৬৪ জেলায় ত্রাণ তদারকির দায়িত্বে সচিবরা মাঠে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত ও চলাচলে বিধিনিষেধ বা কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় ছিল প্রায় ফাঁকা। জরুরি কাজে যুক্ত কিছু মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের দপ্তর ছাড়া সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অফিস ছিল বন্ধ। তবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তর খোলা। জরুরি কাজে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ হাতে গোনা কয়েকজন কর্মকর্মতা ও কর্মচারী অফিস করছেন। অফিসে বসে সারা দেশের ডিসিদের সাথে ফোনে পযবেক্ষণ করছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরও খোলা ছিল। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিল দুই একজন। এই মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য দপ্তর বন্ধ দেখা যায়। কিছু কিছু কর্মকর্তার কক্ষে তালা ঝুলছে।
কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের ৬৪ জেলায় প্রদান করা হয়েছে। এবার বিপিএটিসির রেক্টর মো. মনজুর হোসেনকে নরসিংদী জেলায় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে রাজশাহী জেলায় দায়িত্ব দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত আদেশ জারি করা হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত মূল কাজের সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে উপস্থিতি অন্যান্য জরুরি দপ্তরের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। মন্ত্রীর দপ্তর খোলা ছিল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী অফিসে আসেননি। সচিব অফিস করেছেন। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে আগামী সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। চলবে ৭ জুলাই পর্যন্ত। এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে সচিবালয়ে কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ের কক্ষে তালা ঝুলছে। এ অবস্থা দেখে মনে হয় ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ঘুরে দেখা যায়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তর খোলা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও কর্মচারী অফিস করছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব সারাদেশের ডিসি-ইউএনওদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে সকল জেলার মানুষের চিকিৎসার খবর নিচ্ছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরও খোলা ছিল। তবে কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছিল দুই একজন। এই মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য দপ্তর বন্ধ দেখা যায়। কিছু কিছু কর্মকর্তার কক্ষে তালা খুলছে। দেখা যায় অন্যান্য সময়ে যেভাবে উপস্থিতি থাকত, গতকাল তা নেই। সচিবালয়ের প্রাঙ্গণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলো ছিল কর্মকর্তা ও কর্মচারীশূন্য। আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের প্রবেশের কলাপসিবল গেট পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে উপস্থিতি অন্যান্য জরুরি দপ্তরের চেয়ে তুলনামূলক বেশি। মন্ত্রীর দপ্তর খোলা ছিল। সেখানে একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দেখা গেছে। সচিব অফিস করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক অফিসে আসেননি। উপস্থিত একজন কর্মকর্তা জানালেন, আজ শুক্রবার রাতে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে যুক্তমাধ্যমে মডার্নার টিকা আসবে। এদিন প্রায় ১২ লাখের মতো করোনার টিকা আসার কথা। পরদিন বাকি টিকা মিলিয়ে দুদিনে ২৫ লাখ টিকা আসবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী মন্ত্রণালয়ে আসেনি। মন্ত্রীসহ অন্যদের দপ্তর বন্ধ। অধিকাংশ দপ্তরেই ছিল একই চিত্র।
নাম প্রকাশে অন্চ্ছিুক মন্ত্রিপরিষদ বিভগের এক যুগ্মসচিব বলেন, বিধিনিষেধের প্রথম দিনে সচিবালয় ফাঁকা। সচিবালয়ে সকালে এসে মনে হয় ঈদের ছুটির মতো ছুটি ভোগ করছেন। অনেক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা না আসলেও আমাদের আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আদেশে বলা হয়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুসমন্বয়ের লক্ষ্যে সরকারের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের ৬৪ জেলায় প্রদান করা হয়। দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিবরা কাজে তার মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ দপ্তর সংস্থার উপযুক্ত সংখ্যক কর্মকর্তাকে সম্পৃক্ত করতে পারবেন। নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা জেলার সংসদ সদস্য. জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, জনপ্রতিনিধি, স্থানয়ি গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার কাজ তত্ত্বাবধায়ন ও পরিবীক্ষণ করবেন। জেলা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ সমন্বয় সাধন করবেন। সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ অথবা অন্যবিধ বিষয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে /বিভাগ / সংস্থাকে লিখিত আকারে জানাবেন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
গত ৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি-বেসরকারি অফিস, শপিংমল, দোকানপাট এবং গণপরিবহন ছাড়াও এবার সবধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র, জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানও বন্ধ থাকবে। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া কেউ কোনোভাবে ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিপত্রে আরো বলা হয়, শিল্পকারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা যেমন কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, করোনার টিকাদান, রাজস্ব আদায় কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি বা অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, কার্গো ভেসেল এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে না। বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) ও সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে। কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। টিকা কার্ড দেখিয়ে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইনে কেনা বা খাবার নিয়ে যাওয়া) করতে পারবে। হোটেলে বসে খাওয়া যাবে না। বিধিনিষেধ চলাকালে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ থাকলেও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন