সংক্রান্তে ভিকটিম তুহিন আহম্মেদ বাদী হয়ে জিএমপি, টঙ্গী পূর্ব থানায় একটি মামলার দায়ের করেন, যার নম্বর-২। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার কারণে তারা বাদীর বাড়িঘর ও দোকানপাটে ব্যাপক ভাংচুর করে ভীতির সঞ্চার করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জুন রাতে একই গ্রুপের কয়েকজন সদস্য গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকাস্থ একটি দর্জি দোকান ভাংচুর এবং চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করার ফলে জনৈক আব্দুল মালেকের ছেলে আরজু মিয়া (৩৪) ও সুজন মিয়া (২৪) এবং সুজনের স্ত্রী রুপালী (২১) গুরুতর আহত হয়। কিশোর গ্যাংয়ের এই নৃশংস হামলার বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয় এবং সারাদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
এরই প্রেক্ষিতে কিশোর গ্যাং এর বিপদগামী সদস্যদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ সাস্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। একই সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীরা মাদক সেবন, স্কুল-কলেজে বুলিং, র্যাগিং, ইভটিজিং, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ডাকাতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও শেয়ারসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত ছিল মর্মে স্বীকার করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন