আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদককে মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের শিকার মো.সাইফুল ইসলাম স্বপন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ (কবিরহাট- কোম্পানীগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত সংসদ সদস্য প্রদপ্রার্থী ছিল। এ ছাড়াও নোয়াখালী জেলা জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক। তিনি উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মোখলেছের রহমান পন্ডিত বাড়ির জিয়াউল হক জিয়ার ছেলে। গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার বসুরহাট বাজারের ডার্চ বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন দক্ষিণ মসজিদের সামনে থেকে ফিল্মি স্ট্রাইলে জাতীয় পার্টির এ নেতাকে কাদের মির্জার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ধরে নিয়ে যায়।
পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বসুরহাট পৌরসভার টর্চার সেলে তাকে আটক রেখে কাদের মির্জা নিজে এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা দফায় দফায় নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগীর ছেলে শাওন। পরে তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পরে আনোয়ার খাঁন মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানান তার স্ত্রী। চরফকিরা ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য ও স্বপনের স্ত্রী নাজমা ইসলাম জানান, বেধড়ক মারধর করে আমার স্বামীর মাথা থেতলে দিয়েছে, হাত-পা ভেঙে দেয় কাদের মির্জা ও তার অনুসারীরা। এ সময় তারা তাকে ফ্যানের সাথে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। আগে থেকেই কাদের মির্জা তাকে মুঠোফোনে গালিগালাজ করত হুমকি দিত। গত ৬ মাসে আমার স্বামী বসুরহাট যায়নি। গতকাল বিকেলে এক কাজে তিনি বসুরহাট বাজারে যান। খবর পেয়ে কাদের মির্জা তাকে আটক করে নির্মম নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় আমি কাদের মির্জার বিচার দাবি করছি। ভুক্তভোগীর ছেলে সরকারি মুজিব কলেজের শিক্ষার্থী মইনুল ইসলাম শাওন অভিযোগ করেন, বসুরহাট বাজারের মারলিন হোটেলের সামনের মসজিদে বাবা আছর নামাজ পড়ে বাজারের দিকে আসেন। ওই সময় টোকাই ছেলেদের দিয়ে কাদের মির্জার নেতৃত্বে আামর বাবাকে তুলে নিয়ে যায় তার টর্চার সেল রুমে। একই সাথে বাবার সাথে থাকা দুই লাখ টাকা, মোটরসাইকেল, মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
কাদের মির্জা নিজেও আমার বাবাকে মারধর করে। কোম্পানীগঞ্জে রাজনীতিতে মির্জার বিরুদ্ধে যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য বাবাকে চাপ দেয় মির্জা। তার প্রতিপক্ষরা যে সকল অনিয়ম করে নাই, সে গুলো করছে বলে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়ার জন্য বলে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি লতিফ মেম্বার জানান, কাদের মির্জা বসুরহাট পৌরসভা জাতীয় পার্টির সভাপতির মাধ্যমে আমাকে ডেকে নেয়। এরপর আমার থেকে স্বাক্ষর নিয়ে স্বপনকে ছেড়ে দেয়। তিনি আরও জানান, সেন্টাল কমিটিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে তিনি ভয়ে এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে গণমাধ্যমকর্মীদের এড়িয়ে যান। নির্যাতনের বিষয়ে তিনি ভুক্তভোগী পরিবারের সাথে কথা বলতে পরামর্শ দেন। এ বিষয়ে জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন