সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

হাদীসের আলোকে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল হামীদ | প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৭ এএম

মুসলিম জাতি যখন বিশ্বের সকল শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে সেরা শক্তিতে পরিণত, তখনো সহনশীলতা ও ক্ষমার বিধান থেকে একটুও সরে যায়নি। বরং বিজয়ের বিস্তৃতির সাথে সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর রহমতের বিস্তৃতিও ব্যাপকতর হয়েছিল। যার ফলে আল্লাহ তাআলাও তার নুসরত ও রহমতের বারিধারা মুষলধারে বর্ষণ করতে শুরু করেন।
ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুলসমানগণ মোকাবেলায় সক্ষম হওয়া সত্তে¡ও ইসলামের স্বার্থে বাহ্যত অবমাননাকর সন্ধি মাথা পেতে মেনে নিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাআলা একে সুস্পষ্ট বিজয় হিসেবে কবুল করেন।
ইসলামবিদ্বেষী শত্রুদের কেন্দ্রীয় ঘাঁটি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাতৃভূমি পবিত্র শহর মক্কা যেদিন মুসলমানরা জয় করেছিল সেদিন চিহ্নিত জালিমরা এদিক ওদিক ছুটছিল। তারা মসজিদুল হারামে দলে দলে জমায়েত হতে লাগল। সকলে কাতারবন্দী হয়ে নিজেদের শেষ পরিণতির ক্ষণ গুণছিল। এ শোচনীয় পরাজয়ের লাঞ্ছণা ও অবমাননার গ্লানিতে তারা ন্যুব্জ হয়ে পড়েছিল। এমনি সময়ে রহমতের নবী সেখানে প্রবেশ করেন। হারাম শরীফের দরজার কপাটে দাঁড়িয়ে তিনি সে রায়ই ঘোষণা করেন যা ইউসুফ আ. তাঁর ভাইদের ব্যাপারে ঘোষণা করেছিলেন। বলেছেন, ‘তোমাদের বিরুদ্ধে আজ কোনো অভিযোগ নেই। যাও, তোমরা মুক্ত।’
যুদ্ধ-সম্রাট আবু সুফিয়ানের যখন শুভবুদ্ধির উদ্রেক হল তখন তিনিও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আত্মসমর্পণ করলেন। নবীজী তাকে শুধু ক্ষমাই করলেন না, ঘোষণা করলেন, যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নেবে তারাও নিরাপদ। রাসূলের এ মহানুভবতা আবু সুফিয়ানের হিংসাকে চিরতরে বিনাশ করে দেয়। তিনি খালেস মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান। -আসসীরাতুন্নবিয়্যাহ পৃ. ৩৪৯; যাদুল মা‘আদ, ১/৪২১
আজ শান্তি ও দয়া প্রদর্শনের দিন
আনসার প্রধান সা’দ ইবনে উবাদা রা. শত্রুদের বিপন্ন অবস্থা দেখে বিজয় আনন্দে বলে ওঠেছিলেন, ‘আজ প্রচন্ড লড়াইয়ের দিন, আজ কাবার সীমানায় সব কিছু বৈধ হবে, আজ আল্লাহ তাআলা কুরাইশদের অপমান করেছেন।’ সা’দের এ কঠোর ঘোষণা নবীজী সা. এক দারুণ শিল্পীত ভঙ্গিতে খন্ডন করে ক্ষমার বাণী শোনালেন। ঘোষণা করলেন, ‘আজ তো পরম দয়া ও ক্ষমা প্রদর্শনের দিন, আজ আল্লাহ তাআলা কুরাইশদের সম্মানিত করবেন এবং কাবার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। -আসসীরাতুন্নবিয়্যাহ পৃ. ৩৫২
সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের মাঝে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিয়ে বললেন, আজ শুধু তারাই বঞ্চিত হবে যারা নিজেরাই নিরাপত্তা লাভে ইচ্ছুক নয় এবং যারা নিজেদের জীবন নিয়ে বিতৃষ্ণ। ব্যাপক নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়ে নবী বলেন, যে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, যে আপন ঘরের দরজা বন্ধ করবে সে নিরাপদ, যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সেও নিরাপদ। -সীরাতে ইবনে হিশাম ২/৪০৯
ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার প্রত্যক্ষ ফল এ ক্ষমা প্রদর্শনের ফল এ দাঁড়াল যে, ইসলামী রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ শত্রুদের হাত থেকে নিরাপদ হয়ে গেল। শত্রু বন্ধুতে পরিণত হল। অসংযমী পরহেযগার হয়ে গেল। বাঁধার সকল প্রাচীর ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল। আল্লাহ তাআলা তাঁর নুসরাতের সকল দ্বার উন্মোচন করে দিলেন। দলে দলে মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে শুরু করল।
এ মহানুভবতার বদৌলতেই মূলত মুসলিমবিরোধী সকল কার্যক্রমে নেতৃত্ব দান করা আবু সুফিয়ান রা., নবীজী প্রিয় চাচার সাথে পশুসুলভ আচরণ করা তার স্ত্রী হিন্দা রা., চাচার হত্যাকারী ওয়াহশী রা., আবু জেহেলের ছেলে ইকরামা রা. প্রমুখ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামকে আঁকড়ে ধরতে উৎসাহ পেয়েছিলেন। মুসলমানদের সে সোনালী অতীত আবারও ফিরে পেতে হলে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার গুণে মুসলমানদের গুণান্বিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ ৫ আগস্ট, ২০২১, ১০:২৪ পিএম says : 0
আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন ৷
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন