বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ভরা মৌসুমে ইলিশের আকাল

ঋণে জর্জরিত কমলনগরের ১২ হাজার জেলে

কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২১, ১২:০৮ এএম

মৌসুমের আড়াই মাস পার হয়ে গেলেও লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মেঘনা নদীতে দেখা মিলছেন জাতীয় মাছ ইলিশ। জেলেরা দিন-রাত চেষ্টা করেও নদীতে জাল ফেলে মাছ না পেয়ে ফিরছেন শূন্য হাতে। এতে করে মেঘনা উপকূলীয় এ উপজেলার জেলেপাড়াগুলোতে নেমে এসেছে চরম হতাশা। আশানুরূপ ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলে, আড়তদার ও মৎস্যজীবী শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। ফলে দাদন শোধ ও জীবন ধারণের চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে উপজেলার ১২ সহস্রাধিক জেলে পরিবার।

সরেজমিনে উপজেলার লুধুয়া, কটোরিয়া, তালতলী, বাতিরখাল ও মতিরহাট মাছঘাট ঘুরে দেখা যায়, মৌসুমের আড়াই মাস অতিবাহিত হলেও নদীতে ইলিশ ধরা না পড়ায় জেলেসহ এর সঙ্গে জড়িত সবার জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ সময় সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত সময়কে ইলিশের ভরা মৌসুম হিসেবে মনে করা হয়। এ সময় জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কথা। কিন্তু এ ভরা মৌসুমেও মেঘনায় ইলিশের দেখা মিলছে না। চলছে চরম আকাল। ইলিশের এ আকালে মৎস্য শিকারি জেলেসহ আড়তদার ও মৎস্যজীবী শ্রমিকরা অলস দিন কাটিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। যে কারণে মাছঘাটগুলোতে ব্যবসায়ী ও জেলেদের সমাগম অনেক কমে গেছে। বড় রকমের লোকসান গুনছেন বরফকলের মালিকরাও। হোটেল-রেস্টুরেন্ট, তেল ও সুতা ব্যবসায়ীদের দোকানপাটে আমদানিও কমে গেছে বলে জানিয়েছেন অনেকে। লুধুয়া মাছঘাট এলাকার স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির নেতা আবদুল ওহাব কালু মাঝি জানান, এখানকার বেশিরভাগ জেলে দাদন ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল গড়ে নদীতে নেমেছেন। কিন্তু সারাদিন জাল ফেলেও মাছ না পাওয়ায় তারা নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এখন অনেক জেলে নদীতে যাচ্ছেন না। নদীর তীরে নৌকায় বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন তারা। যে কারণে, তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
লুধুয়া মাছঘাটের জেলে কামাল মাঝি জানান, অনেক আশা করে মহাজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা দাদন নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে যাচ্ছেন। কিন্তু এ ভরা মৌসুমেও নদীতে মাছ পড়ছে না। মহাজনের টাকা ও সাংসারিক খরচ মেটানোর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।
উপজেলার মতিরহাট মাছঘাটের ব্যবসায়ীরা জানান, ওই ঘাটে গত ইলিশ মৌসুমে দৈনিক গড়ে আট থেকে ১০ লাখ টাকার মাছ কেনাবেচা হতো। কিন্তু এখন এক লাখ টাকাও হয় না।
এদিকে, ভরা মৌসুমেও ইলিশের এ আকাল সম্পর্কে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, ডিমওয়ালা মা ইলিশ নিধন, ইলিশের পোনা ধ্বংস ও জাটকা নিধনসহ নদীতে ডুবোচর জেগে ওঠার কারণে ইলিশ তার গতিপথ পরিবর্তন করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস দাবি করেন, মৌসুমের প্রথম আড়াই মাস আশানুরূপ ইলিশ না পাওয়া গেলেও কিছু দিনের মধ্যেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন