দেশে যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে ঠিক তখন পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে চলমান বিধিনিষেধ শিথিল করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সচেতন নাগরিকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লকডাউন শিথিল নিয়ে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকেই কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে।
১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করে মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। একইসঙ্গে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত ফের কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও ৭ দিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
বিধিনিষেধ শিথিল নিয়ে ফেসবুকে জৈষ্ঠ্য সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‘‘এই মূহুর্তে লকডাউন শিথিল করা আত্মঘাতি। করোনা রোগ যখন ভয়াবহভাবে ঊর্ধ্বমুখী সে সময়ে লক ডাউন তুলে নেয়া ভয়াবহ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। খোঁজ নিয়ে দেখে গেছে, বর্তমানে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো ও তার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর শতকরা ৫০ ভাগ লোক করোনা লক্ষণ, উপসর্গে ভুগছেন বা সম্প্রতি ভুগেছেন। কোথাও এ সংখ্যা আরো বেশী। অত্র এলাকার এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে করোনা লক্ষণ উপসর্গের রোগী নেই। কিন্তু বাস্তবতার কারণে তারা এটি স্বীকার করছে না। মৌসুমী ভাইরাস জ্বর বলে চালিয়ে দিয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। মনে সন্দেহ থাকলেও টেস্টও করতে যাচ্ছে না সমাজে আইসোলেট হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আর একারণেই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এই রোগ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে গিয়েছে। শুরুতেই সিজনাল ফ্লু খ্যাত কোভিড ভাইরাস বহনকারীদের পরীক্ষা করে আইসোলেশন করতে পারলে এ পরিস্থিতি অনেকাংশে ঠেকানো যেতো।
ঢাকা সিটি যেখানে দেশের দশভাগের একভাগ লোক বসবাস করে ঘনবসতিপূর্ণভাবে। এখন লকডাউন শিথিলের সুযোগে ঈদের ছুটিতে যদি লক্ষ লক্ষ লোক ঢাকা ছাড়ে এবং এই লোকগুলো যখন ঢাকায় ফিরবে তাদের তাদের একটা বড় অংশ করোনা বোমা হিসেবে ফিরবে। এতে আগস্টের মাঝামাঝি ঢাকা সিটি আল্লাহ না করুন দিল্লীর পরিণতি বরণ করার সম্ভাবনা ব্যাপক। এ ছাড়াও সাধারণত আমরা যেটা দেখে থাকি, ঈদের আগে গ্রামের অভাবী লোকজন বিপুল পরিমাণ ঢাকা শহরে প্রবেশ করে সহায়তার আসায়। এরা ঈদের পরে আবার চলে যায়। লকডাউন শিথিল হলে সে ঝুঁকিও রয়েছে। এদের মাধ্যমেও ঢাকায় করোনা বিস্তার ঘটতে পারে। যদিও ঢাকা শহরের অবস্থাও কোনভাবেই নিরাপদ নয়। তাই ঈদে শপিংমলগুলো খুলে দিলে সেখান থেকেও রোগ সংক্রমণ হতে পারে। যানবাহনগুলোতে যদিও সিঙ্গেল সিটের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতায় এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়, এতে শুধু ৬০-১০০ ভাগ বর্ধিত ভাড়ায় জনগণের পকেট খালি হবে, কিন্তু সিঙ্গেল সিট কেউ মানবে না।
ঈদে কুরবাণীর পশু ক্রয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেটার জন্য সরকার আলাদা ব্যবস্থা নিতেই পারে। জীবন ও জীবিকার যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি ২ কোটি পরিবারের মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার করে টাকা দিয়ে দেয়, তাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। আমাদের রিজার্ভ নাকি বর্তমানে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার। মহামারী মোকাবিলায় এ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ এমন তো বেশী কিছু নয়। এ টাকা তো জনগণেরই টাকা।’’
কামরুল ইসলামের মন্তব্য, ‘‘মানে ১৫ তারিখ থেকে ২৩ তারিখ পর্যন্ত করোনা ঈদ করতে শ্বশুর বাড়ি যাবে। ঈদ শেষ হবার পর আবার ফিরে আসবে। তারমানে লকডাউন করোনা উপদ্রব কমানোর জন্য দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে আর্থিক অনটনের কারণে যাতে নিম্ন আয়ের মানুষও কুরবানি'তে শরীক হতে পারে। করোনা নিয়ে কর্তৃপক্ষের এমন ধান্ধাবাজি এদেশের মানুষও একদিন বুঝবে। তখন বড্ড দেরি হয়ে যাবে।’’
মঈনুল হাসান রাজু লিখেছেন, ‘‘ঈদের পর ১ দিনে সব ফিরতে গিয়ে রাস্তায় যে কত দূর্ঘটনা ঘটবে এর দায়ভার কেউ নেবেনা। বলবে গাদাগাদি করে উঠছেন কেন গাড়ীতে। বাংলাদেশর আমলাদের মত নির্বোধ আমলা পৃথিবীতে ২য় কোন দেশে নেই। অন্তত ১ সপ্তাহ সময় দেয়া উচিৎ ছিলো।’’
লকডাউন শিথিলের সমালোচনা করে রুকু আফ্রিন লিখেছেন, ‘‘কি মজার দেশ আমাদের আহা,,,যখন চারদিকে আক্রান্ত সংখ্যা বাড়ছে মৃত্যু সংখ্যা বাড়ছে সেখানে কঠোর লকডাউন এর বদলে লকডাউন শিথিল করে দেয়া হজ যাতে করে ঈদে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে লোকজন গিয়ে বেশি বেশি আক্রান্ত হয়ে বেশি বেশি মরে যেতে পারে।’’
মোঃ সালাউদ্দিন মীর লিখেছেন, ‘‘আহারে বেচারা করো না অবশেষে গরু কিনার জন্য সরকার করোনাকে ছুটি দিয়েছে ২৩ জুলাই পর্যন্ত আর কাউকে করোনা আক্রমণ করবে না সরকারের সাথে করোনার এমন একটা চুক্তি হয়েছে এমন হাস্যকর ও গাঁজাখুরি বিধি নিষেধ ও লকডাউন দেওয়াও শিথিল করা শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রশাসন মন্ত্রণালয় ও সরকারের দ্বারাই সম্ভব এগিয়ে যান আপনারা দেশের বারোটা বাজিয়ে।’’
আল ইমরান হোসাইন মীর লিখেছেন, ‘‘সকল শ্রমিক বাড়ী যাবে ঈদ করবে ২০-২২পর্যন্ত ছুটি, ২৩তারিখ হতে ৫ তারিখ পর্যন্ত,পরবর্তী ১৪দিন লকডাউন, সকল ফ্যাক্টরী বন্ধ থাকবে,তাহলে তো শ্রমিকদের আর কর্মস্থলে আসতে হবেনা, লকডাউন থাকায় প্রশাসন আসতেও দিবেনা। ব্যাস লকডাউন কার্যকর। মহা প্লান। ‘’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন