বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দিনে-রাতে আড্ডা

বিধিনিষেধের ৮ম দিনে ঢিলেঢালা লকডাউন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২১, ১২:০৩ এএম

পুলিশকে ম্যানেজ করে খুলছে দোকান চলছে ইজিবাইক
যতোই দিন যাচ্ছে ততই ঢিলেঢালা হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধ। ৮ম দিনে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা থাকলেও পাড়া মহল্লা ছিল সরগরম। সকাল থেকেই বাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। বিকালের দিকে অলিগলির চটপটি ও ফুসকাসহ নানারকম মুখরোচক খাবারের স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানে নগরবাসীকে ভিড় করতে দেখা গেছে। বিশেষ করে গলির মোড়ে মোড়ে ছিল তরুণদের আড্ডাবাজি। তাদের অনেকের মুখে মাস্ক ছিল না। রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই পুলিশকে ম্যানেজ করে দিনরাত দোকান খোলা রাখা হচ্ছে। একইভাবে পুলিশকে চাঁদা দিয়ে চলাচল করছে নিষিদ্ধ যান ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গতকাল সকাল থেকেই ছিল প্রাইভেটকারের চাপ। অবাধে চলাচল করেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক। মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকায় প্রবেশ করছেন। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর চোখের সামনে দিয়েই তারা অবাধে ঢাকায় ঢুকছে। আবার ভ্যানগাড়িতে গাদাগাদি করে ঢাকায় প্রবেশ করছে মানুষ। মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট থাকলেও সেখানে পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। এর আগের দিনও শত শত গাড়ি এই চেকপোস্ট দিয়ে অবাধে প্রবেশ করেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়েও বিভিন্ন অজুহাতে শত শত গাড়ি প্রবেশ করেছে ঢাকায়। তবে ঢাকার অভ্যন্তরে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে তৎপর ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা ছিল খুবই কম। তবে রিকশা চলতে দেখা গেছে। অল্প কিছু মানুষকে জরুরি প্রয়োজনে রাস্তায় দেখা গেছে। ওষুধ অথবা নিত্যপণ্য কিনতে কেউ কেউ ঘর থেকে বের হন। আবার কেউ কেউ হেঁটে গন্তব্যে যান। তবে পাড়া-মহল্লায় দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।
রাজধানীর দনিয়া এলাকায় দেখা গেছে, সকাল থেকেই পাড়ার ভিতরের সব দোকান খুলেছে। রাস্তার ফুটপাতেও বসেছে দোকান। রাস্তা দখল করে ভ্যানগাড়িতে বিক্রি হচ্ছে শাকসবজিসহ রকমারি জিনিসপত্র। বর্ণমালা স্কুল রোডে সকাল থেকেই উঠতি বয়সী তরুণদের আড্ডা দিতে দেখা গেছে। রাত ১১টা পর্যন্ত চলে এ আড্ডা। এলাকাবাসী জানায়, শুধু দোকান নয় এখানকার বেশ কয়েকটি চাইনিজ রেস্টুরেণ্ট সারাদিনই খোলা থাকে। অনামিকা টাওয়ারের বিপরীতে ব্লু-বেরি নামক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সকালেও মানুষজনকে বসে খেতে দেখা গেছে। শনিরআখড়া বাজারের সূর্য্যেবানু রেস্টুরেন্টেও প্রকাশ্যে মানুষজনকে বসে খেতে দেখা গেছে। একজন দোকানদার জানান, কঠোর লকডাউনে পুলিশকে টাকা দিয়েই দোকান খুলতে হয়। টাকা না দিলে পুলিশ এসে বন্ধ করে দেয়। এমনকি ফুটপাতের দোকানগুলো থেকেও পুলিশ প্রতিদিন টাকা তোলে।
অন্যদিকে, রাজধানীর পোস্তগোলা এলাকায় গতকাল বিকালে দেখা গেছে শত শত মানুষের আড্ডা। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে অনেকেই বুড়িগঙ্গা সেতুতে বেড়াতে আসেন। সে কারণে সেখানেও দোকান খুলে বসেছে দোকানিরা। পুলিশের সামনেই শত শত মানুষ এভাবে বুড়িগঙ্গা দর্শন করতে এলেও পুলিশ নীরব। অথচ পুলিশ জানিয়েছে গতকাল ছুটির দিনে ঘুরাঘুরির জন্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৮১জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে, দুপুরের পর রাজধানীর গোপিবাগ এলাকাতেও দেখা গেছে বেশ কয়েকটি দোকান খোলা। একজন দোকানদার বলেন, সব দোকান খোলে না। যারা পুলিশকে টাকা দেয় শুধু তারাই দোকান খুলতে পারে।
অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজধানীর উত্তর ভাষাণটেক এলাকায় গতকাল বিকেল থেকেই শুরু হয় তরুণদের আড্ডা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, মহল্লার দোকানের সামনে চলে আড্ডাবাজি। বাইকে তিনজন করে ওঠে তরুণরা এদিক সেদিক ঘুরেছে। স্বাস্থ্যবিধির কেউই ধার ধারেনি। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মাটিকাটা, পশ্চিম মাটিকাটা, ইসিবি চত্বর ও মানিকদী এলাকা ঘুরে একজন প্রত্যক্ষদর্শী, মোড়ে মোড়ে আড্ডা জমিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চায়ের দোকানে রয়েছে ছোটখাটো ভিড়। টহল পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে এসব চায়ের দোকান। দোকানদারেরা কেউ কেউ শাটার অর্ধেক নামিয়ে রাখছেন।
এমন চিত্র রাজধানীর বিভিন্ন অলিগলিতেও দেখা গেছে। সন্ধ্যার পর অলিগলিতে উপচে পড়েছে মানুষ। অনেকেই মানছে না সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এমনকি মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বহু মানুষকে। বাগানবাড়ি এলাকার মুদি দোকানদার আনোয়ার মিয়া জানান, তার দোকানে বিকেল থেকেই মানুষজন একটু বেশি ভিড় করছেন। বিশেষ করে কোমলপানীয় বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই এসব বিক্রি করছেন। একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা শায়েব বলেন, বিকেল থেকে পোলাপানদের বাইকের রেইসের শব্দে অস্থির হয়ে গেছি। এরা যে কবে মানুষ হবে! এদের বাবা-মায়েরাও কেমন? এভাবে করোনা আতঙ্কের মধ্যে এদের কেন বাইরে বের হতে দিয়েছে- বুঝতে পারি না। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দুই সপ্তাহের এই বিধিনিষেধ কষ্ট করে হলেও সবাইকে মানতে হবে বলে মনে করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, চলমান বিধিনিষেধ কষ্ট করে হলেও মানতেই হবে। কারণ এখন ডেঞ্জার লেভেলের অনেক ওপরে আছি। সংক্রমণ হার ৫ শতাংশের নিচে নামতে হবে ও মৃত্যু দৈনিক ৫০ জনের নিচে নামতে হবে। তা না হলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না। এখন যদি বিধিনিষেধ মানি, তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে ১৪ দিনের বেশি লাগতে পারে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিকের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি নির্দেশনার বাইরে কোনো যানবাহনকে রাস্তায় চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা কঠোর অবস্থানে থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছি। মিরপুর এলাকার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্টে পরিবহণের গতি রোধ করা হয়। সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণ দিতে না পারলে সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়।
এদিকে শুক্রবার বিনা প্রয়োজনের ঘর থেকে বের হওয়া ও লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করায় ঢাকায় ৩৮১জন কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে পাড়া মহল্লায় অভিযান চালালে এর কয়েকগুণ বেশি গ্রেফতার হবে বলে ভুক্তভোগিদের ধারনা।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন