বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

শাহাদাতে হোসাইন (রা.) : আকাশ বাতাস কাঁদে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৬ এএম

* সিফফীন যুদ্ধকালে ৩৯ হিজরিতে হযরত আলী (রা:) ফোরাত সংলগ্ন অঞ্চলের দিকে আগমন করলে কারবালার নাম শ্রবণ করে ক্রন্দন করতে লাগলেন। লোকেরা এরূপ ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন : জিবরীল (আ:) আমাকে জানিয়েছেন যে, হুসাইন (রা:) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা নামক স্থানে শহীদ হবে। তিনি এক মুষ্টি কারবালার মাটি নিয়ে আমাকে ঘ্রাণ নিতে বলেছিলেন। এ কারণেই আমি কাঁদছি।”

এই বর্ণনা অনুযায়ী হযরত আলী (রা:) কারবালার ময়দান অতিক্রমকালে এক স্থানে থামেন, সালাত আদায় করেন এবং বলেন : এখানে তাদের উট বসে পড়বে। এখানে তাদের হাওদাহসমূহ রাখা হবে। এখানেই তাদের রক্তপাত ঘটানো হবে। রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর রক্ত সম্পর্কিত বংশের কিছু বীরপুরুষ এখানে নিহত হবে। তাদের জন্য আকাশ-বাতাস ক্রন্দন করবে। (আয্ যাহাবী : সিয়ারু আলামীন নুবালা : তৃতীয় খÐ, পৃ: ১৯৪-১৯৫; আস্ সাওয়াইকুল মুহারিকা: পৃ: ১৯২; কিতাবুস সিফফীন: পৃ: ১৪০, ১৪২ ইসলামী বিশ্বশেষ : সপ্তম খÐ, পৃ: ২৪৪)।

* রাজীন হতে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, আমার কাছে সালমা (রহ:) হাদিস বর্ণনা করে বলেন, আমি উম্মুল মুমেনীন হযরত উম্মে সালামাহ (রা:)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি তখন কাঁদছিলেন। আমি জিজ্ঞাস করলাম, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন : আমি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) কে স্বপ্নে দেখলাম যে, তিনি কাঁদছেন। তার মাথা মোবারক ও দাড়ি মোবারকে ধুলো-বালি লেগে আছে। আমি আরজ করলামÑ ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা:) আপনার কী হয়েছে? তিনি বললেন : আমি এইমাত্র হোসাইন (রা:)-এর শাহাদাৎস্থলে উপস্থিত হয়েছিলাম। (হাকেম : আল মুস্তাদরেক ৪/২০; আয যাহাবী : আত্ তালীক মিন তালখীছ, ৬৭৬৪; জামেয়ে তিরমিজী: ৩৭৭১; তিবরানী : মুজামুল কাবীর, ৮৮২; আস্ সুয়ূতী : তারীখুল খুলাফা, পৃ: ২০৮)।

* হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘দুপুর বেলা আমি পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে স্বপ্নে দেখলাম ধূলিমলিন, এলোকেশ অবস্থায় দেখলাম। তার হাতে রক্তভর্তি একিট বোতল ছিল। আমি আরজ করলাম, আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গিত হোক, হে আল্লাহর রাসূল এটা কি? তিনি বললেন : এটা হোসাইন (রা:) এবং তার সাথীবর্গের রক্ত। আজ পর্যন্ত আমি তা কুড়িয়ে রেখেছি। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সেই দিনটি গণনা করলাম। সবাই দেখল যে, তিনি (হযরত হোসাইন (রা:)) সে দিনই শাহাদাৎ বরণ করেছেন”। (মোসনাদে আহমদ : ২২৫৩; বায়হাকী : দালায়েলুন্ নাবুত্তয়্যাত ৬/৪৭১-এর বর্ণনাসূত্র সহীহ মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ)।

* পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর বংশধারা খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা (রা:) হতেই বিস্তৃত হয়েছে। এই বংশধারাকেই ‘আলে মোহাম্মাদ’ রূপে শনাক্ত করা হয়। হযরত ফাতিমা (রা:) ব্যতীত অন্য কোনো সন্তান হতে রাসূলুল্লাহ (সা:)-এর পরবর্তী বংশধারা নেই। এর দু’টি শাখা, একটি হযরত হাসান (রা:) হতে, অপরটি হযরত হোসাইন (রা:) হতে। এই ভ্রাতৃদ্বয়ই জান্নাতের যুবকদের সর্দার ও নেতা হিসেবে নির্ধারিত। (শারহু ফিকহে আকবার : ১১০)।

* আজ আমরা শোহাদায়ে কারবালার জন্য প্রাণ খুলে এই দোয়া করব, “হে আল্লাহ! আপনি তাদের নৈকট্য ও মানজেলাতের আ’লা হতে আ’লা দারাজাত দান করুন এবং আমাদের সত্যাশ্রয়ী জীবনযাপনের খাস তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন!’’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Md. Mofazzal Hossain ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৩১ এএম says : 0
ইবন হিশামের বর্ণনা মতে, হোসাইনের (রা.) ছিন্ন মস্তক যখন ইয়াজিদের দরবারে হাজির করা হলো তখন ইয়াজিদের দু’চোখ অশ্রুসজল হয়ে উঠেছিল। সে বলেছিলো, হোসাইনকে হত্যা করা ছাড়াও তোমাদের আনুগত্যে আমি সন্তুষ্ট হতাম। (প্রাগুক্ত,পৃ-১৯১)
Total Reply(0)
Imam Hossain ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৩১ এএম says : 0
হোসাইনের (রা.) বিরুদ্ধে যারাই অস্ত্র ধারণ করেছে তাদের সকলেই জঘন্যভাবে নিহত হয়েছে, কেউ পাগল হয়ে গিয়েছে।
Total Reply(0)
Badal Sikdar ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৩১ এএম says : 0
হজরত হোসাইনের (রা.) বিরুদ্ধে যারাই অস্ত্র ধারণ করেছে এবং তার হত্যায় যাদের ভূমিকা ছিল পরবর্তীতে তাদের সকলে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল।
Total Reply(0)
Ibrahim Kholil ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১:৩২ এএম says : 0
জাফর ইবন মুহাম্মদ বলেন, নিহত হওয়ার সময় আমরা হোসাইনের শরীরে ৩৩ টি বর্শাঘাত এবং ৩৪ টি তরবারির আঘাত দেখতে পেয়েছি।
Total Reply(0)
গিয়াস উদ্দিন ১৯ আগস্ট, ২০২১, ১১:৩২ এএম says : 0
অনেক সুন্দর একটি লেখা । লেখক ও দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন