শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী বিশ্ব

আইএস-টিটিপি-বালুচ সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তান ব্যবহার করছে : সিএনএনকে ইমরান খান

‘স্থিতিশীলতা না আসলে পাকিস্তানই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সিএনএন প্রতিনিধি বেকি এন্ডারসনকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তিনি বারবার মার্কিন কর্মকর্তাদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন এই বলে যে, আমেরিকা সামরিকভাবে তার উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারবে না এবং সেখানে আটকে যাবে। তিনি বলেন যে, আফগানিস্তানে অবস্থানকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তালেবানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার চেষ্টা করা উচিৎ ছিল, সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পরে নয়।

পাকিস্তান তালেবানদের সাথে গভীর সম্পর্ক রেখেছে এবং ইসলামাবাদ কর্তৃক অস্বীকৃত মার্কিন-সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সমর্থন করেছে, এ অভিযোগের জবাবে ইমরান বলেন যে, গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধনসহ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পাকিস্তানের ভাগ্য আফগানিস্তানের সাথে যুক্ত। আফগানিস্তানে সহিংসতা, রাজনৈতিক ডামাডোল এবং মানবিক সঙ্কট সবই অনিবার্যভাবে সীমান্ত পার হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
ইমরান খানের জন্য, ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আক্রমণ পাকিস্তানের জন্য ধ্বংসাত্মক ছিল। তিনি বলেন যে, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থনের কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলায় হাজার হাজার পাকিস্তানি প্রাণ হারিয়েছে। অথচ, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ শীর্ষ তালেবান কর্মকর্তা মোল্লা বারদারকে তাদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়। গত সপ্তাহে তাকে তালেবানের পুরুষ শাসিত মন্ত্রিসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করা হয়।

এরপর, সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিøঙ্কেন বলেছেন, ‘প্রস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্কের পুনর্ম‚ল্যায়ন করবে। তিনি হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির শুনানিতে কংগ্রেসকে বলেন যে, পাকিস্তানের বহুবিধ স্বার্থ রয়েছে যেগুলির কয়েকটির সাথে আমাদের বিরোধে রয়েছে।’ ইমরান এই ধরনের মন্তব্যকে ‘মূর্খতা’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ‘আমি এমন মূর্খতা কখনও শুনিনি।’

পাক-প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৮০-এর দশকে পাকিস্তান সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগ দেয় এবং আফগানিস্তানে বিদেশী দখলের বিরুদ্ধে মুজাহিদিনদের জিহাদ করার প্রশিক্ষণ দেয়।’ তিনি আরও বলেন যে, সেই সময় থেকে দ্রæত ৯/১১ এর দিকে তাকালেও দেখা যায় যে, আফগানিস্তানের যুদ্ধেও যুক্তরাষ্ট্রের পকিস্তানকে প্রয়োজন। তৎকালীন মার্কিন প্রেনিডেন্ট জর্জ বুশ পাকিস্তানের সাহায্য চেয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আর কখনও পাকিস্তানকে ত্যাগ করব না।’ তারপর, পাকিস্তান আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধে যোগ দেয়। ইমরান বলেন, ‘যদি আমি প্রধানমন্ত্রী থাকতাম, আমি কখনোই তা করতাম না।’

ইমরান বলেন, ‘আফগানিস্তানে মার্কিন আক্রমণের পর একই মুজাহিদিনদের কার্যকলাপকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে গণ্য করা হয়েছিল। ফলস্বরূপ, তারা আমাদের বিরুদ্ধে চলে যায়। তারপর গোটা উপজাতীয় অঞ্চলের পশতুন জাতীয়তাবাদ আমাদের সীমান্তের এপারের পশতুনদের মধ্যেও জেগে ওঠে।’ তিনি বলেন, ‘ফলে, জিহাদিরা আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে, পশতুনরা আমাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে এবং আমরা যত বেশি বেসামরিক এলাকায় সামরিক অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছি, তত বেশি বেসামরিক প্রানহানি ঘটেছে।’

ইমরান খান বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ছিলাম বলেই আমরা ৯/১১ এর পর এবং আফগানিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হয়েছি। এই দেশটি এমন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গিয়েছে যে, এক পর্যায়ে ৫০ টি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমাদের সরকারকে আক্রমণ করেছিল। তার উপরে, তারা অবশ্যই জেনেছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে ৪ শ’ ৮০ টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। সময়টিতে কেবলমাত্র একটি দেশ তার মিত্র দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়েছে।’

পাকিস্তানের গোয়েন্দারা হাক্কানি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তালেবানদের অর্থায়ন ও সমর্থন করছে এমন অভিযোগের জবাবে পাক-প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানের মোট বাজেট ২ শ’ ২০ মিলিয়ন মানুষের জন্য ৫০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের কি অন্য যুদ্ধের অর্থায়ন করার ক্ষমতা ছিল, যখন আমরা আমাদের নিজের খরচই জোগাতে পাতাম না?’ তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন হল: পাকিস্তান কি আফগান তালেবানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার অবস্থানে ছিল, যখন এটি ইতিমধ্যেই ভেতর থেকে পাকিস্তানি তালেবানদের আক্রমণের শিকার হচ্ছিল?’

ইমরান বলেছেন যে, আমেরিকানরা অনুধাবন করতে পারেনি হাক্কানি নেটওয়ার্ক কি, যাদের তিনি আফগানিস্তানে বসবাসকারী পশতুন উপজাতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৮০-এর দশকে আফগান জিহাদের সময় পাকিস্তান ৫০ লাখ আফগান শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছিল, যার মধ্যে কিছু হাক্কানিও ছিল। আর হাক্কানিরা ছিল মুজাহিদিন যারা সোভিয়েতদের সাথে যুদ্ধ করছিল। তাদের জন্ম পাকিস্তানি শরণার্থী শিবিরে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা (আমেরিকানরা) আমাদের যা করতে বলেছিল তা হলো, আমাদের ৫০ লাখ আফগান শরণার্থীর মধ্যে কে তালেবান এবং কে নয়, যাচাই করতে।’

পাক-প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তান থেকে বেরিয়ে আসা শরণার্থীদের ‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগ’ বলে অভিহিত করে বলেন, পাকিস্তান ইতিমধ্যেই ৩০ লাখকে স্থান দিয়েছে এবং আর গ্রহন করতে সক্ষম নয়। ইমরানের দ্বিতীয় উদ্বেগ হ’ল, সন্ত্রাসবাদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ৩ টি সন্ত্রাসবাদ রয়েছে। আইএসআইএস, পাকিস্তানি তালেবান এবং বেলুচ সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের আক্রমণ করার জন্য আফগানিস্তানের মাটি ব্যবহার করছে।’ ইমরান খান জোর দিয়ে বলেন, ‘আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলা থাকলে এবং স্থিতিশীলতা না আসলে পাকিস্তানই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সমাপ্ত)। সিএনএন

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
গাজী ফজলুল করিম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩০ এএম says : 0
তালেবানের সাথে সেই প্রতিশ্রুতি নিতে হবে যাতে তারা পাকিস্তানের হামলার জন্য আফগানের মাটি ব্যবহার করতে না দেয়।
Total Reply(0)
মনিরুল ইসলাম ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩১ এএম says : 0
ইমরান খান সত্য কথা বলেছেন। এবার সুযোগ আসছে তালেবানের সাথে সখ্যতা করে উদ্বেগের সমাধান করা।
Total Reply(0)
নোমান মাহমুদ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩১ এএম says : 0
সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। এরা ভারতের মদদে নাশকতা করে।
Total Reply(0)
সাইফ আহমেদ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৬:৩২ এএম says : 0
পাকিস্তানকে সাবধানে পথ চলতে হবে, তালেবানের সাথে সুসম্পর্ক গড়তে হবে।
Total Reply(0)
Monjur Rashed ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩৪ পিএম says : 0
Courageous spokesman who speaks boldly without any fear.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন