দেশের বৃহত্তর জনসংখ্যা অধ্যুষিত ফটিকছড়িতে আওয়ামীলীগের একাংশ কর্তৃক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকীর কর্মসূচী পালনে বাধা হিসেবে পাল্টা কর্মসূচী দেয় ছাত্রলীগ! এ নিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ১৪৪ ধারা জারি করে ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসন। ফলে শুক্রবার যথাস্থানে কর্মসূচী পালন করতে না পেরে ক্ষুব্ধ আ’লীগের একাংশ সংবাদ সম্মেলন করে ‘প্রশাসনকে দেউলিয়া বলে’ আখ্যায়িত করেছে। ১৪৪ ধারা জারির ফলে ছাত্রলীগও তাদের পাল্টা কর্মসূচী প্রত্যাহার মর্মে ঘোষণা দিয়েছে।
জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলা আ’লীগের একাংশ ২৭ আগষ্ট (শুক্রবার) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন করতে ২৩ আগষ্ট ফটিকছড়ি কলেজ মিলনায়তন ব্যবহারের জন্য ইউএনও হতে লিখিত অনুমতি নেয়। পরে কর্মসূচী সফলে ব্যাপক আয়োজন করতে থাকে উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মোঃ আবু তৈয়ব সমর্থিত আ’লীগের একাংশ। এ খবর জানতে পেরে বৃহস্পতিবার (২৬ আগষ্ট) মূলধারার আ’লীগ সমর্থিত ফটিকছড়ি কলেজ ছাত্রলীগ পাল্টা হিসেবে ২৭-২৯ আগষ্ট পর্যন্ত ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ শীর্ষক ৩ দিন ব্যাপী কর্মশালা ও শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ’ কর্মসূচী ঘোষণা করে। ফলে মুখোমুখি অবস্থানে চলে যায় আ’লীগের বিবাদমান দু’গ্রুপ।
গোপন সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে প্রশাসন উত্তর জেলা আ’লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল সালামের হস্তক্ষেপ কামনা করে। কিন্তু তিনি নাকি দু’পক্ষকে বারণ করা সত্বেও কেউ কথা শুনেনি। ফলে বাধ্য হয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি এড়াতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে।
এদিকে উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারির ফলে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালন করতে না পারা আ’লীগের একাংশ শুক্রবার বিকেলে ৬ কিলোমিটার দুরে নাজিরহাটস্থ চৌধুরী-সখিনা কমিউনিটি সেন্টারে তাদের কর্মসূচী পালন করে এবং তার পূর্বে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে আ’লীগের একাংশের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ আলম সিকদার অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন মুহুরী ও মেয়র ইসমাঈলগং কতিপয় ছাত্রলীগের কর্মীকে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালনে বাধা হিসেবেই পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম অসম্মান দেখিয়েছে এবং প্রশাসনকে ১৪৪ ধারা জারির সুযোগ করে দিয়েছে। এ সময় প্রশ্নের জবাবে উত্তর জেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল আলম বাবু বলেন, ‘টুনকো একটা কর্মসূচীর প্রেক্ষিতে জাতির পিতার মৃত্যুবার্ষিকী পালন কর্মসূচী বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না। কার্যত প্রশাসন দেউলিয়ার পরিচয় দিয়েছে’। অপর প্রশ্নের জবাবে উপজেলা চেয়ারম্যান হোসাইন মোঃ আবু তৈয়ব বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে লিখিত অনুমতি নেয়া হলেও জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকী পালনে যারা বাধা দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করিয়েছে; তারা কখনো বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হতে পারে না; তারা ধিক্কৃত মোস্তাকের উত্তরসূরি। যারা পাল্টা কর্মসূচী দিয়ে ১৪৪ ধারা জারি করলো তাদের কোন আবেদন কিংবা অনুমতি ছিল কি-না; আমরা প্রশাসনের কাছেও জানতে চাইব।
এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দিদারুল বশর চৌধুরী দুদু, চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম, আমান উল্লাহ চৌধুরী লিটন, মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ, এসএম শামসুদ্দীন, মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল বশর চৌধুরী, সৈয়দা রিফাত আক্তার নিশু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জেবুন্নাহার মুক্তা, চেয়ারম্যান সরোয়ার উদ্দীন চৌধুরী শাহীন, মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ, মোহাম্মদ শফিউল আজম, মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, মীর মোরশেদ প্রমূখ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মহিনুল হাসান বলেন, কেউ আবেদন বা অনুমতি না নিলেও গোয়েন্দা রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার আছে। আমরা সকলে জাতির পিতার শাহাদাত বার্ষিকী পালন হোক- সেটাই চাইব, কিন্তু কর্মসূচী পালনে পাল্টা-পাল্টি হলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এর বিকল্প ছিল না। এখনো ১৪৪ ধারা বলবৎ আছে; তবে পরিস্থিতি বুঝে রাতে বা সকালে প্রত্যাহার করা হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালনে কেউ বাধা হতে পারে না। এটা অসুন্দর এবং দৃষ্টিকটু হয়েছে। বিবাদমান দু’গ্রুপের কারো পক্ষে আমার যাওয়া সমীচীন মনে করিনি। প্রশাসনও জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দের সহায়তা চেয়ে ব্যর্থ হবার পর পরিস্থিতি এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে বলে শুনেছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন