পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা রক্ষার উদ্যোগে সেতুর দুই প্রান্তে দুই থানা চালু হচ্ছে শীঘ্রই। পদ্মা সেতু কে কেন্দ্র করে সেতুর দক্ষিণে শরীয়তপুরে পদ্মা দক্ষিণ ও মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে মাওয়ায় পদ্মা উত্তর থানা গঠনের প্রক্রিয়া শেষদিকে। ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে, চলছে রং ও আনুষঙ্গিক কাজ। কুমারভোগ ও মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন সমন্বয়ে লৌহজং উপজেলায় পদ্মা উত্তর নামে আরেকটি থানা প্রতিষ্ঠিত হবে। সেতু কে কেন্দ্র করে জন নিরাপত্তা বিবেচনা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে দুটি থানা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
ইতোমধ্যেই এই দুই থানায় জনবলের পদসৃষ্টি করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। অত্যাধুনিক এই দুই থানা উদ্বোধনের জন্য এখন চূড়ান্ত প্রস্তুত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সক্ষমতা আর এগিয়ে যাওয়ার স্মারক পদ্মা সেতুকে ঘিরে বদলে যাচ্ছে পুরো এলাকার চেহারা। সেতুর নিরাপত্তায় তাই এবার চালু হচ্ছে দুটি পূর্ণাঙ্গ থানা। সড়ক ও রেল স্ল্যাব সম্পন্ন হওয়ার পর এখন গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ পুরোদমে চলছে। এখন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের দুই থানা নদী পাড়ের মানুষের নিরাপত্তায়ও কাজ করবে। আধুনিক এই থানা দুটি চালু হলে কমে যাবে এলাকার অপরাধ। এছাড়াও সেতুর টোল প্লাজায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা উঠবে। এই টাকার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই থানা দুটি টোল প্লাজার সঙ্গেই স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টে পদ্মা দক্ষিণ থানার আওতায় থাকবে পূর্ব নাওডোবা ও পশ্চিম নাওডোবা ইউনিয়ন। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা উত্তর থানার আওতায় থাকবে মেদিনীমন্ডল ও কুমারভোগ ইউনিয়ন। চারতলার থানা ভবনে এখন শেষ পর্যায়ের রঙের ছোঁয়া দেয়া হচ্ছে। থানা চালুর খবরে স্থানীয়রা খুশি।
থানাগুলোতে একজন পরিদর্শক, দুইজন উপ-পরিদর্শক, দুইজন সহকারী উপ-পরিদর্শক ও ১৫ জন করে কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করবেন।
লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন জানান, থানাটি খুবই সুন্দর করে তৈরি করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর নিরাপত্তা ছাড়াও পাশের দুটি ইউনিয়নের নিরাপত্তা দেবে। তাই এখন লৌহজং থানার কর্মপরিধি কমে যাচ্ছে। আগে এই থানায় ১০টি ইউনিয়ন ছিল। এখন ৮টি ইউনিয়ন থাকবে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী জানান, মাওয়া প্রান্তে পদ্মা উত্তর থানায় সেতু বিভাগের খরচ হয়েছে ১৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং জাজিরা প্রান্তে পদ্মা দক্ষিণ থানায় ১৬ কেটি ২৬ লাখ টাকা। তবে পুলিশ বিভাগ এই দুই থানা গ্রহণের পরে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং ফার্নিচারসহ অন্য কাজগুলো করছে। এখন থানা দুটির ফিনিশিং কাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দুই বছর আগে এই থানা দুটি বুঝে নেয়ার পর খালি পড়ে ছিল বা ট্রাফিক পুলিশরা ব্যবহার করেছে। তাই উদ্বোধনের আগে এখন ঘষামাজা করে নতুনভাবে রং করা হচ্ছে। অনেক ফিটিংস পরিবর্তন করা হচ্ছে। পুলিশ ব্যারাকের জন্য ঘাটসহ সব রকমের ফার্নিচার আসতে শুরু করেছে। উদ্বোধনের করার জন্য যা যা প্রয়োজন সেভাবেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। এক একর করে জমিসহ থানা ভবন দুটি পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ পুলিশ বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়। ২০১৯ সালের ২১ মে পদ্মা সেতুর উত্তর থানা হস্তান্তর করা হয়। এর ক’দিন আগে দক্ষিণ থানা হস্তান্তর হয়।
একটা সময় পদ্মা নদীর উভয় প্রান্তের এই এলাকায় একেবারেই মানুষ ছিল না। পদ্মা সেতুকে ঘিরে দুই পাড়ের জীবনযাত্রা পাল্টে গেছে। নতুন নতুন জনবসতি তৈরি হচ্ছে, নতুন নতুন হাট-বাজার বসছে। মানুষজন এখানে বসবাস করতে শুরু করেছেন। দেশী-বিদেশী এবং নানা অঞ্চলের মানুষের বসতিতে গড়ে উঠছে নতুন নগর। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশের প্রশাসনিক কার্যক্রম দরকার। মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার মেদিনীমন্ডলে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার অদূরে এই থানা ভবন দেখে খুশি এলাকার মানুষজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন