হাসপাতালের প্রিজন সেলে বসেই ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনের জুম মিটিংয়ে অংশ নেয়ার ঘটনায় ১৭ কারারক্ষির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে গত দুই মাসে বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে দায়িত্ব পালন করা ৪ জন প্রধান কারারক্ষিকে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে ৭ জন সহকারী কারারক্ষি ও ৬ জন সাধারণ কাররক্ষির বিরুদ্ধে।
এর আগে, এ ঘটনা তদন্তে গত বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কারা অধিদপ্তর। ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজনস) তৌহিদুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে জড়িত সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন।
কারা সূত্র জানায়, দুই মাস আগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি হন ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের কারাবন্দি ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন। গত মে ও জুনে তিনি হাসপাতালে বসে মোবাইল ফোন ও জুম প্লাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইন মিটিংয়ে অংশ নেন।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার বোস বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর আমাদের নজরে আসে। ওই সময়ে হাসপাতালে কর্তব্যরত কারারক্ষিদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য ১৭ জন কারারক্ষির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেলে দায়িত্ব পালন করা ৪ জন প্রধান কারারক্ষিকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন, ইউনুস আলী মোল্লা, বদিউজ্জামান, আব্দুস সালাম ও আনোয়ার হোসেন। বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে ৭ জন সহকারী কারারক্ষী ও ৬ জন সাধারণ কাররক্ষীর বিরুদ্ধে। তারা হলেন জসীম উদ্দিন, সাইদুল হক খান, বিল্লাল হোসেন, ইব্রাহিম খলিল, বরকত উল্লাহ, এনামুল হক ও সরোয়ার হোসেন। সাধারণ কারারক্ষীরা হলেন, মোজাম্মেল হক, জাহিদুল ইসলাম, আমির হোসেন, কামরুল ইসলাম, শাকিল মিয়া ও আব্দুল আলীম। যদি আরো কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় দুটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বছরের অক্টোবরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে চারবার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও ৯৬ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দি রফিকুল আমীন এখন কারা তত্ত¡াবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আছেন। সেখান থেকেই তিনি ভার্চুয়াল বৈঠক করে ‘নতুন এমএলএম ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা’ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জুম মিটিংয়ে রফিকুল আমীন বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক দিক নির্দেশনা দেন এবং দেশের বাইরে থেকে টাকা আনার বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া সেই মিটিংয়ের নতুন এমএলএম ব্যবসার জন্য শিগগির এক হাজার ৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলছেন তিনি। মিটিংয়ের ভিডিওতে তাকে ‘মিস্টার এ’ নামে দেখা গেছে, প্রোফাইল ছবিতে লেখা ছিল ইংরেজি হরফ ‘আর’। এতে ডেসটিনির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও যুক্ত ছিলেন। এমন অভিযোগ ওঠার পর আট কারারক্ষীকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে। কীভাবে তিনি মোবাইল জোগাড় করে কথা বললেন তা খতিয়ে দেখতেই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন পেলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন