শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাল্টে গেছে গুলিস্তান

| প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : এ যেন অন্যরকম গুলিস্তান। রাস্তা ও ফুটপাথে হকার নেই। নেই কোলাহল, শোরগোল।  ক্রেতাদের ভিড়ও নেই। ফুটপাথ দিয়ে নির্বিঘে পায়ে হেঁটে চলেছেন পথচারীরা। আর রাস্তায় বাধাহীনভাবে চলছে গাড়ি। মোড়গুলোতে যানজট হলেও তা অল্প সময় স্থায়ী হচ্ছে। গুলিস্তানের ব্যস্ততা অনেকটাই কমে গেছে। তাতে স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, দোকানদার, পথচারী সবার মধ্যেই। গতকাল সোমবার দুপুরে দেখা গেছে, ফুটপাথ ও রাস্তা হকারমুক্ত অবস্থায় পুরো গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, জিপিও, দৈনিকবাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকার চিত্র একেবারে পাল্টে গেছে। অনেকের মতে, এখন প্রয়োজন রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা। তাহলে রাস্তায় নির্বিঘে চলাচলের সব ধরনের জঞ্জাল দূর হবে। থাকবে না যানজট, বিড়ম্বনা। আলাপকালে বেশ কয়েকজন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, মেয়র শক্ত অবস্থানে না থাকলে পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব ছিল না। কারণ ফুটপাথকে ঘিরে চিহ্নিত চাঁদাবাজরা এখনও সক্রিয়। তাদের কাছে জনদুর্ভোগের চেয়ে দুটি টাকার চাঁদাবাজিই বড়। তারা নানাভাবে মেয়রকে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
জানতে চাইলে গুলিস্তান এলাকায় কর্মরত সিটি কর্পোরেশনের দু’জন স্বেচ্ছাসেবক জানান, হকাররা একটু সুযোগ পেলেই ফুটপাথের উপর পসরা সাজিয়ে বসছে। কেউ কেউ রাস্তার উপর ডালা নিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। সে কারণেই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের উচ্ছেদও অব্যাহত আছে। গতকাল সোমবার গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল, দিলকুশা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দিনে রাস্তা এবং ফুটপাতগুলো মোটামুটি হকারমুক্ত। কিছু কিছু হকার চোট ডালা নিয়ে এখানে সেখানে বসছে বা ঘুরাঘুরি করছে। ফুটপাথের স্থায়ী দোকানগুলো নেই। তবে মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায় কিছু চা-বিস্কুটের দোকান এখনও আছে। আলাপকালে মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকার একজন হকার বলেন, দিনের বেলায় বসার কোনো উপায় নেই। এখন পুলিশই আর বসতে দেয় না। এর সাথে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতও দিনের মধ্যে কয়েকবার চক্কর দেয়। তবে এর মধ্যেও কেউ কেউ ডালা নিয়ে বসছে। যাদের মধ্যে কয়েকজনকে গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে গুলিস্তান এলাকায় দেখা গেছে। তারা ছোট ছোট ঝুরি নিয়ে রাস্তার উপর বসে জুতা বিক্রি করছিল।  
দিনের বেলায় বসতে না দেয়ায় সাধারণ হকাররা যে খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তা নয়। মতিঝিল আলিকো ভবনের সামনের একজন হকার বলেন, আগে সারাদিনে যা বিক্রি হতো এখন বিকালের পর থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টায় তা বিক্রি হয়। রাতেও মানুষ আসে কিনতে। সে হিসাবে ব্যবসা খুব যে খারাপ তা কিন্তু নয়। গুলিস্তান এলাকার হকার মোক্তার বলেন, বিকালের পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত যা বিক্রি হয় তা একেবারে খারাপ নয়। বরং এখন চাঁদাবাজদের উৎপাত নাই। আগে প্রতিদিন ৪শ’ টাকা চাঁদা দিতে হতো। তারপরেও পুলিশ ঝামেলা করতো। এখন সে উৎপাত কমেছে। খরচ কমে যাওয়ায় বিক্রি একটু কম হলেও পুষিয়ে যাচ্ছে।   
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত রাখতে ৫২ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। চলতি মাসের ২২ তারিখ সকাল থেকে এসব স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন শুরু করেছে।  স্বেচ্ছাসেবকদের গায়ে ইউনিফর্ম ও হাতে একটি প্লাস্টিকের লাঠি দেওয়া হয়েছে। ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে জারি করা এক অফিস আদেশে প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের এসব কর্মীদের স্বেচ্ছাসেবক’ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এরাই মতিঝিল, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররম ও দিলকুশাসহ আশপাশের এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে।
দিনের বেলায় গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিল এলাকা হকারমুক্ত হওয়ায় পথচারী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ক্রেতা, বিক্রেতার অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। গুলিস্তান রমনা ভবনের কাপড় ব্যবসায়ী শাহীন বলেন, আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা করছি। ঐতিহ্যবাহী রমনা ভবনে এখন অনেকেই আর আসেন না। গুলিস্তানের পরিবেশের কারণে ভদ্রলোকরা  সপরিবারে আর আসতে চান না। গত কয়েক দিনে হকারমুক্ত হওয়ায় এখন নতুন করে মানুষ আসছে। এটা খুবই ভালো হয়েছে। রমনা এলাকার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করা অনেক আগেই উচিত ছিল। হকারদের কারণে এই এলাকার বহু ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছিল। এখানে মানুষ চলাচলের কোনো পরিবেশ ছিল না। এখন হয়েছে। এজন্য মেয়রকে ধন্যবাদ। আগামীতে রাতেও যাতে গুলিস্তান হকারমুক্ত থাকে সে ব্যবস্থা করা উচিত।
শেফালী নামে এক মহিলা কর্মজীবী বলেন, এই এলাকায় অফিস করা যে কতোটা বিব্রতর তা বলে বোঝানো যাবে না। রাস্তায় হকারদের চেয়ে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। ঠেলাঠেলি করে চলতে গিয়ে কে কার সাথে ধাক্কা লাগে তার খবর কেউ রাখে না। অন্তত সকালে অফিসে আসি নিরাপদে। বিকালে অবশ্য আগের চেয়ে ঝামেলা একটু কমেছে। আরেক মহিলা পথচারী বলেন, ফুটপাথ তো মানুষের হাঁটার জন্য করা। সেখানে দোকান বসবে কেনো। সেটা রাতে হোক বা দিনে হোক। আমরা রাজধানীতে বাস করছি সে জন্য তো ট্যাক্স দিচ্ছি। আমরা কেনো হাঁটার সুযোগ পাবো না। এটা কোনো সভ্য দেশের নিয়ম হতে পারে না। তিনি বলেন, এখন রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে পারলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। আশা করি মেয়র এ বিষয়েও ব্যবস্থা নিবেন।
নগরীর ফুটপাথ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্য ডিএসসিসি মেয়র  সাঈদ খোকন গত ১১ জানুয়ারি হকার নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারি কর্মদিবসে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সড়কে হকার বসতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এ লক্ষ্যে ১৫ জানুয়ারি থেকে ফুটপাথ ও রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এতে করে ফুটপাথের চাঁদাবাজচক্র ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তারা হকার্স নামের সাথে বিভিন্ন বিশেষণ যুক্ত করে একাধিক সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করে। এদের নেপথ্যে তালিকাভুক্ত ৪২ জন লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজ সক্রিয় হয়ে ওঠে। লাইনম্যানদের হয়ে ওইসব অনুমোদনবিহীন হকার সংগঠনের নেতারা মেয়রকেও নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু মেয়র সাঈদ খোকন তাঁর সিদ্ধান্তে অবিচল। তিনি বলেন, ফুটপাথ জনগণের সম্পদ। এটি উদ্ধারে উচ্চ আদালত এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি। ফুটপাথ দখলে যত বড় জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রভাশালী ব্যক্তি হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সার্বিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। জনগণের পথচলা নির্বিঘœ করতেই আমাদের এ প্রচেষ্টা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (13)
major Solaiman ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:০৩ এএম says : 0
Bravoo. May Allah help U staying HONEST till death, In Sh Allah. Our prayer will be always for U. Thanks again for the HISTORY, U made against hokers.
Total Reply(0)
Md ibrahim ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ৭:৪৫ এএম says : 0
Vallo kajj gullu k vallo bolteo vallo lage.
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪১ পিএম says : 1
আর যেন হকাররা বসতে না পারে সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে।
Total Reply(0)
Munna ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪২ পিএম says : 0
পার্কিং মুক্ত ফুটপাত চাই।
Total Reply(0)
Aslam Biswas ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪২ পিএম says : 0
আবার সব আগের মত হয়ে যাবে, আপেক্ষা মাত্র। যদি না হয় তাহলে খুব ভালো, আমি গতকাল দেখলাম কিছু হকার তারপরও তাদের কাজ চালিয়ে যচ্ছে।
Total Reply(0)
Muhammad Jakariya Emon ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪৪ পিএম says : 0
rashta shobsomoy e chai. Ussed krito baboshaeder ektu khoj neayen jatay tara bikolpo baboshthae income kortay paray.
Total Reply(0)
Jahan Ali ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪৬ পিএম says : 0
First ensure it's sustainability. Any how the hawkers again do not shelter there.
Total Reply(0)
Sohel Rana ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪৬ পিএম says : 0
খুবই সুন্দর লাগছে গোটা ঢাকা শহরের ব্যস্ততম জায়গা গুলো এই রকম হওয়া উচিত।।
Total Reply(0)
Joynal Abedin Shuborno ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪৭ পিএম says : 0
Thanks to mayor said khokhon..
Total Reply(0)
Riyadh Chowdhury ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:৪৭ পিএম says : 0
সরকারের ভালো উদ্ধেক তবে পাশাপাশি গরিব মানুষদের কথাও চিন্তা করতে হবে!
Total Reply(0)
mohammadali ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ৩:২৩ পিএম says : 0
good dhaka
Total Reply(0)
Haque ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৬:২৯ এএম says : 0
Long term solution is to build 5 to 6 storied hawkers market at existing City Corporation Bazar to accommodate floating hawkers. Each square feet cost not more than 600-700 tk. A hawker said that he has to pay 400 tk per day for maximum 50/70 square feet space, it's so really expensive. City Corporation could charge 50/70 square feet per day 200 tk with sanitation, security and facility easily.
Total Reply(0)
md. mahboo alam ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৬:৩৩ পিএম says : 0
priyo mayor, dhaka south city corporation onek shuvo kamona roilo apnar proti. gulistan ke hoker mukto kora shoho apnar shakol proker unnoyn molok kaj amader moto shadharon manusehe onek opokare asche. amra apnar proti onen kritoggho. mohodhoy ami basaboo, shabujbagh e thaki prai 14 bochor. amar sposto mone ache aj theke 12 bochor agee amar 2 bochorer cheleke niea bashaboo khelar mathe shabuj gasher opor football shoho shomoy katate perechi. ajj 10 bochor jabot shey mathe shudhu dhula r dhula. 2 bochorer choto baccha neia durer kotha amora o ajj shekhane shomoy katate pari na. rasta gulite o choto choto Tea stall kore abong kishwka park kore chola chole badha sristy korche. jani apni khub besto thaken tar por o apnake e amara onorudh korchi bishoyti nojore nile abong khelar math o rasta songskar e jotha joth uddog nile amara alakabasi khub upokrito hobo. apni valo thakben shushta thakben mahboob alam
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন