পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, সরকারের কৃষিখাত সংশ্লিষ্টরা চালের উৎপাদনের যে তথ্য দেয়, তার সঙ্গে ব্যস্তবতার কোনো মিল নেই। বিশেষ করে চাল উৎপাদনের কোনো সঠিক তথ্য নেই। গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে ব্রি প্রণীত ‘বাংলাদেশে চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণকরণ-ডিআরপি’ শীর্ষক কৌশলপত্র উপস্থাপন ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৌশলপত্র উপস্থাপন করেন ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর।
প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বিবিএসের মাথাপিছু চাল ভোগের পরিমাণ ধরে হিসাব করলে দেশে দুই কোটি ৮০ লাখ টনের বেশি চালের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে এর থেকে অনেক বেশি। তাহলে বাঁকি চাল গেল কোথায়? তারপরও কেন আমদানি করতে হচ্ছে? নিশ্চয় উৎপাদনের তথ্যে ভুল রয়েছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে চাল উৎপাদনে যে সফলতা এসেছে সেটা ভালো। তবে আরো অনেক এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের হেক্টর প্রতি ফলন এখনো মাত্র দুই দশমিক ৭৪ টন। যেখানে জাপান হেক্টরে পাঁচ টন আর চীন সাড়ে ছয় টন ধান পায়। এমনকি ভিয়েতনামের ফলন পাঁচ দশমিক ৮৪ টন। আমরা চীন জাপানের মতো উন্নত নই, কিন্তু ভিয়েতনামের মতো সাধারণ দেশের ন্যায় ফলনও করতে পারি না।
বাজারে চালের দাম কমাতে দীর্ঘদিন ধরে প্রাইজ কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয় উপস্থাপিত কৌশলপত্রে। সে প্রসঙ্গ টেনে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, কেন আপনারা প্রাইজ কমিশন চান? তাহলে কৃষি বিপণন অধিদফতরের কী কাজ? এমন একটি অধিদফতর ভারতেও নেই। তাদের কাজ কি শুধু প্রতিদিনের দাম-দরের হিসাব রাখা? ওই সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে হবে। না হয় সেটা ভেঙে প্রাইজ কমিশন করতে হবে। ছোট্ট দেশ নেদারল্যান্ডের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ছোট্ট একটি দেশ, যা বাংলাদেশের অর্ধেকের কম, তারা ৯৪ বিলিয়ন ডলারের কৃষিপণ্য রপ্তানি করছে। আমরা পাঁচ বিলিয়নে আটকে রয়েছি। যেখানে আমরা কৃষিপ্রধান দেশ।
তিনি বলেন, কৃষিকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ব্যাপক প্রকল্প-কর্মজজ্ঞ চলে। কিন্তু দেশের এ আবহাওয়া নির্ভর কৃষির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আমাদের কৃষিকে উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনে গ্রিনহাউস কৃষিতে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক চালের উৎপাদনের তথ্যে ঘাটতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কোথাও তথ্যের গরমিল রয়েছে। আমি বিবিএসকে আহ্বান করবো, আগামী কৃষি শুমারিতে যেন উৎপাদনের সঠিক তথ্য থাকে। সামান্য ভুলও যেন না থাকে। প্রয়োজনে শুমারিতে দেরি হোক। কিন্তু সঠিক তথ্য উঠে আসুক। স্বয়ংসম্পূর্ণতার পরও চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গ টেনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ফসল আবহাওয়া নির্ভর। মাঝে মাঝে উৎপাদন ব্যহত হয়। তবে আমরা যে পরিস্থিতিতে রয়েছি, তাতে ৪৩ সালের মনান্তরের মতো লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে মরার অবস্থা নেই। এখন কেউ না খেয়ে থাকে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন