হুমায়ূন আহমেদ গত কয়েক দশক ধরে লেখালেখি করে জনিপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছেছেন। তিনি হলেন বিংশ শতাব্দীর বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম ও জনপ্রিয় । বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। সহজ সাবলীল ভাষায় ঘটনার বর্ণনা লেখার কারণে হুমায়ূন আহমেদের বই এর কোনো তুলনা নেই। তিনি ছিলেন বহু গুণের অধিকারী । তিনি ছিলেন ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার।বলা হয়ে থাকে আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি নতুন শৈলীর জনক। হুমায়ূন আহমেদের বইসমূহ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এবং তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত।
সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী এক অনন্য কারিগর। তার সেই উপন্যাসের মধ্যে তিনি লিখেছেন নানা শিশু কিশোর উপন্যাস।আর এই শিশুকিশোর উপন্যাসগুলোর মধ্যে সেরা ৫টি শিশু কিশোর উপন্যাস নিয়ে লিখিত ্রসেরা ৫টি কিশোর উপন্যাসগ্ধ বই । এই বইটিতে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদ এর সেরা পাঁচটি অসাধারণ কিশোর উপন্যাস।আর এই সেরা ৫ টি কিশোর উপন্যাসগুলো হলো - ১। একি কাণ্ড, ২। সূর্যের দিন, ৩।বোতল ভূত, ৪।ভয়ংকর ভূতুরে ও ৫।ছেলেটি। তিনি উপন্যাসের বিষয় এ এনেছেন স্কুলের ছেলেমেয়েদের মনে ভুতের প্রভাব। এমনকি ভূত বলে কিছু নেই, বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির দিনে ভূত-চিন্তা হাস্যকর তাই যেন ফুটিয়ে তুলেছেন সহজ ও সাবলীলভাবে। আরও বুঝাতে চেয়েছেন যে ‹মানুষের অসীম ক্ষমতা। অসাধ্য কাজের জন্য মানুষের ভূতের দরকার হয় না। চেষ্টা ও একাগ্রতা থাকলে সেটা নিজেই করা সম্ভব।
এবার কিশোরদের জন্য লেখা আরও কয়েকটি গল্পের কথা তোলা যেতে পারে। ‹আলাউদ্দিনের চেরাগ› গল্পে দৈত্যের কৃপায় শিক্ষক নিশানাথ সোনার বালতি পায়। কিন্তু তাতে চরিত্র মাহাত্ম্য কোনো দিকেই বিকীর্ণ হয়ে না উঠে গল্প শেষ হয়ে যায়। এমনই রূপকথা ও বাস্তবের মেলবন্ধন আছে ‹বনের রাজা›, ‹হলুদ পরী›, ‹নীল হাতি›, ‹আকাশ পরী› প্রভৃতি গল্পে। ‹জাদুকর› গল্পে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার। আরও রয়েছে ‹স্মৃতিচিহ্ন› একটি কিশোর নাটিকা - যাতে শিশুর করুণা, পিতা মাতার কাব্যপ্রিয়তা এক চমৎকার আবহ নির্মাণ করে। হুমায়ূন প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন শিশুদের জগৎ বুঝতে, শিশু ও বড়োদের মনোজগতের ভিন্নমাত্রাকে ধরতে। তিনি চান রূপকথা, ফ্যান্টাসি থেকে বাস্তব — নানা কিছুর মধ্য দিয়ে শিশুর সুস্থ সূ² মনের উন্মোচন ও ক্রমবিকাশ।
হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মান একুশে পদক ছাড়াও পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক, ওসমানী পদক, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার। কিশোর সাহিত্যে অবদানের জন্য তাঁকে দেওয়া হয়েছে অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কারও। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
হুমায়ূন আহমেদ ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জে তাঁর মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। ২০১২ সালের আজকের দিনে ১৯শে জুলাই দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হুমায়ূন আহমেদ সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন অন্তরালে।গাজীপুরের ‘নুহাশ পলী’-তে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তার এই মৃত্যুর দিনে তাকে স্মরণ করার পাশাপাশি তার সৃষ্টিও স্মরণ করবে ভক্ত ও অনুরাগীরা। তিনি বেঁচে থাকবেন সেইসব পাঠকের অন্তরে ও সৃষ্টিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন