শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

কুরবানি : ফাযায়েল ও মাসায়েল

মীযান মুহাম্মদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১৬ জুলাই, ২০২১, ১২:০১ এএম

কুরবানি এটা আরবি কুরবুন শব্দ থেকে নির্গত। আভিধানিক অর্থে নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ করাই কুরবানির প্রকৃত শিক্ষা ও আহবান। ইসলামে কুরবানির গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক। সংক্ষিপ্তভাবে নি¤েœ কয়েকটি তুলে ধরা হলো।

আল্লাহর কাছে কখনোও এগুলোর (কুরবানিকৃত পশুর) গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা); এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করো এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে পথ প্রদর্শন করেছেন। -সুরা হজ্জ ৩৭

মেশকাতের বর্ণনায় এসেছে, কুরবানির রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল করে নেওয়া হয়। আবু হুরায়রাহ রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তে¦ও কুরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। -সুনানে ইবনে মাজাহ

যায়েদ ইবনে আরকাম রা. থেকে বর্ণিত- সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কুরবানির বিধান কী? উত্তরে তিনি বললেন- এটা তোমাদের পিতা ইব্রাহিম আ. এর সুন্নত। সাহাবিগণ আবার জানতে চাইলেন, এতে আমাদের জন্য কী কল্যাণ রয়েছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- কুরবানিকৃত পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে। সাহাবিগণ বললেন- হে আল্লাহর রাসূল! এর পশম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি পাওয়া যাবে।-সুনানে ইবনে মাজাহ

উম্মু সালামাহ্ রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন (যিলহজ্জ মাসের) প্রথম দশদিন উপস্থিত হয় আর কারো নিকট কুরবানির পশু উপস্থিত থাকে, যা সে যবাই করার নিয়ত রাখে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে। -সহিহ মুসলিম

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে তামাত্তু হজ্জ করতাম এবং সাতজন মিলে একটি গরু কুরবানি করতাম। অনুরূপভাবে একটি উটেও সাতজন শরীক হয়ে কুরবানি করেছি। -সুনানে আবু দাউদ

শাদ্দাদ ইব্ন আউস রা. থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আল্লাহ তায়ালা সকল বস্তুর উপর সদয় আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব যখন তোমরা (কোনো প্রাণী) হত্যা করবে, তখন উত্তম পন্থায় হত্যা করবে, যখন যবেহ করবে, তখনও উত্তম পন্থায় যবেহ করবে। আর তোমাদের প্রত্যেকেরই ছুরিতে ধার দিয়ে নেওয়া উচিত এবং যবেহকৃত জন্তুকে ঠান্ডা হতে দেওয়া উচিত। -সুনানে আন-নাসায়ী,

আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিংওয়ালা দুটি সাদা-কালো বর্ণের ভেড়া কুরবানি করেন, আর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তাকবীর বলেন। আমি দেখেছি তিনি তা যবেহ করছেন নিজ হাতে, তার ঘাড়ের উপর তাঁর নিজ পা রেখে। -সুনানে আন-নাসায়ী

নুবাইশাহ রা. রথেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমরা তোমাদেরকে তিন দিনের অধিক কুরবানির গোশ্ত খেতে নিষেধ করেছিলাম, যাতে গোশ্ত তোমাদের সকলের নিকট পৌঁছে যায়। আল্লাহ তায়ালা এখন তোমাদের অভাব মোচন করেছেন। কাজেই এখন তোমরা তা খাও, জমা করে রাখো এবং দান করে নেকি অর্জন করো। জেনে রেখো, এ দিনগুলো পানাহারের দিন এবং মহান আল্লাহকে স্মরণ করার দিন।-সুনানে আবু দাউদ

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য এবং কুরবানির এই ওয়াজিব আমলটি প্রত্যেকের সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী করার তাওফিক দান করুন। সেই সাথে মনের পশুকে জবাই করে পূর্ণ নি®পাপ জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। কুরবানি বয়ে আনুক আমাদের জীবনে ত্যাগ ও আনুগত্যের শিক্ষা। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন