ঋতু চক্রে পঞ্জিকার পাতায় জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিন আজ সোমবার। বর্ষার ঋতু শুরু আগামীকাল। গেল বছরের মতো এবারও বর্ষার বাহক দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগেভাগে প্রবেশে দেশজুড়ে বর্ষার আবহ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ক্রমেই জেঁকে বসছে মৌসুমী বায়ুমালা। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য এবং মেঘের বিস্তার বর্ষা জানান দিচ্ছে। আজ দেশের অনেক স্থানে বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি এবং পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি বজায় রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী বায়ু প্রবল। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশ সংলগ্ন উপকূলে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রায় সবক’টি জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি হয়। দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় নিকলিতে ৪৩ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং রাতের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
নদ-নদীর পানি হ্রাস-বৃদ্ধি
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে গতকাল জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যমুনা নদে পানির সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। যমুনায় পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। তা আগামী ২৪ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলায় এবং এর সংলগ্ন এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে এ সময়ে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার নদীসমূহের পানির সমতল সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কোথাও কোথাও আকস্মিক বন্যা সংঘটিত হতে পারে। দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫৮টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি, ৩৭টিতে হ্রাস এবং ৫টিতে অপরিবর্তিত থাকে। শনিবার ৫৭টিতে পানি বৃদ্ধি ও ৪২টিতে হ্রাস, একটি স্থানে অপরিবর্তিত থাকে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে নদ-নদীসমূহের উজানে তেমন উল্লেখযোগ্য ভারী বৃষ্টি হয়নি। এ সময়ে ভৈরববাজারে ৪৩, মহাদেবপুরে ৩৪ মি.মি. বৃষ্টিপাত হয়। উজানে আগরতলায় ৪১, আইজলে ২৩ মি.মি. বৃষ্টি হয়।
নৌ-সতর্কতা : দেশের অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহের জন্য পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলের উপর দিয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কি.মি. বেগে অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন