ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। সুন্দরী-কেওড়া, বাইন ও হেতাল গাছের সবুজতা বনের যে অপার সৌন্দর্য তা উপভোগ করতে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভিড় করছেন সুন্দরবনে। দীর্ঘদিন করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটকদের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে সুন্দরবন। তবে অন্যান্য বছর ঠিক এই সময়ে যে সংখ্যায় দর্শনার্থী সুন্দরবনে এসে থাকেন, এবার করোনা বিপর্যয়ের কারণে এ সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেকটাই কম।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, কলাগাছিয়া ইকোট্যুরিজম স্পট, হারবারিয়া, কোকিলমনি, হিরণ পয়েন্ট, টাইগার পয়েন্ট, কচিখালি, বঙ্গবন্ধুর চর, দুবলার চর, কালির চর, মান্দাবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্পট ঘুরে দেখতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগে। মোংলা বন্দর থেকে সবচেয়ে কাছে পশুর নদীর অপর পাড়ে করমজল বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র।
স্বল্প সময়ে সুন্দরবন দেখতে বেশীরভাগ পর্যটক করমজল এসে থাকেন। এবারও করমজলে ভ্রমন পিপাসুরা ভিড় করছেন। করমজলে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, সুন্দরী-কেওড়া, বাইন ও হেতাল গাছের ঝোপের মধ্য দিয়ে চক্রাকার দীর্ঘ কাঠের ফুট ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ার, কুমির প্রজনন কেন্দ্র, সুদৃশ্য মসজিদ। যা পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে।
নগর জীবনের ব্যস্ততাকে দূরে রেখে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে করমজলে এসেছেন গোপালগঞ্জের ব্যাংকার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানালেন, গোপালগঞ্জ থেকে সড়কপথে আড়াই ঘন্টায় মোংলা এসেছেন। পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ট্রলারে প্রমত্তা পশুর নদী পার হয়ে করমজল এসেছেন। ট্রলারে প্রায় এক ঘণ্টা নৌ ভ্রমন হয়েছে। অন্যদিকে করমজলে এসে পুরো সুন্দরবনই যেন দেখতে পাচ্ছেন।
একই রকম কথা জানালেন যশোর থেকে পরিবার নিয়ে আসা স্কুল শিক্ষিকা পারভিন সুলতানা। তিনি জানালেন, বনের একটু ভিতরে ঢুকেই চিত্রল হরিণের দল দেখতে পেয়েছেন। আর বানরের উৎপাত বেড়েছে। কাঠের ট্রেইল দিয়ে গভীর বনের ভিতরে যাওয়ার সময় বানরের দল এসে পর্যটকদের হাতে থাকা খাবারের প্যাকেট নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে, সুন্দরবনে আসা পর্যটকদের মাঝে খুব একটা স্বাস্থ্য সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন না। এক্ষেত্রে বনরক্ষীরাও নিশ্চুপ রয়েছেন। বনবিভাগ জানিয়েছে, ভ্রমণকালে পর্যটকদের মানতে হবে সামাজিক দূরত্ব, স্বাস্থ্য বিধি, মাস্ক পরিধান ও ২৫ জন করে গ্রুপ ভাগ করে নৌযান থেকে বনে নেমে ঘুরতে হবে। এক সাথে বেশি লোক নামা ও ঘুরাফেরা করা যাবে না। যারা এ সকল শর্ত ভঙ্গ করবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বনরক্ষীরা জানান, সরকারি ছুটির দিন ও শুক্রবার পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যায়। তাদেরকে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বললে রেগে দুর্ব্যবহার করেন। তাই প্রথম দিকে কয়েকদিন স্বাস্থ্যবিধি মানতে কড়াকড়ি আরোপ করা হলেও পরিস্থিতির কারণে এখন কিছুটা শিথিল করা হয়েছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (পশ্চিম) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, প্রতিদিনই পর্যটকরা আসছেন সুন্দরবনে। স্বাভাবকি সময়ে প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ দেশী-বিদেশী পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। সুন্দরবনকে আরো বেশি পর্যটনবান্ধব করতে সরকার কাজ করছে। পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়ায় বন বিভাগের পক্ষ থেকে পুরাতন স্পটগুলোর উন্নয়ন এবং আকর্ষণীয় আরো চারটি নতুন পরিবেশবান্ধব স্পট নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নুতন চারটি স্পট হচ্ছে সুন্দরবনের শেখেরটেক, আলীবান্দা, কালাবগি ও কৈলাশগঞ্জ। নতুন স্পট নির্মাণ ও পুরাতন স্পটগুলোর উন্নয়নে ব্যয় হবে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন