বাংলা সাহিত্যের উজ্বল নক্ষত্র নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী অনাড়ম্বরভাবে পালিত হয়েছে। বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে গতকাল সোমবার গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে সীমিত আয়োজনে পালিত হয় তার নবম মৃত্যুবার্ষিকী। কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিল ও কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করেন পাঠক, ভক্তরা।
হুমায়ূন আহমেদ হলেন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র। বাংলাদেশের সাহিত্য তথা সৃজনশীল বইয়ের বাজার যখন ভারতের কোলকাতার বাংলা ভাষার লেখকদের একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল। বাংলাদেশের কবি-সাহিত্যিকদের লেখা পাঠকদের তেমন আকৃষ্ট করতে পারছে না। তখন বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্বল নক্ষত্রের মতো আবির্ভাব ঘটে হুমায়ূন আহমেদের। তিনি একের পর এক উপন্যাস লিখে দেশের যুবক কিশোর, তরুণ-তরুণীদের একদিকে বইমুখী করে তোলেন; অন্যদিকে ভারতের জনপ্রিয় লেখকদের কোণঠাসা করে ফেলেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সৃজনশীল বইয়ের বাজার দখলে নিয়ে কোলকাতার বইয়ের বাজারে জনপ্রিয় হন।
নুহাশপল্লীতে করোনার কারণে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
বাংলা সাহিত্যের বরপুত্র হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকাল থেকে কবর জিয়ারত করতে নুহাশপল্লীতে হাজির হন হুমায়ূন-ভক্তরা। বিধিনিষেধের কারণে লোক সমাগম ছিল অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। সকাল সাড়ে ১০টায় মরহুম লেখকের নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল হুমায়ূন ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে কবর জিয়ারত, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোনাজাতে অংশ নেন।
মোনাজাত পরিচালনা করেন নুহাশপল্লী মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. মুজিবুর রহমান। সেসময় লেখকের রুহের শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়।
করোনার মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের অনেক ভক্ত নুহাশপল্লীতে হাজির হন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারা বরেণ্য লেখকের কবর জিয়ারত করেন। প্রিয় লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নুহাশপল্লীতে আসা টঙ্গী সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রাজন বলেন, পাঠক ধরে রাখার অনন্যসাধারণ কৌশল রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের লেখনীতে। যখন থেকে তার বই পড়া শুরু করেছি তখন থেকেই তার ভক্ত হয়ে গেছি। মন খারাপ হলেই হুমায়ূন স্যারের বই পড়ি।
শিশু সাহিত্য, নাটক, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের সব ক্ষেত্রেই ছিল হুমায়ূন আহমেদের বিচরণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এই শিক্ষক কবিতা দিয়ে লেখালেখি শুরু করলেও তিনি লিখেছেন দুই শতাধিক গল্প ও উপন্যাস। এখনও বাংলা একাডেমির বই মেলায় হুমায়ূন আহমেদের বই বেশিরভাগ পাঠকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকে।
হুমায়ূন আহমেদ টিভি নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’র বাকের ভাই চরিত্রটি নিয়ে মিছিল-সমাবেশের উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছিল। বাংলা সাহিত্যে অনন্য দুটি চরিত্র হিমু ও মিসির আলী তার সৃষ্টি।
হুমায়ূন আহমেদকে বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে অবিহিত করে হিমু পরিবহন গাজীপুরের সদস্য সানজিদা সিমু বলেন, ‘যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন হুমায়ূন স্যারের ভালোবাসা নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। স্যারের সব লেখা পড়তে চাই।’ তিনি শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেটুপুত্র কমলা, শঙ্খনীল কারাগার, শ্যামল ছাড়াসহ অসংখ্য সিমেনা নির্মাণ করেছেন।
নুহাশপল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে নুহাশপল্লীতে এবার স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী সীমাবদ্ধ আয়োজনে পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছর কাঙ্গালিভোজের আয়োজন থাকলেও এবার সেই অর্থ দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।’
ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ৬৪ বছর বয়সে আমেরিকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসংখ্য ভক্তদের রেখে ইন্তেকাল করেন হুমায়ূন আহমেদ। ওই বছরের ২৪ জুলাই গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী গ্রামে নুহাশপল্লীর লিচুগাছ তলায় হুমায়ূন আহমেদকে দাফন করা হয়।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন