* সিফফীন যুদ্ধকালে ৩৯ হিজরিতে হযরত আলী (রা:) ফোরাত সংলগ্ন অঞ্চলের দিকে আগমন করলে কারবালার নাম শ্রবণ করে ক্রন্দন করতে লাগলেন। লোকেরা এরূপ ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন : জিবরীল (আ:) আমাকে জানিয়েছেন যে, হুসাইন (রা:) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা নামক স্থানে শহীদ হবে। তিনি এক মুষ্টি কারবালার মাটি নিয়ে আমাকে ঘ্রাণ নিতে বলেছিলেন। এ কারণেই আমি কাঁদছি।”
এই বর্ণনা অনুযায়ী হযরত আলী (রা:) কারবালার ময়দান অতিক্রমকালে এক স্থানে থামেন, সালাত আদায় করেন এবং বলেন : এখানে তাদের উট বসে পড়বে। এখানে তাদের হাওদাহসমূহ রাখা হবে। এখানেই তাদের রক্তপাত ঘটানো হবে। রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর রক্ত সম্পর্কিত বংশের কিছু বীরপুরুষ এখানে নিহত হবে। তাদের জন্য আকাশ-বাতাস ক্রন্দন করবে। (আয্ যাহাবী : সিয়ারু আলামীন নুবালা : তৃতীয় খÐ, পৃ: ১৯৪-১৯৫; আস্ সাওয়াইকুল মুহারিকা: পৃ: ১৯২; কিতাবুস সিফফীন: পৃ: ১৪০, ১৪২ ইসলামী বিশ্বশেষ : সপ্তম খÐ, পৃ: ২৪৪)।
* রাজীন হতে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে সালমা (রহ:) হাদিস বর্ণনা করে বলেন, আমি উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালামাহ (রা:)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন : আমি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) কে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি কাঁদছেন। তার মাথা মোবারক ও দাড়ি মোবারকে ধুলো-বালি লেগে আছে। আমি আরজ করলামÑ ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা:) আপনার কী হয়েছে? তিনি বললেন : আমি এইমাত্র হোসাইন (রা:)-এর শাহাদাৎস্থলে উপস্থিত হয়েছিলাম। (হাকেম : আল মুস্তাদরেক ৪/২০; আয যাহাবী : আত্ তালীক মিন তালখীছ, ৬৭৬৪; জামেয়ে তিরমিজী: ৩৭৭১; তিবরানী : মুজামুল কাবীর, ৮৮২; আস্ সুয়ূতী : তারীখুল খুলাফা, পৃ: ২০৮)।
* হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘দুপুর বেলা আমি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলাম ধূলিমলিন, এলোকেশ অবস্থায় দেখলাম। তার হাতে রক্তভর্তি একিট বোতল ছিল। আমি আরজ করলাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক, হে আল্লাহর রাসূল এটা কি? তিনি বললেন : এটা হোসাইন (রা:) এবং তার সাথীবর্গের রক্ত। আজ পর্যন্ত আমি তা কুড়িয়ে রেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সেই দিনটি গণনা করলাম। সবাই দেখল যে, তিনি (হযরত হোসাইন (রা:)) সে দিনই শাহাদাৎ বরণ করেছেন”। (মোসনাদে আহমদ : ২২৫৩; বায়হাকী : দালায়েলুন্ নাবুত্তয়্যাত ৬/৪৭১-এর বর্ণনাসূত্র সহীহ মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ)।
* পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বংশধারা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (রা:) হতেই বিস্তৃত হয়েছে। এই বংশধারাকেই ‘আলে মোহাম্মাদ’ রূপে শনাক্ত করা হয়। হযরত ফাতিমা (রা:) ব্যতীত অন্য কোনো সন্তান হতে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পরবর্তী বংশধারা নেই। এর দু’টি শাখা, একটি হযরত হাসান (রা:) হতে, অপরটি হযরত হোসাইন (রা:) হতে। এই ভ্রাতৃদ্বয়ই জান্নাতের যুবকদের সর্দার ও নেতা হিসেবে নির্ধারিত। (শারহু ফিকহে আকবার : ১১০)।
* আজ আমরা শোহাদায়ে কারবালার জন্য প্রাণ খুলে এই দোয়া করব, “হে আল্লাহ! আপনি তাদের নৈকট্য ও মানজেলাতের আ’লা হতে আ’লা দারাজাত দান করুন এবং আমাদের সত্যাশ্রয়ী জীবনযাপনের খাস তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন!’’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন