শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তবুও ঢাকায় আসছে মানুষ

কঠোর লকডাউনের ৭ম দিন

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০২১, ১২:০৫ এএম

সিলেটের বাসিন্দা রমজান আলী। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে হলেও বসবাস করেন রাজধানী ঢাকায়। পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। ঈদ করতে বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে আটকা পড়েন। অবশেষে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচে ঢাকায় এসেছেন তিনি। কিভাবে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরলেন; সেই পুরো বিষয়টি গতকাল ইনকিলাবের কাছে তুলে ধরেন তিনি।
তিনি বলেন, তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায়। কিন্তু সপরিবারে তিনি ঢাকার কারওয়ান বাজার এলাকায় বসবাস করেন। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যান। কিন্তু কঠোর লকডাউনের কারণে সেখান থেকে ফিরতে পারছিলেন না। অবশেষে গতকাল ভোরে তিনি ঢাকায় ফিরেছেন।
তিনি জানান, গত সোমবার প্রথমে হবিগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো গাড়ি পাননি। পরে হবিগঞ্জ থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে সিলেট শহরে অবস্থান করেন। সেখানে গিয়ে কদমতলী বাস টার্মিনাল থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে রিকশায় কারওয়ান বাজার আসেন। বাসা পর্যন্ত আসতে মোট সাড়ে তিন হাজার টাকা লেগেছে বলে জানান তিনি।
শুধু রমজান আলীই নয়, সম্প্রতি প্রায় দুশ’ কিলোমিটার বাইসাইকেল চালিয়ে গাবতলী পৌঁছেন যশোরের যুবক রবিন। টানা বিশ ঘণ্টায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গাবতলী এসে বর্ণনা করেন মহাসড়কে তার মহাভোগান্তির ভ্রমণ কাহিনী। এছাড়াও হিউম্যান হলার, ভ্যানগাড়ি আর রিকশায় নেত্রকোনা থেকে উত্তরায় আসেন ফজলুর রহমান নামের আরেক ব্যক্তি। তিনিও প্রায় ১২ ঘণ্টা জার্নি করে ঢাকায় আসেন। এভাবে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকায় আসছেন মানুষ। আর ঢাকায় আসা বন্ধ করা নিয়েও হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
গাবতলী ও আমিনবাজারে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর প্রবেশমুখে গাবতলীর আমিনবাজার ব্রিজের পাশে বসানো হয়েছে পুলিশ চেকপোস্ট। সেখানে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হেঁটে আসা বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোতে এসেছেন কোনও রকম। তবে চেকপোস্টের ঝামেলা এড়াতে গাড়ি সাভারের হেমায়েতপুর বা তারও আগেই নামিয়ে দিচ্ছে। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে হেঁটে আসতে হচ্ছে।
চেকপোস্টে কর্তব্যরতরা বলছেন, অনেকেই বিভিন্ন কারণ-অকারণে রাজধানীতে আসছেন। লকডাউনের মধ্যে এত ঝক্কিঝামেলা নিয়ে ঢাকায় আসার কারণ হিসেবে বেশিরভাগই কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়াকে দেখাচ্ছেন। অবশ্য অযৌক্তিক কারণে কেউ ঢাকায় প্রবেশের চেষ্টা করলে মামলাও দেয়া হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
শুধু আমিনবাজার নয়, রাজধানীর প্রবেশমুখ বুড়িগঙ্গা নদীর পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়েও ঢাকায় প্রবেশ করছেন হাজার হাজার মানুষ। জানা গেছে, লকডাউন উপেক্ষা করে পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ রাজধানীতে ঢুকছে। মানুষের চাপ বেশি হওয়ায় পুলিশও হাল ছেড়ে দিয়েছে। এতে ঢাকায় ফের করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন জানান, তারা বিভিন্ন রুটে সিএনজি-অটোরিকশায় মাওয়া ঘাটে আসেন। ফেরিতে পদ্মা নদী পার হন। মাওয়া ঘাটে নেমে আবার সিএনজি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে কেরানীগঞ্জের পোস্তগোলা সেতুর দক্ষিণ অংশে নামেন। সেতুতে পুলিশের চেকপোস্ট থাকায় হেঁটে সেতু পার হন। পরে পোস্তগোলা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে যান তারা।
গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় পোস্তগোলা সেতু দিয়ে হেঁটে পার হচ্ছিলেন দুই সহোদর আরিফ হোসেন ও মো. হাসান। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল। আরিফ হোসেন জানান, ভোরে বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছেন। সিএনজি, অটোরিকশায় জাজিরা ঘাটে আসেন। ফেরি পার হয়ে মাওয়া থেকে একটি মোটরসাইকেলে ৪০০ টাকায় পোস্তগোলা সেতুর দক্ষিণ অংশে নামেন। পুলিশের ভয়ে মোটরসাইকেল চালক ঢাকায় ঢুকতে রাজি হননি। গোপালগঞ্জ থেকে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে পোস্তগোলা আসেন নাহিদ হাসান। তিনি বলেন, তিনি বাড্ডার একটা কোম্পানিতে চাকরি করেন। লকডাউনেও তারা আগামী শনিবার থেকে অফিস খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই ঝুঁকি নিয়েই তারা ঢাকায় ফিরছেন। পোস্তগোলা ব্রিজের উত্তরাংশে দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশের সার্জেন্ট ফারুক হোসেন। তার সঙ্গে পুলিশের আরও ১০ জন সদস্য রয়েছেন। তারা ঢাকামুখী গাড়ি ঢুকতে এবং বের হওয়া গাড়ির কাগজপত্র দেখভাল করেন। সার্জেন্ট ফারুক হোসেন বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত গণপরিবহন বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু কিছু মাইক্রোবাস যাত্রী পরিবহনের চেষ্টা করছে। গতকাল সকালে এমন দুটি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
শ্যামপুর থানার ওসি মফিজুল আলম বলেন, মানুষ বিভিন্ন উপায়ে ঢাকায় ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের ফিরিয়ে দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। কারণ, পোস্তগোলা থেকে তাদের ফিরিয়ে দিলে বাড়ি ফিরে যাওয়ারও উপায় থাকবে না। তাই আমরা শুধু গণপরিবহন বন্ধ রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছি।
এছাড়াও পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সিলেট বিভাগের মানুষ বসুন্ধরার পাশের ৩০০ ফুট সড়ক ও যাত্রীবাড়ী এলাকা দিয়ে ঢাকায় আসছেন। এইপথে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনও ঢাকায় প্রবেশ করছেন। গতকাল ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ কাফি ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বাসানো হয়েছে। ঈদের পর ঢাকামুখী মানুষের চাপ কম ছিল। কিন্তু এখন মানুষের চাপ বেড়ে গেছে। তবে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মামলা দেয়া হয় এবং জরিমানাও করা হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন