মোটা অঙ্কের মুক্তিপণের জন্য মা ও ছেলেকে অপহরণকারী সিআইডি’র এএসপি ও এসআইসহ চারজনকে জনতার সহায়তায় আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত অপহৃত ও অপহরণকারীদের দিনাজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। অপহরণকারীরা হলেন- রংপুর সিআইডি অফিসের এএসপি সারোয়ার কবির সোহাগ, এসআই হাসিনুর রহমান, কনস্টেবল আহসানুরল হক ও একজন গাড়ি চালক।
এ ব্যাপারে দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। অপরদিকে সিআইডি রংপুর অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, দিনাজপুরে আটককৃতরা সিআইডি রংপুর অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তবে তারা অফিসিয়ালী কোন এসাইনমেন্টে যায়নি। যদি ঘটনা সঠিক হয়ে থাকে তবে তার দায় ভার তাদের ব্যাক্তিগত, সিআইডি’র নয়।
জানা গেছে, গত সোমবার দিনগত রাত ১২টার দিকে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ৫নং আবদুলপুর ইউনিয়নের নান্দেড়াই গ্রামের সোলেমান শাহ মহল্লার জনৈক লুৎফর রহমানের বাসায় ১০ থেকে ১২ জন সাদা পোষাকধারী প্রবেশ করে। এ সময় তারা তাদেরকে সিআইডি পরিচয় দেয়। তারা বাড়ীর আলমারী ভঙচুর করে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় তারা বাসায় থাকা লুৎফর রহমানের স্ত্রী জহুরা বেগম (৪৫) ও ছেলে জাহাঙ্গীর (২৬) নিয়ে যায়। বোরকা পড়তে দেরী হওয়ায় অপর আরেকজন মহিলাকে তারা ছেড়ে চলে যায়। পরে বাসার লোকজন স্থানীয় থানা, দিনাজপুরের ডিবি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন কোন অভিযান চালানো হয়নি।
এভাবে রাত গড়িয়ে সকাল হলে অপহৃত জাহাঙ্গীরের মোবাইল নম্বর থেকে বাসায় ফোন করে অপহরণকারীরা। তারা ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে অপহৃতদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। দর কষাকষির এক পর্যায়ে ৮ লাখ টাকায় রফাদফা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে প্রথমে রানীরবন্দর, পরে ১৩ মাইল গড়েয়া এভাবে স্থান পরিবর্তন করতে থাকে অপহরণকারীরা। এর মধ্যে বাসার লোকজন পুলিশ প্রশাসনকে জানালে তারা মুক্তিপনের টাকা দেয়ার সময় তাদেরকে আটকের পদক্ষেপ নেয়।
শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে টাকা নিয়ে আসতে বলা হয়। এ সময়ে পুলিশের পাশাপাশি অপহৃতদের স্বজনেরা মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে রাস্তাসহ পুরো এলাকায় অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার আগে কালো রংয়ের মাইক্রোবাস নিয়ে টাকা নিতে আসে অপহরণকারীরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করলে ওৎ পেতে থাকা স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন ধাওয়া করে ১০ মাইল এলাকায় তাদের আটক করে। উত্তম মধ্যম দেয় অপহরণকারীদের। মাইক্রোবাস থেকে উদ্ধার করা হয় জোহরা বেগম ও জাহাঙ্গীরকে। পরে তাদের চিরিরবন্দর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ ঘটনায় অপহৃত জাহাঙ্গির আলম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
রংপুর সিআইডি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আতোহার রহমান জানান, এএসপি সোহাগ সর্বশেষ ২৩ আগস্ট অর্থাৎ অপহরণের দিন অফিস করেছেন। এসআই হাসিনুর ও কনস্টেবল আহসানুল ২১ আগস্ট থেকে ছুটিতে রয়েছেন। এছাড়া এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোন থানায় মামলা নেই এবং অফিসিয়ালি কোন এসাইনমেন্টও ছিল না।
এদিকে গতকাল বুধবার আটক ৪ জনকে সিনিয়র চিফ-জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসুর আদালতে হাজির করা হলে তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়। অন্যদিকে এ ঘটনায় চিরিবন্দরে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত পলাশ নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পলাশের জবানবন্দী রেকর্ড করা হচ্ছিল।
একটি সূত্র দাবি করেছে, গত মার্চ মাসে শফিউল আলম সিআইডি রংপুর কার্যালয়ে অপহৃত জোহরা বেগমের স্বামী লুৎফর রহমানকে দেয়া ৩০ লাখ টাকা ফেরত না দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন। তবে এই অভিযোগটি অফিসিয়ালী রিসিপ্ট বা ডোকেট করা হয়নি বলে সিআইডি’র সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়া থানায় এজাহার দাখিলের পর প্রসিডিয়র মেনটেন্ট করে যে কোন মামলার ছায়া তদন্ত বা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে পারে। তদন্তের ভার না থাকলে স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে অভিযুক্তদের আটক করতে পারে। মামলা ছাড়া সিআইডি’র কোন কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে কাউকে গ্রেফতার করার বিষয়টি এখতিয়ার বহিভ‚ত বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মত প্রকাশ করেছে।
অপরদিকে লুৎফর রহমানকে ৩০ টাকা প্রদানের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেননা লুৎফর রহমান একজন ভাঙ্গা লোহা লংকর ব্যবসায়ী। ফলে এর পিছনে বড় ঘটনা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন