শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অবিশ্বাস্য গুলিস্তান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানী ঢাকার আশ্চর্যজনক স্পটের নাম গুলিস্তান। গুলিস্তান নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি জায়গার ছবি। এটিই ঢাকার প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তান। অথচ ঢাকা সিটি করপোরেশনের হোল্ডিংয়ের তালিকায় গুলিস্তান নামের কোনো স্থান নেই। কাগজে-কলমে রয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ। পাকিস্তান আমলে ছিল জিন্নাহ অ্যাভিনিউ। অথচ সারাদেশের মানুষের কাছে স্পটটি গুলিস্তান নামে পরিচিত। লাখো মানুুষের কলকাকলিতে নিত্যদিন মুখরিত থাকা গুলিস্তানের দৃশ্য চলমান কঠোর লকডাউনে পাল্টে গেছে। চিরচেনা গুলিস্তানের এখন অন্যরূপ। ফুটপাথে হকার নেই, দোকানপাট বন্ধ, গণপরিবহনের হেলপারদের চিৎকার চেঁচামেচি নেই, এমনকি নেই পথচারীও। সাত দিনের কঠোর লকডাউনে গুলিস্তান যেন খাঁ খাঁ করছে। প্রতিটি মার্কেটে শাটার বন্ধ। প্রতিদিন গুলিস্তান দিয়ে অফিসে যাতায়াত করেন এমন কয়েকজন জানান, চলমান লকডাউনে মূলত সেনাবাহিনী মাঠে নামায় মানুষ পথে নামছে না; চিরচেনা কলকাকলির গুলিস্তান জনমানবশূন্য।

গুলিস্তানের রাস্তার ফুটপাথে পণ্য বিক্রি করেন ৫ হাজার হকার। পাইকারি ও খুচরা পণ্য যা কিনবেন গুলিস্তান গেলেই পাবেন। চোরাই মার্কেটে মোবাইল, জুতার মার্কেট ও ইলেকট্রনিকস যন্ত্রপাতি বিক্রির জন্য বিখ্যাত (!) গুলিস্তান। নতুন চকচকে টাকা ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে সবকিছুই গুলিস্তানে পাওয়া যায়। ফলে নিত্যদিন দেখা যেত কাঠের তৈরি ছোট ছোট পাটাতনে জামাকাপড়সহ হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে ফুটপাথ এবং প্রতিটি সড়কের ফুটপাথে দিনভর বিক্রি করছেন হকাররা। সেসব ছোট ছোট পাটাতন দিয়ে গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার রোডটি ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ থেকে শুরু করে জিরো পয়েন্ট, জিপিও, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাথ, টিএন্ডটি অফিস, মহানগর নাট্টমঞ্চ, দু’টি স্টেডিয়াম, বঙ্গবাজার হকার্স মার্কেটসহ অর্ধশত মার্কেট গড়ে উঠেছে। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রুটসহ কয়েকটি জেলা সদরের সঙ্গে গণপরিবহন যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র গুলিস্তানে ২৪ ঘণ্টায় লোকে লোকারণ্য থাকে। সেই হইহুল্লোড়ের গুলিস্তান এখন নিথর নিস্তব্ধ। গতকাল লকডাউনের সময় দেখা গেছে গুলিস্তান মোড় জনশ‚ন্য। মাঝে মধ্যে হুইসেল বাজিয়ে চলছে পুলিশের গাড়ি। কখনো কখনো ছুটে চলে দু-একটা অ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু সাধারণ মানুষ নেই। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে দেয়া ৭ দিনের কঠোর লকডাউনে কেবল নগরীর জনশ‚ন্য গুলিস্তান মোড়ের দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে।
দিনের সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যে গুলিস্তান মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, হকার্স মার্কেট, রমনা মার্কেট, সিটি প্লাজা, সুন্দরবন স্কয়ার, কাপ্তান বাজার, স্টেডিয়াম, পীর ইয়েমেনি মার্কেট, সমবায় মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মার্কেট, ফুলবাড়িয়া মার্কেট, মহানগর নাট্টমঞ্চ হয় মুখরিত। সেই গুলিস্তানের কোথাও মানুষের দেখা নেই। সবখানে সুনসান নীরবতা। জনশূন্য গুলিস্তানে দেখা গেল, রাস্তার কোনো মোড়ে ব্যারিকেড দেয়া, কোনো মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাহারা দিচ্ছে। গুলিস্তান থেকে যে রাস্তা নবাবপুর হয়ে পুরান ঢাকা গেছে, আজিমপুর হয়ে নিউ মার্কেটের দিকে গেছে এবং জিপিও হয়ে পুরানা পল্টন দিয়ে বিজয়নগরের দিকে গেছে এবং সচিবালয়ের কোল ঘেঁষে হাইকোর্টের দিকে চলে গেছে সবগুলো যেন বিরামভূমি। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। দু’চারটি রিকশা চলাচল করছে। পুলিশ পায়েচালিত সেসব যানবাহন থামিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলছেন। গুলিস্তান সংলগ্ন বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেল, জরুরি প্রয়োজনে যারা সড়কে এসেছেন, তাদের প্রত্যেককে পুলিশি জেরার মুখে পড়তে হয়েছে।

গুলিস্তানের দক্ষিণে কাপ্তানবাজার কাঁচা বাজারে কিছু দোকান খোলা রাখা হলেও ক্রেতা কম। ব্যবসায়ীরা জানান, গুলিস্তানে ২৪ ঘণ্টা লোকজন থাকে। রাত ২টা ৩টার সময়ও যানবাহন চলাচল করে, খাবার দোকান খোলা থাকে এবং মানুষ কেনাকাটা করেন। লকডাউনের কারণে মানুষ কম, তাই কেনাবেচাও কম। যানবাহন ও জনমানব না থাকায় সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ভুতুড়ে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। জানতে চাইলে গুলিস্তানের একজন বললেন, করোনায় এতদিন সরকার ঘোষিত লকডাউন হকাররা মানেননি মূলত পেটের কারণে। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে রুটিরুজির প্রয়োজনে। কিন্তু এবার মাঠে সেনাবাহিনী নামায় হকাররা ঘরে বসে রয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
R.k. Bhakta ২ জুলাই, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
আরে ভাই কিসের লকডাউন সাভার-আশুলিয়া আসেন দেখে যান ব্যক্তিগত গাড়ির কোন অভাব নাই
Total Reply(0)
MD Tanvir Islam ২ জুলাই, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
লকডাউনের নামে গরিবের পেটে লাথি,,, এভাবে চলতে থাকলে গরিব মানুষ গুলো পেট ডাউনে মরা যাবে।।।
Total Reply(0)
মুনশি সাহেব ২ জুলাই, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
যা হোক এবার অনেকটা অাশাব্যঞ্জক তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। পুলিশ অনেক এ্যাকটিভ। তেজগাঁও কুনিপাড়ায় হোটেলে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। চারদিকে থমথমে অবস্থা।
Total Reply(0)
Shahinul Islam Mamun ২ জুলাই, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
ঢাকার নবীনগরে আসলে আপনাদের চোখ জুড়িয়ে যাবে, সব চলছে।
Total Reply(0)
Md Jubaer ২ জুলাই, ২০২১, ১:১৯ এএম says : 0
এমন কঠোর লকডাউন আমি কখনোই দেখিনি।
Total Reply(0)
Azadul Khokon ২ জুলাই, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
তবুও যারা ঘুরবে তারাই একসময় বলবে হাসপাতালে অক্সিজেন নাই, বেড নাই ইত্যাদি।
Total Reply(0)
ɱd ɱonir ২ জুলাই, ২০২১, ১:২০ এএম says : 0
মাসের-পর-মাস লকডাউন চলছে আর এখন শুরু হয়েছে নতুন নাটক।
Total Reply(0)
শামীম উদ্দিন শ্যামল ২ জুলাই, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
ভাল। লকডাউন শুধু দিলেই হবে না, খেটে খাওয়া মানুষদের ঘরে ঘরে খাবারও দিতে হবে। তবুও মানুষের সুস্থতার জন্য/জীবন বাঁচানোর জন্য কিছুটা কষ্ট সবাইকে স্বীকার করতেই হবে।
Total Reply(0)
Palash Arshad ২ জুলাই, ২০২১, ১:২১ এএম says : 0
সেনাবাহিনী দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেসকল হাসপাতাল চিকিৎসার নামে দুর্নীতি করে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক, ধন্যবাদ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন