শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

সিলেট-৩ আসনে নৌকা নির্ধারনী আজ, এবারও রাজনীতিকদের টেক্কা দিয়ে মনোনয়ন নিশ্চিতে মরিয়া ধর্নাঢ্যরা !

ফয়সাল আমীন | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২১, ১২:৪৬ পিএম

এমপি পদে লড়ছেন একজন দরিদ্রতম রাজনীতিক ব্যক্তি, এমন খবর যদি আজ (শনিবার) শুনা যেত সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনের নৌকার প্রার্থী চুড়ান্তে। কিন্তু না, এমন খবরের বাস্তবতা চিন্তা করাও যেন ভূলে গেছে জনগন। সেকারনে দীর্ঘ সময় ধরে ধর্ণাঢ্যদের কবজায় সিলেট-৩ আসনের নিয়ন্ত্রণ। প্রকৃত কোন রাজনীতিক এ পর্যন্ত এ আসনে নির্বাচনের সুযোগ পাননি। ব্যবসায়ী এমপিরা রাজনীতির চেয়ে, নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করে চড়ি ঘুরিয়েছেন নিজ দলের উপর। কোনঠাসা করেছেন দলের রাজনীতিকদের। বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি করেছেন রাজনীতিক নেতৃত্বের। বিলিয়নারদের স্বপ্ন পূরণ হল্ওে রাজনীতিকরা হারিয়েছেন নিজস্ব অস্তিত্ব। ত্যাগ-তীতিক্ষার সনদ অর্জন করলে, এমপি নির্বাচনে সেই সনদের কোন মূল্য ছিল বলে মনে হয়নি। এবারও মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছে ধর্ণাঢ্যদের সেই দাপট । সেকারেন নিরাপদ থেকে দুধ কলা খেয়েছেন, তারা, এখন সংসদে য্ওায়ার নিচ্ছেন সব প্রস্তুতি। তাদের ঝোপ বুঝে কুপে, নৌকা ভাগ্য বঞ্চিত হতে পারেন রাজনীতিকরা। এ আসনে বিগত দিনে নৌকা প্রতীকের বিজয় থাকল্ওে দলীয় রাজনীতির বিজয় তৃণমুলে পৌছেনি। এখনো গুনে গুনে চেনা যায়, নৌকা ও আ’লীগের সমর্থকদের। দীর্ঘ এক যুগ ধরে এ আসনে রাজনীতিক নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছেন জেলা আ’লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। প্রয়াত এমপি স্বাধ নিয়েছেন জনপ্রতিনিধিত্বের আর দলের রাজনীতি তৃণমূলে সামলিয়েছেন হাবিব। আ’লীগের মাঠ রাজনীতি এখন পর্যন্ত এ আসনে যতটুকু এর বেশিরভাগই হাবিবের ত্যাগ ও কৃতিত্বে। তার মতো আরো রাজনীতিকদের মূল্যায়নে দল কতটুকু আন্তরিক হবে আজ সকাল ১১ টায় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নৌকার টিকিট চুড়ান্তেই প্রমান মিলবে। ইতিমধ্যে ধনকুবের আতিকুর রহমান আতিককে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে জাপার প্রার্থী হিসেবে। এখন সিলেটের সর্ব মহলে আলোচনার শীর্ষে সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন, কার হাতে আসছে নৌক া? চায়ের দোকান থেকে আদালতপাড়া, রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ ভোটার সবার মুখেই একই আলোচনা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ জন নেতা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তাদের। তাদের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনর (বিএমএ) মহাসচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর (কয়েস) সহধর্মিণী ফারজানা সামাদ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট জেলার পিপি ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, জেলার যুগ্ম সম্পাদক কবির উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাহিদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতা দেওয়ান গৌছ সুলতান প্রমুখ। তবে, দুই ডজনেরও বেশী মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তিন-চার জন। সূত্র জানিয়েছে, সেই তিন চারজনের রাজনীতিক প্রোফাইলের চেয়ে অর্থবিত্তের প্রাচুর্যই বেশি। সেই প্রাচুর্যের প্রতি এদেশে মাটি-মানুষের টানও বেশি। সেকারনে ত্যাগী দরিদ্র একজন রাজনীতিকের চেয়ে ধনিক শ্রেনীর কাউকে ভোট যুদ্ধে পছন্দ্ও করে লোকজন। চিরায়িত এই সংস্কৃতি বদলাতে চেষ্ট্ওা নেই রাজনীতিক দল ও রাজনীতিকদেরও। নির্বাচন সামনে আসলেই ধনকুবের সাথে প্রতিয়োগীতায় নামেন রাজনীতিকরা। দিন শেষে রাজনীতির সব অর্জন বিসর্জন দিতে হয় উচ্চ বিলাশী ধনিক শ্রেনির মনোনয়ন প্রত্যাশিদের কাছে। সেকারনে হয়তো সাধারন জনগনও ভেবে নিয়েছে ধর্ণাঢ্যদের জনপ্রতিনিধির চেয়ারে মানায় বেশ। তাই জনপ্রতিনিধির যোগ্যতা বিবেচিত হচ্ছে, অর্থের বিবেচনায়। সেই চিত্রে ‘অর্থই অনর্থের মূল’, সেই আপ্ত বাক্যের মৃত্যু যেন ঘটেছে সোনার বাংলাদেশে। এখানকার বাস্তবতা হলো, অর্থই সবকিছুর মূল। কথার কথা নয়, বাস্তবতাও সেই ছন্দে, রন্ধ্রে হয়েছে সাজানো। শুধু টাকার খেলা, নীতি নৈতিকতা, যথার্থতা, রাজনীতিকের কাছে রাজনীতির রাজনীতি নিরাপদ সবই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। একজন রাজনীতিকের সমৃদ্ধ মূল্যায়ন হলো জনপ্রতিনিধি পদ অলংকার। কিন্তু না, সেখানে আজ টাকাওয়ালাদের বাস, আর বাঁশ খাচ্ছেন রাজনীতিকরা। সময়ের কঠিন বাস্তবতায় টাকার গরমে তারা বড়ই অসহায়। হয়তো সেকারনে বিশে^র দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট উরুগুয়ের হোসে মুজিকার মতো নেতৃত্ব পাচ্ছে না জনগন। একজন ত্যাগি রাজনীতিবিদ ২০১০ সাল থেকে উরুগুয়ের প্রেসিডেন্ট। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রাপ্ত বেতনের ৯০ ভাগই গরিবদের সহায়তা এবং ছোট বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে দেশের সামাজিক সেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে দান করার কারণে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে গরিব রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বর্ণনা করা হয়। আমাদের দেশ গরীব হলেও জনপ্রতিনিধিরা গরীব হয়না একথা হলফ করে বলা যায়। হয়তো, ধনীদের সাথে ধনীর তুলনায় তাদের অবস্থান কার কোথায় সেই বিষয়টি বলতে ব্যর্থ হবে জনগন। তবে এক কথায় আমাদের জনপ্রতিনিধিরা টাকাওয়ালা, কোটিপতি, শিল্পপতি, ধনকুবের। অহংকার, অলংকার সবই তাদের। সাধারন জনগন কেবল ভোটের সময় টেক্কা। তারপর বোঝা। সেকারনে ভাগ্য পরিবর্তন হয়না জনগনের। কেবল ক্ষমতা, টাকার পথ প্রশস্ত হয় জনপ্রতিনিধিদের। উরুগুয়ের হোসে মুজিকার তুমুল জনপ্রিয়তার পিছনে রয়েছে তার ঠোঁটকাটা কথা, আদর্শবাদী ভাবমূর্তি এবং সহজ-সরল জীবন-যাপন। তার অনুগামীদের মতে, এল পেপে মুখে যা বলেন, কাজেও তা করে দেখান। এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, উরুগুয়েতে হোসে মুজিকার জনপ্রিয়তা প্রায় ৬০ শতাংশ। আরেকজন জনপ্রতিনিধির কথা বলা যায়, তিনি হলেন ইরানের সাবেক রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। প্রেসিডেন্ট হবার আগে তার জীবনযাপন যেমনটি ছিল এখনও ঠিক তেমনটিই। আভিজাত্য তাকে কখনও স্পর্শ করতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট ভবনেও তিনি ফ্লোরে কার্পেটের উপর ঘুমাতেন। ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলতে তার আছে তেহরানের বস্তিতে অবস্থিত ছোট্ট একটি বাড়ি, যা ৪০ বছর আগে তিনি তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। রাষ্ট্রের প্রধান অথচ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য রাষ্ট্র থেকে কোনও টাকা নেন না তিনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই প্রেসিডেন্ট ভবনের দামি কার্পেটগুলো তেহরাণের মসজিদে দান করে দেন। এরপরিবর্তে সাধারণ মানের কার্পেট বিছানো হয় প্রেসিডেন্ট ভবনে। প্রেসিডেন্ট ভবনের ভিআইপি অতিথিশালাও বন্ধ করে দেয়া হয়। একটি সাধারণ ঘরেই ভিআইপিদের সঙ্গে বৈঠকের ব্যবস্থা রাখা হয়। সম্প্রতি তাবৎ বিশে^র ক্ষমতাধর আমেরিকা রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাচিত হয়েছে জো বাইডেন। নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বক্তব্যে বলেছেন ‘‘আমি দেশ সার্ভ করতে এসেছি ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়াতে নয়। যদি ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়ানোর ইচ্ছা থাকতো তবে ব্যবসায়ী হতাম, রাজনীতিবিদ নয়। রাজনীতি হলো বিলিয়ে দ্ওেয়ার জায়গা, বিলিয়নিয়ার হবার নয়, ব্যবসায় মুনাফা থাকে, রাজনীতিতে থাকে শুধু সেবা। এই সেবাটা হলো আমার জীবনের সববেয়ে বড় মুনাফা’’ কিন্তু হায়, আমরা গরীব রাষ্ট্রের নাগরিক। কিন্তু এই রাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধিরা জনপ্রতিধিত্বকে সেবার বিপরীতে বিলিয়নার হওয়া পথে দেখেন। ব্যর্থতা নেই বললেই চলে। বলতে গেলে জনপ্রতিনিধিত্বের খায়েশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ। যদি লেগে যায়, তবে ছক্কা। ছক্কা মারা উচ্চাকাংখায় এখন চলছে প্রতিযোগীতা। সিলেট-৩ আসনে ইতিপূর্বে সংসদে যারাই গেছে বেশিরভাগই বিলিয়নার, রাজনীতিকের পরিবির্তে ধনকুবেররাই জনগনের ভোট নিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন। কারো সম্পদ কমেনি, কেবল বেড়েছে। প্রয়াত সংসদ সদস্যে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছের জীবন ছিল আভিজাত্য-প্রাচুর্যতায় আটপৌরে বাঁধা। অভাব বলতে কিছুই ছিল না। রাজনীতিক ত্যাগ তীতিক্ষার চেয়ে বিত্তবান হিসেবে তার পরিচয় পরিচিতি ছিল। যৌবনে মিছিলে থাকার চেয়ে যুক্তরাজ্যে বসে কামিয়েছেন অর্থ। সেই অর্থ বিফলে যায়নি। লগ্নি করেছেন জনপ্রতিনিধিত্বের খায়েশে। একবার না পারলে বারবার চেষ্টা করে মহান সংসদে যেতে পেরেছিলেন তিনি। তারপর টানা ৩ বার। ইচ্ছে ছিল সংসদ সদস্য হয়ে মৃত্যুর। সেই স্বপ্ন্ও তার পূরণ হয়েছে। এক সংসাদ কর্মীকে মৃত্যুর পূর্বে সেই স্বপ্ন স্বাধের কথা বলেছিলেন তিনি। করোনাকালীন প্রথম ধাপে একজন মানবিক জনপ্রতিনিধি হিসেবে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। জনগনের পাশে থেকে সেবাই করেছিলেন তিনি। কিন্তু অবশেষে করোনার কাছেই বাড়ির অসহায় আতœসমর্পন করে দুনিয়া ছাড়েন তিনি। তার মৃত্যুতে প্রাসাদসম বাড়িতে নেমে আসে শুনশান নিরবতা। প্রাসাদসম বাড়ি। সুরম্য অট্টালিকা সম বাড়িটি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা সদরের নুরপুরে অবস্থিত। নুরপুর বড়বাড়ি নামে খ্যাত বাড়িটি মাহমুদ উস সামাদ বিহীন যেনো হয়ে উঠে মৃত্যুপুরী। গত ১১ মার্চ রাজধানী ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান করোনা আক্রান্ত এই সংসদ সদস্য। তাঁর মৃত্যুর খবরে নেতাকর্মীরা বাড়িতে ভীড় করেন। বাড়ির যে কক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসতেন, সেই কক্ষটি গোছানো। যে চেয়ারে বসে নেতাকর্মীদের সঙ্গে খোশগল্পে মাতোয়ারা হতেন, সেই চেয়ারটি খালি পড়ে আছে। নেই কেবল চেয়ারের মানুষটি। ঘরের দেয়ালে সাঁটানো ছবিতে তার বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক বর্ণাঢ্য জীবনের ছবি। ঘরের গৃহকর্মী নির্বাক দৃষ্টিতে অপলকে দেখছেন দেয়ালে সাঁটানো মালিকের ছবি। প্রখ্যাত ফার্সি কবি শেখ সাদি বলেছিলেন, ‘‘কিছু মানুষ মরেও বেঁচে থাকে, কিছু মানুষ বেঁচেও মরে যায়’’। হয়তো শেষ কর্মের মধ্যে দিয়ে আগামী দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকবেন তিনি। কর্মের কীর্তিতে তলিয়ে যাবে আফসোসের সব কষ্ট। প্রয়াত এ সংসদের সদস্যের আসনে আগামী ২৮ জুলাই উপ-নির্বাচন। আজ নির্ধারন হবে নৌকার কান্ডারী কে হচ্ছেন। তালিকায় রয়েছেন প্রয়াত এ সংসদ সদস্যেরস্ত্রী ফারজানা চৌধুরীও। এছাড়া ত্যাগী রাজনীতিবিদরাও দৌড়াচ্ছেন নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিয়তায়। টাকাওয়ালাদের দৌড়ে রাজনীতিবিদদের দৌড় কোথায় যেয়ে ঠেকে সেই প্রশ্ন এখন অনিবার্য। তবে, অর্থের সাথে ক্ষমতা, কিছুই চিরস্থায়ী নয়, অনির্ধারিত সময় শেষে শুন্য হাতে কবরেই পাড়ি দিতে হবে সবাইকে। সেই উপলব্ধি জ্ঞানের একজন জনপ্রতিনিধির অপেক্ষায় সিলেট ৩ আসনের মাটি ও মানুষ। তার মধ্যে দিয়ে নতুন ধারার সূচনা ঘটবে জনপ্রতিনিধিত্বে। এমনটিই হবে যুগযুগান্তরের ইতিহাস। প্রতিফলন ঘটবে, ‘ভোগে নয়, ত্যাগে সুখ’ নীতি কথার।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন