শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভ্যাকসিন ছাড়া কর্মীতে অনীহা

কল্যাণ তহবিলের অর্থ দিয়েই টিকা দিন, শ্রমবাজার সম্প্রসারণের সুযোগ বাড়বে

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২১, ৯:৩০ পিএম

করোনা মহামারির ভ্যাকসিন দিয়েই প্রবাসী কর্মীদের বিদেশে যেতে হবে। জনশক্তি আমদানিকারক বিভিন্ন দেশ কর্মী নেয়ার আগে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিতকরণে তাগিদ দিচ্ছে। রিসিভিং কান্ট্রিগুলো করোনা ভ্যাকসিন ব্যতীত অভিবাসী কর্মী নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। ফলে বিদেশগামী কর্মীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় জনশক্তি রফতানিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

জনশক্তি রফতানির সর্বোচ্চ দেশ সউদী আরবে গমনের ক্ষেত্রে যেসব কর্মী করোনা ভ্যাকসিন দেয়নি তাদেরকে দেশটির হোটেলে এক সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে অবস্থান করে কর্মস্থলে যোগদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এতে হোটেল কোয়ারেন্টিনের থাকা-খাওয়ার ব্যয় বাবদ সউদী গমনেচ্ছু কর্মীদের অতিরিক্ত প্রায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এসব ব্যয়ের টাকা যোগাতে কর্মীদের নাভিশ্বাস উঠছে। যেসব সউদীগামী কর্মীর ভ্যাকসিন দেয়া আছে তাদেরকে সউদী আরবে পৌঁছার পর আর হোটেল কোয়ারেন্টিন লাগবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অতিসম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে সউদীগামী নতুন-পুরাতন প্রত্যেক কর্মীকে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

বায়রার সাবেক মহাসচিব মো.রুহুল আমিন স্বপন আজ শনিবার ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারিতে বিশ্বে চলাচলে আবশ্যক হচ্ছে ভ্যাকসিন। বিদেশ গমনেচ্ছু প্রত্যেক প্রবাসী কর্মীকেই ২টা ভ্যাকসিন দিয়েই যেতে হবে। প্রবাসী কর্মীদের করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়ে এগুতে না পারলে জনশক্তি রফতানিতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বায়রার সাবেক নেতা স্বপন বলেন, যেসব সেন্ডিং কান্ট্রি বিদেশগামী কর্মীদের ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা দিতে পারবে রিসিভিং কান্ট্রিগুলো কর্মী নিতে সেসব দেশের দিকে ঝুঁকে পড়বে। বিদেশগামী কর্মীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে বায়রার সাবেক নেতা করোনা দুর্যোগময় সময়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলে প্রবাসী কর্মীদের জমাকৃত শত শত কোটি টাকা দিয়েই প্রয়োজনে বিদেশগামী কর্মীদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জনশক্তি রফতানির অন্যতম দেশ মালয়েশিয়া গত ১৯ মে এক চিঠিতে করোনা ভ্যাকসিন দিয়েই দেশটির প্লানটেশন খাতে ৩২ হাজার নতুন কর্মী নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়ার ক্যাবিনেটে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মালয়েশিয়ার মানব সম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ-এর কাছে এক জরুরি চিঠিতে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঐ চিঠিতে কর্মী প্রেরণের আগে করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার বিষয়টি তাগিদ দেয়া হয়। ভ্যাকসিন গ্রহণ ব্যতীত কোন কর্মীকে দেশটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলেও ঐ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সময় সুযোগ মতো দেশটির অন্যান্য খাতেও বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করার আশ্বাস দেয়া হয়।

বিএমইটির সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। করোনার অভিঘাতে অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, তখন প্রতি মাসে বাংলাদেশের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসছে প্রবাসীদের পাঠানো আয় বা রেমিটেন্স। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ছাড়া বাকি মাসগুলোতে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলার করে রেমিটেন্স আয় হয়েছে। মে মাসেও রেমিটেন্স আয় ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। উচ্চ রেমিট্যান্সের প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। রিজার্ভ আবারো ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। ৩১ মে দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫.০৫ বিলিয়ন ডলার। সম্প্রতি রেমিট্যান্স সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেল মাসে রেমিটেন্স আয় হয়েছে ২.১৭ বিলিয়ন ডলার, যা গেল বছরের মে মাসের চেয়ে ৪৪ শতাংশ বেশি।

ফিমেল ওয়ার্কার রিক্রুটিং এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ফোরাব) মহাসচিব মহিউদ্দিন শনিবার রাতে ইনকিলাবকে বলেন, সোর্স কান্ট্রিগুলোতে কর্মী প্রেরণের ক্ষেত্রে করোনা ভ্যাকসিন বাধ্যতামূলক হচ্ছে। করোনার টিকা ছাড়া কোনো দেশেই কর্মী পাঠানো যাবে না। তিনি বলেন, সউদী আরবে টিকা না দেয়া কর্মীদের এক সপ্তাহের হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে অনেক সউদীগামী কর্মীদের টাকার অভাবে পাঠানো যাচ্ছে না। ফোরাব নেতা মহিউদ্দিন জনশক্তির খাতকে টিকিয়ে রাখতে অবিলম্বে বিদেশগামী সকল কর্মীদের জন্য করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শনিবার রাতে সউদীর জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে শ্রম সচিব মো. আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, সউদী আরবে প্রায় ২৩ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছেন। সউদী সরকার গত ২ মার্চ থেকে দেশটিতে বসবাসকারী সকল অভিবাসী কর্মীকে বিনা পয়সায় একটি করে ভ্যাকসিন দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী দেশটিতে আসছেন তাদেরকে এক সপ্তাহ হোটেল কোয়ারেন্টিনে থাকতে হচ্ছে নিজ খরচে। তবে সরকার অতিসম্প্রতি প্রত্যেক কর্মীকেই ২৫ হাজার টাকা করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে হোটেল কোয়ারেন্টিনের জন্য সহায়তা দিচ্ছে। তার মতে বিদেশগামী সকল কর্মীকেই করোনা ভ্যাকসিন দিয়ে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
রুমী সাঈদ ১৪ জুন, ২০২১, ২:৩১ পিএম says : 0
সর্দি আরবে কোয়ারেন্টিনের জন্য যে অর্থ নেওয়া হচ্ছে সরজমিনে দেখা গেছে ঐ সকল হোটেল গুলোর ভাড়া তার অর্ধেক। তাছাড়া খাবার দেয়া হয় নিম্ন মানের।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন