১৯৯৯ সালে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যাঁরা তীব্র আতঙ্কের অনুভ‚তির সমস্যা অর্থাৎ প্যানিক ডিসঅর্ডারে ভোগেন তাদের মধ্যে এ সমস্যা আরও জটিল ও তীব্র হয়ে ওঠে যদি তারা ধূমপায়ী হন। ধূমপায়ীরা প্যানিক ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নিয়মিত ধূমপায়ীদের শতকরা প্রায় ৭ ভাগের প্যানিক ডিসঅর্ডার অনিয়ন্ত্রিত থেকে যায়। ফলে ভোগান্তি হয় রোগীর নিত্যসঙ্গী।
প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যে সমস্ত উপসর্গ দেখা যায় সেগুলো হল- চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, শ্বাসকষ্ট, বমি বমি ভাব, অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ, গলা শুকিয়ে আসা, মাথা ভাল ভার ভার লাগা, শরীর কাঁপা ইত্যাদি।
প্যানিক ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তির আকস্মিকভাবে তীব্র আতঙ্কের অনুভ‚তি হয়। আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তার মনে হয় এখনই মারাত্মক ভয়ঙ্কর একটা কিছু ঘটে যাবে। এ ধরনের আতঙ্কের অবস্থা তীব্র যন্ত্রাণাদায়ক যা বেশ কয়েক মিনিট ধরে চলতে থাকে। আতঙ্কের এ পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পর রোগী নার্ভাস হয়ে যায়, মনের মধ্যে নানা ধরনের অসুবিধাজনক আশঙ্কার সৃষ্টি হয়। এ ধরনের আক্রমণে বিপর্যস্থ পরিস্থিতিতে আক্রান্ত ব্যক্তির অনেক সময় মনে হয় তার বুঝি স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক কিছু হয়েছে বা হচ্ছে! কেউ মনে করেন তিনি বুঝি পাগল হয়ে যাবেন। আতঙ্কের আক্রমণের তীব্র উপসর্গগুলোর সঙ্গে টেনশনের অনুভ‚তির মিল রয়েছে। নানা উদ্বেগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ এক ধরনের আতঙ্কের আক্রমণে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন ট্রেনে চড়লে তা নিয়ন্ত্রণ হারাবে এ ভয়ে ভীত হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিটি ট্রেনে উঠতে বাধ্য হলে বার বার লাইনচ্যুত হওয়ার ভয়ে তার এ রকম আক্রমণের শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া গেছে, নিকোটিন নিউরোলজিক্যাল সংক্রান্ত নানা ধরনের মানসিক সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে-
* আলজাইমার্স ডিজিজ * টরেটস সিনড্রোম * পারকিনসনস ডিজিজ। এসব মানসিক সমস্যার জন্য অত্যধিক নিকোটিন দায়ী। * গবেষণায় দেখা গেছে মানব মস্তিস্কের উপর নিকোটিনের প্রভাব মারাত্মক। * এর ফলে নানা ধরনের নিউরোসাইকিয়াট্রিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এজন্য যারা ধূমপান করেন না তাদের মধ্যে পারকিনসনস ডিজিজ, আলজাইমার্স ডিজিজ প্রায় দেখাই যায় না। বাইপোলার ডিসঅর্ডারজনিত সমস্যার জন্য ধূমপান শতকরা ৭০ ভাগ দায়ী।
স্পেনে দেখা গেছে, শতকরা ৫৫ভাগ বাইপোলার সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর ধূমপানের পূর্ব ইতিহাস থাকার জন্য অবস্থা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
মানসিক চাপের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অনেকে ধূমপানের অভ্যাস করেন। তারা এবং নিয়মিত ধূমপায়ী অধিকাংশেরই ধারণা, মানসিক চাপের সময় ধূমপান বিশেষ উপকারী। কিন্তু প্রকৃত সত্য হল ধূমপানের ফলে মানসিক চাপ আরও ঘণীভূত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। ধূমপানে অভ্যস্থ ব্যক্তিদের মানসিক চাপ ধূমপান যারা করেন না তাদের চেয়ে অনেক বেশি। ধূমপানে অভ্যস্থদের মধ্যে দেখা দিতে পারে- * ক্লস্টার ডি সিনড্রোম এবং * ক্লস্টার সি সিনড্রোম। বিষন্নতা একটি জটিল মানসিক রোগ। বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীদের সমীক্ষা নিয়ে দেখা গেছে তাদের মধ্যে শতকরা ৭০ জনই ধূমপায়ী।
বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যে সমস্ত উপসর্গ দেখা যায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- খাওয়া দাওয়ায় অনাগ্রহ, অরুচি, মন মরা ভাব, হতাশা, অসহায় ভাব, নিঃসঙ্গতা, নিদ্রাহীনতা, ওজনহীনতা, সিদ্ধান্ত নিতে না পারা, বিচারবুদ্ধিহীনতা, দুর্বল মানসিকতা, আত্মবিশ্বাস না থাকা, অলস হয়ে যাওয়া, শক্তি হারিয়ে ফেলা, ধীর হয়ে যাওয়া, মরণ চিন্তা বা চেষ্টা করতে থাকা, যৌনক্ষমতা হারিয়ে ফেলা ইত্যাদি। বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগী ধূমপান ত্যাগ করার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তারা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছেন।
যারা ধূমপান করেন তারা নিজেরা যেমন নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনেন সাথে সাথে তাদের সঙ্গে চলা মানুষজন, পরিবারবর্গেরও ক্ষতি করেন। ধূমপান এমনই এক বদ- অভ্যাস যা মানুষকে মারাত্মক পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। একটি সিগারেটের ধোঁয়ায় থাকে প্রায় চার হাজার রাসায়নিক পদার্থ এবং এর মধ্যে চল্লিশটি পদার্থের রয়েছে ক্যান্সার সৃষ্টি করার জোরদার শক্তি। ধূমপায়ী সিগারেটের প্রতিটি সুখটানে তার শরীরে গ্রহণ করছেন বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক নিকোটিন এবং বায়ুমন্ডলে ও আশপাশের পরিবেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন দূষিত পদার্থ। ফলে শরীরে যেমন দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা তেমনি বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে নিকোটিনের বিষাক্ত প্রভাবে।
আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ।
সদস্য-জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রচারণা কমিটি, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন