এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা ইসলামাবাদ সফরের আগে গত শুক্রবার দেশে ও আফগানিস্তানের জঙ্গীদের ঐক্য গড়ে তোলা এবং পাকিস্তানের প্রতি সব চরমপন্থী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোন বিভেদ ছাড়াই ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান তার ৭ থেকে ৮ অক্টোবর সফরে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
শেরম্যান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাস দমনে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অংশীদারিত্ব চাই এবং আমরা আশা করি, সব জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো বিভেদ ছাড়াই ধারাবাহিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে’।
তার যাত্রার প্রথমে তিনি সুইজারল্যান্ড থেকে বলেন, ‘আমাদের উভয় দেশই সন্ত্রাসের মহামারিতে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আমরা সমস্ত আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসী হুমকি দূর করার জন্য সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার অপেক্ষায় আছি’। এ সফরকালে তিনি ভারত ও উজবেকিস্তানেও যাবেন।
মার্কিন সামরিক অভিযানের দীর্ঘদিনের সমালোচক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শুক্রবার প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সরকার নিষিদ্ধ তাহরিকে তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে অস্ত্র সমর্পণ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে।
তিনি তুরস্কের টিআরটি ওয়ার্ল্ড টেলিভিশনকে বলেন, ‘পাকিস্তানের কিছু তালিবান গোষ্ঠী আসলে কিছু শান্তি, কিছু পুনর্মিলনের জন্য আমাদের সরকারের সাথে কথা বলতে চায়। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে টিটিপির অংশ নিয়ে আলোচনা চলছে, যা বছরের পর বছর মারাত্মক হামলা চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পুনরাবৃত্তি করছি, আমি সামরিক সমাধানগুলিাতে বিশ্বাস করি না’।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান আফগানিস্তানের তালেবানকে সম্পৃক্ত করতে এবং অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানে বিশ্বকে উৎসাহিত করেছেন, যদিও তিনি স্বীকৃতি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
শেরম্যান আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের জন্য পাকিস্তানের আহ্বানের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এ ফলাফলকে সক্রিয় করতে পাকিস্তানের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দেখতে চাই’।
তালেবানদের কঠোরপন্থী ১৯৯৬-২০০১ শাসনকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পাকিস্তান মাত্র তিনটি দেশের মধ্যে একটি ছিল, কিন্তু ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হামলার পর তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকে দ্রুত সমর্থন করেছিল।
সেক্রেটারি শেরম্যান স্টেট ডিপার্টমেন্টের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্যারিয়ার কূটনীতিক হিসেবে স্টেট সেক্রেটারি, যিনি অন্য দেশের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সমতুল্য, তিনি সর্বদা রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অধীনে এবং কাবুলে তালেবানের বিজয়ের পর থেকে তিনি পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পর্যায়ের মার্কিন সফরকারী।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের ফাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি নিউইয়র্কে তার মার্কিন প্রতিমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের আলোচনা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যেখানে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে তালিবানরা মার্কিনপন্থী আশরাফ গনি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পর এ দখল গ্রহণ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র এখন চায় পাকিস্তান তালেবানকে রাজি করাক সরকারে অন্য দলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করতে, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে, মহিলাদের কাজ করতে দিতে এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিতে।
পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেছে যে, সেও কাবুলে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার চায় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পূরণ করার জন্য তালেবানদের প্রতি আহ্বান জানাবে। কিন্তু ইসলামাবাদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছে যে, তালিবানের ওপর তার প্রভাব সীমিত এবং এটি তাদের কিছু করতে বাধ্য করতে পারে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের সাথে তার বৈঠকে কুরেশি কাশ্মীর ইস্যুও উত্থাপন করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে, এ দশকের পুরনো বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সূত্র : এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন