আন্তর্জাতিক সুফি ঐক্য সংহতি (সুফিজ) এর আয়োজনে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে ‘এ বার্থ অব প্রফেট (সা.) এ বার্থ অব ন্যাশন’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সুফিজের চেয়ারম্যান আওলাদে রাসূল (সা.) শাহ্সূফি সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভাণ্ডারী।
সভাপতির বক্তব্যে সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, প্রিয়নবীর (সা.) পৃথিবীতে শুভাগমনকালকে ইতিহাসে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগ বলা হয়। সে সময়ে মানুষ এমন নিষ্ঠুর ও বর্বর ছিল যে, তারা খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, গোত্রে গোত্রে যুদ্ধ, চুরি, ডাকাতিসহ নানাবিধ অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকতো। ওই সময়ে নারী জাতির কোনো সম্মান ও মর্যাদাই ছিল না। নারী জাতি এমনই ভোগ বিলাসের পণ্য ছিল যে, কোন কোন গোত্রে একজন পিতা কলঙ্ক ও সম্মানের ভয়ে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিতেও দ্বিধাবোধ করতো না। সুফিজ চেয়ারম্যান আরো বলেন, এই জাহেল আরব জাতিকে রাসূলে পাক (সা.)’র ক্ষমা, উদার্য, মহানুভবতা ও প্রেম ভালবাসা ও হেকমত দিয়ে বিশ্বের সবচেয়েই সভ্য জাতিতে পরিণত করেন।
রাসূলের (সা.) জীবনী গভীরভাবে উপলব্ধি করলে আমরা তাঁর মধ্যে সকল মানবিক গুণাবলীর সমাবেশ দেখতে পাই। তাঁর এবং তাঁর সঙ্গীদের ওপর মক্কাবাসীর নির্মম নির্যাতন নিপীড়ন ও কঠোরতা এতোই ভয়াবহ ছিল; যা বর্ণনাতীত ।
রাসূলেপাক (সা.)’র মক্কা বিজয়ের পর শত্রু পক্ষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও তিনি মক্কাবাসীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। শুধু তাই নয়, সকল জাতির মধ্যে সমতা, ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রণয়ন করেন ‘মদিনা সনদ‘। প্রতিষ্ঠা করেন মানবিক ও কল্যাণময় মদিনা রাষ্ট্র।
আজকের পৃথিবীতে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার, নিপীড়নে মানবতার করুন আর্তনাদ চলছে। কেউ কারো কথা শুনছে না। কথায় কথায় যুদ্ধের হুমকি, যুদ্ধের উস্কানী ও নিজদের আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে অমানবিক কাজের ভাগারে পরিনত করছে পৃথিবীকে। নিজেদের আধিপত্য বাজায় রাখতে মানুষ হত্যা ও সভ্যতা ধ্বংস করতেও কুণ্ঠাবোধ করছেন না।
তিনি বলেন, মানবিক ও কল্যাণকর রাষ্ট্র বিনির্মানে মানুষের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাতে হবে। প্রিয়নবীর (সা.) আদর্শ অনুসরণই মানবতার করুন বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ দিতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, আমি এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জীবনে প্রথম অংশগ্রহণ করি। এই শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি আনন্দিত। তিনি বলেন, সূফিবাদ আমাদের সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং সারা বিশ্বে শান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফ ব্যাপক অবদান রাখছে। তিনি আরো বলেন, সূফিবাদ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একত্রিত করে বিশ্বে শান্তির সমাজ গড়ে তুলছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমাদের অন্যের অধিকার, বিশ্বাসকে সম্মান করতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা না হলে উন্নয়ন টেকসই হবে না। একে অপরকে সম্মান করতে হবে। সবাই এক সাথে মিলে মিশে বসবাস করতে হবে।
শামসুল আলম বলেন, সুফিবাদ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। মাইজভাণ্ডারীর উদ্যোগে বাংলাদেশে সুফীবাদ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন জেলায় মাইজভাণ্ডারী ভক্ত আছেন, যারা সুফিবাদের বিশ্বাস করেন, তারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে রোল মডেল। সারা পৃথিবীতে শান্তির বার্তা নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ার মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। আমি এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জীবনে প্রথম অংশগ্রহণ করে অত্যন্ত আনন্দিত বলে জানান।
ভারতের আজমীর শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন আল্লামা সালমান চিশতী বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার কল্যাণ ও শান্তির দূত হিসেবে পৃথিবীতে আগমন করেন। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)’র আদর্শ আমাদের প্রত্যেকের ধারণ এবং লালন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আজমীর শরীফের খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী সৈয়দ হাসান সানজরী (রহ.), হযরত শাহ্ জালাল (রহ.), গাউছুল আ’যম মাইজভাণ্ডারী (ক.)সহ বিশ্বের অলিগণ পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন করে চলেছেন। সারা বিশ্বের মুক্তির কাণ্ডারী। বাংলাদেশে শাহ্সূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল-হাসানী ওয়াল হোসাইনী আল-মাইজভাণ্ডারীকে (মা.জি.আ.) এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের আহ্বায়ক শাহ্জাদা সাইয়্যিদ মাশুক এ মইনুদ্দীন আল-হাসানী। এতে অতিথি ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর বিক্রম, অ্যামেরিকান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভিসি প্রফেসর ড. আতাউর রহমান মিয়াজি, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. ওয়াহিদুজ্জামান, তুরস্কের দারুল ইসলাম কলেজের ডীন শায়খ ড. সৈয়দ মোহাম্মদ ই এল হোসাইনী, মরক্কোর ওয়াজদা কমিশন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর শায়খ ড. মোঃ লাকদার দারফুফি, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সুফিজমের উপদেষ্টা, ড. শায়খ আহমদ তিজানি বিন ওমর, ইরানিয়ান অ্যাম্বাস্যাডর ড. আফরোজ, ভারতের ইসলামিক স্কলার, শায়খ মোঃ সাখাওয়াত হোসাইন বারাকাতী, প্রফেসর ড. রফিকুল আলম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন