ডেসটিনি, ই-অরেঞ্জ, ইভ্যালির মতো প্রতিষ্ঠানে টাকা বিনিয়োগ করে গ্রাহক নিঃস্ব হওয়ার পরই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। গতকাল সোমবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান এবং বিচারপতি জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চ ওই মন্তব্য করেন।
গতকাল হাইকোর্টের বেঞ্চে অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা বন্ধ চেয়ে রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক চৌধুরী।
শুনানিকালে বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়ে হাইকোর্ট বলেন, আমার বাড়ি কেন অরক্ষিত? আমার বাড়ি মানে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ দরজা জানালা বন্ধ করে শান্তিতে ঘুমাবে। কিন্তু আমার ঘর কেন অরক্ষিত? আমাদের দরজাগুলা কেন খোলা? মানুষের টাকা কেন লুট করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বাইরে? এগুলো বন্ধ করা কাদের দায়িত্ব? এটা আমরা দেখতে চাই। আমরা এটা পরীক্ষা করতে চাই। আমরা এ বিষয়ে দেখেশুনে আদেশ দেবো। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নুর উস সাদিক চৌধুরী বলেন, সরকার যে ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা কিন্তু নয়। এহসান গ্রুপের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইভ্যালির কর্তা ব্যক্তিদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, সরকার তো ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু সেটা কখন? যখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। আমার রেমিডিটা কোথায়? আমার টাকাটা নিয়ে গেল আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। সে থানায় যাবে, জেলে যাবে যাক। কিন্তু আমার টাকাটা যে নিয়ে গেল সেটা কোথায়? আমরা মামলা করার পর চোর ধরা পড়ছে। চুরি তো ঠেকানো যাচ্ছে না।
আদালত প্রশ্ন রেখে বলেন, সরকারের কাজ কী? এ দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন সব কিছু সুপ্রতিষ্ঠিত করা। সেখানে সরকার ঠিক মতো কাজ করছে কি না। এরপর আদালত রিটের আদেশের জন্য আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করেন।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর সারাদেশের গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া অনিবন্ধিত সুদের ব্যবসা বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটে ৬৪ জেলার ডিসি-এসপিকে বিবাদী করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।
রিটকারী আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেন, দেশের প্রত্যেকটি এলাকায়, প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতির নামে সুদের ব্যবসা চলছে। আবার অনেকে ব্যক্তিগত ভাবে ঋণ দেয়ার নামে উচ্চ হারে সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন নিবন্ধন নেই তাদের। সাধারণ মানুষ এসব সুদ কারবারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। তাদের সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে আদায় করা সুদের পরিমাণও আকাশছোঁয়া। ১০ হাজার টাকায় প্রতি সপ্তাহের সুদ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। কোন ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা, মাসে সুদ হিসেবে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন তারা।
তিনি বলেন, অনেক পরিবার অনিবন্ধিতভাবে গজিয়ে উঠা এসব সমবায় সমিতি ও সুদকারবারী থেকে ঋণ নিয়ে সুদের বোঝা টানতে টানতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখের সামনে তারা সুদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সারাদেশের অনিবন্ধিত সুদের সব ধরণের ব্যবস্থা বন্ধ করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছি। রিটে ৬৪ জেলার ডিসি-এসপিকে বিবাদী করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন