সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

হাদীসের আলোকে ইহসান

মাওলানা মুহাম্মাদ বিন ইমরান | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

কোরআন মাজীদে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইহসানের যে আদেশ করেছেন, তার বিশ্লেষণ ও বাস্তব প্রয়োগ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস ও সুন্নাহ্য় উল্লেখিত ও পরিস্ফুট হয়েছে। তাই ইহসান সম্পর্কিত মৌলিক তিনটি হাদীস উল্লেখ করা হলো :
১. শাদ্দাদ ইবনে আওস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : আল্লাহ তাআলা সবকিছুর ওপর ইহসানকে অবধারিত করেছেন। অতএব তোমরা (হত্যার উপযুক্ত কাউকে) হত্যা করলে সুন্দরভাবে হত্যা করো এবং (কোনো পশু) জবাই করলে সুন্দরভাবে জবাই করো। জবাইকারী যেন তার ছুরি ধার করে নেয় এবং জবাইয়ের পশুকে শান্তি দেয়। (সহীহ মুসলিম : ১৯৫৫)।

২. উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদীস, যা ‘হাদীসে জিবরীল’ নামে পরিচিত। তাতে রয়েছে- একদা সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট বসা ছিলেন। এমন সময় জিবরীল আলাইহিস সালাম মানুষের আকৃতিতে এলেন। সাহাবায়ে কেরামের কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। তিনি নবী (সা.)-এর সামনে এসে বসলেন এবং তাঁর হাঁটুর সঙ্গে হাঁটু মিলিয়ে দিলেন। এরপর তাঁকে দ্বীন সম্পর্কে কয়েকটি প্রশ্ন করলেন। একটি প্রশ্ন করলেন ইহসান সম্পর্কে।

উত্তরে নবী (সা.) বললেন : ইহসান এই যে, তুমি আল্লাহর ইবাদত এমনভাবে করবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। যদি তুমি তাঁকে নাও দেখ, তবে তিনি তো তোমাকে অবশ্যই দেখছেন। (সহীহ মুসলিম : ৮।
৩. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন : আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন- তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজ করে, সে যেন তা নিখুঁতভাবে করে। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, খ. ০৪, পৃ. ২৫৩ : ৪৩৬৯)।
এই হাদীসগুলো থেকে আমরা কয়েকটি বিষয় জানতে পারি : ক. সবার প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ: এটি ইহসানের মৌলিক একটি দিক। খ. ইবাদতের মাঝে ইখলাস পয়দা করা এবং আল্লাহর ধ্যান-খেয়াল অন্তরে জাগ্রত রাখা : এটি ইবাদত সংশ্লিষ্ট ইহসানের অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। এর গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, নবী (সা.) জিবরীল আ.-এর প্রশ্নের জবাবে ইহসানের এই দিকটিই তুলে ধরেছেন।

এর দ্বারা অন্তরে আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব, মহত্ত্ব, মর্যাদা ও ভয় জাগ্রত হয়। ফলে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, আমলে ইখলাস পয়দা করা এবং সুন্দর ও সুচারুরূপে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করা এবং ইহসানের অন্যান্য দিক আঞ্জাম দেয়া সহজ হয়।

এই হাদীসে বিশেষভাবে ইবাদতের কথা বলা হয়েছে যে, ইবাদতে এই ধ্যান-খেয়াল জাগ্রত রাখবে। কেননা জীবনের মূল উদ্দেশ্যই তো আল্লাহ তাআলার ইবাদত। তবে এই বিধান শুধু ইবাদতের নয়; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের। তাই সর্বাবস্থায় অন্তরে এই চিন্তা জাগ্রত রাখবে। চেষ্টা করবে, এটা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। কোরআন মাজীদে আমাদেরকে এই নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : তোমরা যেখানেই থাক, তিনি তোমাদের সাথে আছেন এবং তোমরা যা-কিছুই কর, তিনি তা দেখেন। (সূরা হাদীদ : ৪)।

আরো ইরশাদ হয়েছে : তুমি কি দেখনি আকাশম-লী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহ জানেন? কখনও তিনজনের মধ্যে এমন কোনো গোপন কথা হয় না, যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি না থাকেন। এবং কখনো পাঁচজনের মধ্যে এমন কোনো গোপন কথা হয় না, যাতে ষষ্ঠজন হিসেবে তিনি না থাকেন। এমনিভাবে তারা এর কম হোক বা বেশি, তারা যেখানেই থাকুক, আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। অতঃপর কিয়ামতের দিন তিনি তাদেরকে অবহিত করবেন- তারা যা কিছু করত। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। (সূরা মুজাদালা : ৭)।
এ ধরনের আরো অনেক আয়াত কোরআন মাজীদে আছে। এগুলো নিয়ে যদি আমরা চিন্তা-ভাবনা করি এবং মোরাকাবা অব্যাহত রাখি তাহলে ইনশাআল্লাহ একসময় তা আমাদের অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যাবে এবং এর ফায়দা ও বরকত আমাদের জীবনে উপলব্ধি করব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন- আমীন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
মোঃ কামরুজ্জামান ২০ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
মহান রাব্বুল আল আমিন সৃষ্টি করেছেন কুল কায়েনাত। সৃষ্টি করেছেন মানবকুল। প্রেরণ করেছেন নবী-রাসুল। শেষ জামানার মানুষের পথপ্রদর্শক হিসেবে পাঠিয়েছেন স্বীয় প্রিয় হাবিব মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে। দান করেছেন শ্রেষ্ঠ জীবন বিধান আল কোরআন।
Total Reply(0)
বিধান কবিরাজ ২০ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৮ এএম says : 0
ইহসানের মূল বক্তব্য হলো—ক্রোধ, লোভ, মোহ, হিংসা-বিদ্বেষ, গিবত, অপবাদ, মিথ্যা অহংকার ইত্যাদি মন্দ স্বভাব থেকে পাক-পবিত্র থাকা এবং ইখলাস, আমানতদারী, বিনয় ও নম্রতা, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি উত্তম চরিত্রের দ্বারা নিজেকে সুশোভিত করা।
Total Reply(0)
জাকির হোসেন ২০ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
আত্মাই দেহ পরিচালনা করে, দেহ আত্মাকে নয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানুষের শরীরে একটি গোশতের টুকরা আছে। তা ঠিক থাকলে গোটা শরীর সুস্থ থাকে। আর তা বিনষ্ট হলে গোটা শরীরই ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে যায়। জেনে রাখো, ওই গোশতের টুকরাটি হলো মানুষের কলব বা আত্মা।’ (বুখারি, হাদিস : ৫২)
Total Reply(0)
নিলিমা জাহান তনুশ্রী ২০ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
মানুষের নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার উন্নতি সাধন এমন এক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যার পূর্ণতা বিধানের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সচ্চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৯৫২)।
Total Reply(0)
হিম সাগর ২০ নভেম্বর, ২০২১, ১:২৯ এএম says : 0
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
Total Reply(0)
মুহাম্মাদুল্লাহ ২১ নভেম্বর, ২০২১, ১১:১৩ এএম says : 0
লেখাটি প্রথমে মাসিক আলকাউসারের নভেম্বর ২০২১ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। এটি মূলত 6 পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ। এখানে তার কিছু কথা ছাপা হয়েছে। সেখানে শিরোনাম হলো "আলকুরআনে ইহসান ও মুহসিন"। তাছাড়া এখানে লেখকের নাম ভুল হয়েছে। লেখকের নাম মাহমুদ বিন ইমরান।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন