তেঁতুলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামের মো. দবিরুল ইসলামের মেয়ে সুমি আকতার। সে দর্জিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। চলমান কেভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় গত দুমাস আগে একই গ্রামের আবু সঈদ তার পূর্ব পরিচিত তেঁতুলিয়া উপজেলার সাবেক উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান (শিশির) এর বাড়ীর কাজের জন্য রাজধানী ঢাকায় গৃহকর্র্মী হিসাবে পাঠান। সেখানে যাওয়ার পর থেকে সুমির উপর চলে অমানুষিক নির্যাতন। সুমির সাধ্যের বাইরের কাজও তাকে করতে বলে গৃহকর্ত্রী। সুমির কাজ শাহিনুজ্জামানের স্ত্রী জিমি বেগমের মনমত না হলে রান্নার কাঠ দিয়ে চলতে থাকে অমানুষিক নির্যাতন। তার পুরো শরীরে মারপিটের কারণে ফুলে জখম রয়েছে। এক পর্যায়ে সুমি এ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার বাবার কাছে তেঁতুলিয়ায় ফেরত পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। তার অনুরোধে পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান (শিশির) গত ৯ জুন ঢাকার শ্যামলী থেকে তেঁতুলিয়ার হানিফ এন্টার প্রাইজ গাড়ীতে একাকি তুলে দেয়। অসুস্থ অবস্থায় সে ১০ জুন ভোরে তেঁতুলিয়া পৌঁছায়। ঐদিন সুমির বাবা দবিরুল ইসলাম তাকে চিকিৎসার জন্য তেঁতুলিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে ভর্তি নির্যাতিতা শিশু সুমি আকতার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলে, আমাকে সাহেবের বউ জিমি বেগম প্রতিদিন অনেকগুলো কাপড় ধোয়ার জন্য বের করে দিত। থালা বাসন ধোয়ার কাজও করাত। আমি কাজ করতে না পারলে আমাকে ভাত রান্না করা লাকড়ি দিয়ে খুব মারপিট করত। কোন কোন দিন আমাকে পায়ে দড়ি দিয়ে খাটের খুঁটিতে বেঁধে মারত। আর বলত তোকে মেরে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিব আমার কিছু হবে না। আমাকে ঠিকমত খাবারও দিত না। আমি এ নির্যাতনের বিচার চাই। নির্যাতনে সুমির হাত পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে কালো দাগ পড়েছে।
সুমির বাবা দবিরুল ইসলাম বলেন, আমাকে ওই সাহেব বলেন তাদের ছেলে সন্তান নাই আমার মেয়েকে নিয়ে স্কুল পড়াবে এবং নিজ সন্তানের মত দেখবে। কিন্তু আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক নির্যাতন করেছে। আমি মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা বলতে সুমি বাথরুমে আছে এই বলে ফোন কেটে দিত। আমি গরীব মানুষ শিশু নির্যাতনের সঠিক বিচার চাই।
এদিকে এ ঘটনায় নির্যাতিনের শিকার সুমির বাবা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে, শাহিনুজ্জামান শিশির স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় অসহায় নির্যাতিতার পরিবারকে মিমাংসা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন বলে জানা গেছে। অভিযুক্ত তেঁতুলিয়ার সাবেক পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিনুজ্জামান শিশির বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলায় কর্মরত। তিনি জানান, শিশুটি প্রচুর মিথ্যা কথা বলে। শিশুটির কিছু অসুখ আছে এখানে ডাক্তারকে দেখিয়ে চিকিৎসা করেছি। মারপিটের ঘটনাটি সত্য নয়।
সিনিয়র স্টাফ নার্স দিতি বলেন, শিশুটির শরীরে একাধিক মারপিটের চিহ্ন আছে। তাকে শারিরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্মকর্তা এএসএম মুশফিকুর রহমান জানান, শিশুটির উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। তবে আরো কিছু পরীক্ষা ও ইনভেস্টিগেশন শেষে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আবু ছায়েম মিয়া জানান আমি ঘটনাটি জানার পর হাসপাতালে গিয়ে খোজ খবর নিয়েছি। তার চিকিৎসা চলছে। তার অভিভাবকের সাথে কথা হয়েছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন