শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৫ এএম

সাধারণত ভ্রমণের জন্য শীতকালকে পর্যটকরা বেছে নেয়। এ সময়টাকে পর্যটন মৌসুম ধরা হয়। আবহাওয়াসহ পরিবেশ অনুকূলে থাকায় পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়। এবার বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজারসহ দেশের প্রধান প্রধান পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে কক্সবাজারের বিভিন্ন আকর্ষণীয় পয়েন্ট ছিল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। সমুদ্র সৈকতের ডায়বেটিক পয়েন্ট, লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ইনানী, ডলফিন মোড়, হিমছড়ি, ও টেকনাফ সৈকতে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় করছে। পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে সেখানের হোটেল-মোটেল মালিকরাও খুশি। কক্সবাজারকে পর্যটকদের আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য স্থানীয় প্রশাসনও বেশ তৎপর। পর্যটনের প্রসারে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কক্সবাজার ছাড়াও পতেঙ্গা সৈকতে পর্যটকরা ভিড় করছেন। সৈকতের পাশাপাশি নেভাল বিচ এবং সিটি আউটার রিং রোড এলাকায় পর্যটকদের ঢল দেখা গেছে।

আমাদের দেশে সাধারণত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পর্যটনের ভরা মৌসুম ধরা হয়। এ সময়ে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্রে ব্যাপক মানুষের উপস্থিতি ঘটে। প্রধানতম পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। এখানে পাঁচ তারকা হোটেল-রিসোর্টসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক মোটেল গড়ে উঠেছে। বিশ্বের একমাত্র দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত এবং পাহাড় ও প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতি বছর এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন ঘটে। পর্যটন শিল্পে কক্সবাজার শীর্ষে রয়েছে। এছাড়া কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, যেখানে একইসঙ্গে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখা যায়, সেটিও এখন অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পদ্মাসেতুর কারণে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় দিন দিন এখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে। এই মৌসুমে তা রেকর্ড ছাড়াতে পারে বলে স্থানীয় প্রশাসন আশা করছে। পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ রাঙামাটি, পার্বত্য চট্টগ্রামের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে সাজেক অন্যতম। এছাড়া অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকরা দুর্গম এলাকায় গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে। সিলেট বরাবরই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। জাফলং, শ্রীমঙ্গল, বিছানাকান্দি, লাউয়াছড়া, মাধবকুণ্ডসহ আরও অনেক আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। শীতে চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অসংখ্য পর্যটক সেখানে ভিড় করে। দেশের উত্তরাঞ্চলেও রয়েছে বহু পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশা করছে, এ মৌসুমে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এবার অনেক পর্যটক বিদেশ ভ্রমণের চেয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণে যাবে। তাছাড়া বিদেশ ভ্রমণেও নানা ঝক্কি-ঝামেলা রয়েছে। এর ফলে অনেকে বিদেশের চেয়ে দেশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে বেশি যাবে। যেকোনো দেশের জন্য পর্যটনশিল্প এখন অর্থনীতির অন্যতম বৃহৎ খাতে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে পর্যটক আকর্ষণে নানা সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে চলেছে। টেলিভিশন চ্যানেলসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য প্রতিনিয়ত বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের পর্যটনশিল্প অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক খাত পর্যটনশিল্প। এ শিল্প দেশটির জিডিপি’র ২৮ শতাংশ যোগান দেয়। পর্যটক আকর্ষণে দেশটির দ্বীপগুলোকে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সাজিয়েছে। ফলে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে এখানে পর্যটকরা আসে। পার্শ্ববর্তী ভারতে পর্যটন জিডিপিতে ৫.৮ শতাংশ অবদান রাখছে। দেশটিতে এ খাতে ৩ কোটির বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার দেশগুলো পর্যটনশিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন করছে। এ কাজটি আমরা যথাযথভাবে করতে পারিনি। অথচ অর্থনীতির জন্য পর্যটনকে অন্যতম খাত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাতায়াতের সুব্যবস্থা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদার করা। গত বছর কক্সবাজারে বেশ কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটায় পর্যটক সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গিয়েছিল। এর মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক পর্যটক সেখানে যেতে নিরুৎসাহী হয়েছিল। এছাড়া হোটেল-মোটেলের ভাড়া এবং খাবারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অত্যধিক দামের কারণে স্থানীয় পর্যটকরা কক্সবাজার যেতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে। শুধু কক্সবাজারই নয়, অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রেও এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার নজির রয়েছে।

এবারের পর্যটন মৌসুমকে সামনে রেখে এ খাতকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও মসৃণ করা। পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে পর্যটকরা যাতে কোনো ধরনের বিড়ম্বনা ও অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হয়, এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। হোটেল-মোটেল মালিকদেরও পর্যটকদের মেহমান হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তাদের সাথে সদাচার এবং যৌক্তিক ভাড়া ও খাবারের দাম রাখে, এ ব্যাপারে তাদের সচেতন হতে হবে। পর্যটকরা যাতে সেখানে গিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্পটে নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে এ জন্য তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তাসহ সার্বিক দিক নির্দেশনা দেয়া। পর্যটকদের যাতায়াত ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। পর্যটন ব্যবস্থাপনা নিয়মিত মনিটর করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন