মোবাইল ফোনে মাত্র তিন দিনের পরিচয়। এটুকু সময়ের মধ্যে ফুলতলার মেয়ে মুসলিমা খাতুনের (২০) সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে রিয়াজ (২২)। ২৫ জানুয়ারি রাত ৯ টার দিকে ফোন করে দেখা করার জন্য উত্তরডিহির বাড়ি থেকে ডেকে নেয় কথিত প্রেমিক রিয়াজ ও তার বন্ধু সোহেল (২২)। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে জনৈক মনসুর এর নির্মাণাধীন বাড়িতে নিয়ে দুই ঘন্টা ধরে পাশবিক নির্যাতন চালায় প্রেমিক রিয়াজ ও সোহেল। এ সময় অনেক আকুতি মিনতি জানায় মুসলিমা। এক পর্যায়ে রিয়াজ ও সোহেল তাকে বাড়ি পৌছে দেয়ার কথা বলে ওই বাড়ি থেকে বের হয়। পথিমধ্যে মুসলিমার গলা টিপে ধরে। পরণের শাড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। বিবস্ত্র মৃসলিমাকে পুনরায় তারা ধর্ষণ করে। ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য মৃতদেহ একটি গাছে ঝুলানোর চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়। এরপর রিয়াজ তার বাড়ি থেকে ধারালো বটি এনে তিন কোপে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মাথাটি মনসুররের ওই বাড়িতে রেখে বাকি দেহটি ওখানেই ধানক্ষেতে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে যখন লাশ উদ্ধার হয়, অন্যান্যদের সাথে রিয়াজ ও সোহেলও ঘটনাস্থলে যায় এবং অন্যান্যদের মত মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। লাশ উদ্ধারের দিন রিয়াজ ফরিদপুরে পালিয়ে যায়। রিয়াজ ও সোহেল এ পর্যন্ত অনেক মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। রিয়াজের চার বিয়ে। আগের তিন স্ত্রীকই সে তালাক দিয়েছে।
আজ শনিবার দুপুরে র্যাব-৬ প্রেসব্রিফিংয়ের মাধ্যমে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের বিবরণ দেয়। র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সোহেলকে ফুলতলার উত্তরডিহি গ্রাম থেকে এবং রিয়াজকে ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তি মতে হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো বটি, মুসলিমার স্যান্ডেল ও শাড়ি দিয়ে প্যাঁচানো কাটা মাথা উদ্ধার হয়েছে। তিনি আরো জানান, গত ২৬ জানুয়ারী সকালে খুলনার ফুলতলার উত্তরডিহি গ্রামের রবিউল মল্লিকের ধান ক্ষেত থেকে মুসলিমা খাতুন (২০) নামে এক তরুনীর মস্তকহীন বিবস্ত্র মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে দামোদর গ্রামের মোঃ শহিদুল হকের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও ভ্যান চালক মোঃ এমদাদুল হক গাজীর কন্যা এবং আইয়ান জুট মিলের শ্রমিক। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে তদন্তে প্রতীয়মান হয়। সন্দেহভাজন দুইজনকে গ্রেফতারের পর হত্যা রহস্য উম্মোচিত হয়।
নিহত মুসলিমার বোন আকলিমা খাতুন (২৩) জানান, ২৫ জানুয়ারী মঙ্গলবার রাত আনুমানিক নয়টার দিকে মোবাইলের কল পেয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে মুসলিমা বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরেনি। মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। বুধবার সকালে উত্তরডিহির ধান ক্ষেতে অজ্ঞাত লাশের খবর পেয়ে প্রতিবেশী সালেহা বেগম (৪৫) কে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার বোনের লাশ শনাক্ত করেন। এ সময় লাশের পরনে কোন বস্ত্র ছিল না এবং যৌনাঙ্গ, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান ক্ষত দেখতে পাওয়া যায়। দুই বছর পূর্বে যশোরের প্রেমবাগ এলাকায় জনৈক সাগরের সাথে তার বিয়ে হলেও পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তখন থেকে সে আইয়ান জুট মিলের শ্রমিকের কাজ নেয়।
ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ ইলিয়াস তালুকদার বলেন, তিন বোনের মধ্যে নিহত মুসলিমা ছিল সবার ছোট। তার পিতা মোঃ এমদাদুল হক গাজী পেশায় ভ্যান চালক হলেও শারীরিকভাবে ষ্ট্রোকের রোগী হওয়ায় ঘটনার দিন মঙ্গলবার তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দামোদর ঋষিপাড়া এলাকার মোঃ শহিদুল হকের বাড়িতে প্রায় ১০ বছর ধরে ভাড়া থাকলেও তারা সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার পাশেরখালি গ্রামের বাসিন্দা । নিহত মুসলিমার বোন আকলিমা খাতুন বাদী হয়ে ফুলতলা থানায় অজ্ঞাত ৫/৬ ব্যক্তিকে আসামী করে তার বোনকে হত্যার ঘটনায় মামলা করেন। মামলা নং ১৩।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন