ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় এক অসহায় যুবতী দুই দফা ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় আপোষ মীমাংসার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপে গ্রাম ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ভিকটিম পরিবার। বিষয়টি উপজেলার ২নং কুশমাইল ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলেও সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও সচেতন মহল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ অক্টোবর দোকান থেকে ফেরার পথে উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের দিনমজুর গিয়াস উদ্দিনের এক কন্যা(১৫)কে অপহরণ করেন ধর্ষণ করে প্রতিবেশী প্রভাবশালী সুবেদ আলীর পুত্র হান্নান(২৭)। এ ঘটনায় ভিকটিমের মাতা হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও ঘটনার প্রায় ১০ মাসেও গ্রেফতার হয়নি ওই প্রভাবশালী ধর্ষক। উল্টো অসহায় ভুক্তভোগী বাদী পরিবারকে বিষয়টি আপোষ-মীমাংসা করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু আপোষ না হওয়ায় চলতি বছরের ৪ জুলাই বাদীর বাড়িঘরে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ভিকটিমের পিতা, ভগ্নীপতি ও ভাইকে মারপিট করে প্রভাবশালী ধর্ষক হান্নানের লোকজন। এমন দাবি ভিকটিমের বড় বোন রোজিনা আক্তারের।
ভুক্তভোগী পরিবার আরো জানায়, হামলার কয়েক দিন পর ভিকটিমকে আবারও অপহরণ করে ধর্ষণ করে মুরাদ হাসান নামের অপর এক যুবক। এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে ফুলবাড়ীয়া থানায় মামলা দায়ের করলে ধর্ষককে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফুলবাড়ীয়া থানার এস.আই জালাল।
অভিযোগ উঠেছে, ধর্ষক হান্নানের এক মামা পৌরসভার কাউন্সিলর এবং হান্নানের পিতা স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি। ফলে ওই প্রভাবশালী মহল আপোষ-মীমাংসার জন্য সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের আবুল কালাম মেম্বারের মাধ্যমে ভিকটিম পরিবারে চাপ সৃষ্টি করে। এতে অসহায় ভিকটিম পরিবার গ্রামছাড়া হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ভিকটিমের ভগ্নীপতি জাফর মোহাম্মদ জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের চাপে এখন গ্রামছাড়া ভিকটিম পরিবার। শুনেছি কালাম মেম্বার ভিকটিম পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার জন্য সাধারণ মানুষদের ভুল বুঝিয়ে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছে। তিনি আরো বলেন, ধর্ষণের বিচার চেয়ে মামলা করেও বিচার পাচ্ছি না। এখন পরিকল্পিত ভাবে আবার ধর্ষণের ঘটনায় আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা কি বিচার পাব না, বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, প্রথম ধর্ষণ ঘটনায় আপোষের জন্য বসা হয়েছিল কিন্তু বাদী পরিবার রাজী হয়নি। এরপর থেকে আমি আর যাই না, চাপও দেই না। এখন ওই মেয়ে আবার ঘটনা ঘটাইছে। পরে এক লাখ বিশ হাজার টাকা রফা করে আপোষের জন্য আবার শালিসে বসা হয়েছিল। বিবাদী পক্ষ আমার কাছে ৯০ হাজার টাকা জমাও দিয়েছিল কিন্তু আপোষ না হওয়ায় ওই টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এখন বিবাদী পক্ষ যদি গণস্বাক্ষর নেয়, তাহলে আমিও স্বাক্ষর দিব।
ইউপি সদস্য আরো দাবি করে, ভিকটিম পরিবার খারাপ, জঘন্য। এদেরকে এখন গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করার জন্য লোকজন চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিল। আলোচনা চলছে, ইউএনও এবং ডিসির সাথে কথা বলা হবে উচ্ছেদ বিষয়ে।
তবে স্থানীয় ২নং কুশমাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ধর্ষণের ঘটনা শুনেছি। কিন্তু আপোষ-মীমাংসার জন্য বাদী পরিবারকে চাপ দেয়ার বিষয়টি আমি জানি না।
এবিষয়ে ফুলবাড়ীয়া থানার এস.আই মুক্তাদিরুল হাসান জানান, প্রথম ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে, তবে আসামি এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পেয়েছি কিন্তু এখনো সিআইডি রিপোর্ট না পাওয়ায় মামলার চার্জশীট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
অপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জালাল জানান, ভিকটিম বাদী হয়ে থানায় মামলা করার পর ধর্ষক মুরাদ হাসানকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে ভিকটিমের বাড়িঘরে হামলা এবং প্রভাবশালীদের চাপে বাদী পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে বেড়ানোর বিষয়টি জানা নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন