শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নিবন্ধ

নারী কেন নৃশংসতার শিকার

প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. তোফাজ্জল বিন আমীন
আমরা কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে এক একটি দিন অতিবাহিত করছি। ঘর থেকে বের হয়ে আবার নিরাপদে ঘরে ফিরে আসার গ্যারান্টি শূন্যের কোঠায়। একের পর এক লোমহর্ষক হত্যাকা- ঘটেই চলছে। কখনো গলা কেটে, কখনো গুলি করে, কখনো গুম করে মানুষ খুন করা মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। একটি খুন বা হত্যার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি হত্যার খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। সোহাগী জাহান তনু ও রাশা হত্যার ঘটনা ভুলতে না ভুলতে নিষ্ঠুর বর্বরতার শিকার হয়েছে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস। মানুষরূপী হায়েনা বদরুলের নৃশংসতায় কাঁদছে সিলেট, কাঁদছে বাংলাদেশের হাজারো মানুষ।
খাদিজা সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ¯œাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরীক্ষা দিতে কলেজে গিয়েছিল সে। পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় কলেজের পুকুরপাড়ে খাদিজাকে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে কুপিয়ে আহত করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল। বদরুলের চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত খাদিজা এখন হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। খাদিজার মাথা ও হাতে অসংখ্য চাপাতির কোপ। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ‘আমরা সেই দৃশ্য আপনাদের কাছে বর্ণনা করতে পারব না। আমরা নিজেরাও হতভম্ব তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে। এমন নির্মম ঘটনা আমরা চিকিৎসকরাও আগে দেখিনি।’
বদরুল যখন চাপাতি দিয়ে খাদিজাকে কোপাতে থাকে, তখন সেই দৃশ্য কেউ কেউ মোবাইল ফোনে ভিডিও করেছেন আবার কেউ তুলেছেন ছবি। ভিডিওচিত্রে নিষ্ঠুরতার দৃশ্য অবলোকন করেছে দেশবাসী। চাপাতির আঘাতে যখন সংজ্ঞাহীন খাদিজা, তার নিথর দেহ পড়ে আছে এমসি কলেজ ক্যাম্পাসের সরু পথে, তখনও বন্ধ হয়নি নরপশু বদরুলের চাপাতির কোপ। চোখ বন্ধ করলেও মানসপটে ভেসে ওঠে সেই ভয়ঙ্কর নির্মম দৃশ্য। সে দৃশ্যে গায়ের পশম খাড়া হয়ে যায়। চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব হয় না। শিশু রাজনের পর নৃশংসতার এমন পুনরাবৃত্তি ঘটল এই সিলেটেই। দুর্ভাগ্য খাদিজার, তাকে কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। মানুষ কী করে এমন পাষাণ হতে পারে? সত্যি কথা বলতে কি, আমরা কেমন আছি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সোহাগী জাহান তনু, রাশা ও খাদিজা। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করছে একশ্রেণির তরুণ। রয়েল বেঙ্গল টাইগার মানুষের জীবন কেড়ে নেয় ঠিক, কিন্তু মানুষের পদচারণা দেখলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অথচ বদরুলদের মতো নরপিশাচরা নির্ভয়। বদরুলের চাপাতির ভয়ে কেউ তার সামনে যেতে পারেনি। খাদিজার চিৎকারে সিলেটের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠলেও বদরুলের মন একটু টলেনি। খাদিজার প্রতিবেশী ও স্বজনরা বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরেই খাদিজাকে উত্ত্যক্ত করছিল বদরুল। ২০১২ সালের ১৭ জানুয়ারিও উত্ত্যক্ত করার সময় স্থানীয় ব্যক্তিরা বদরুলকে ধরে গণপিটুনি দেয়।
খাদিজাকে ওভাবে কোপানোর পেছনে সেই ঘটনার ক্ষোভ থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। মৃত ভেবে ফেলে রেখে পালানোর সময় বদরুল জনতার হাতে আটক হয়ে এখন পুলিশ হেফাজতে। এখানে পুলিশের কোনো কৃতিত্ব নেই। জনগণ তাকে ধরিয়ে দিয়েছে।
একটি খুনের তদন্ত শুরু না হতেই আরেকটি খুনের নির্মম কাহিনী পত্রিকার পাতায় মুদ্রিত হচ্ছে। মানুষের কান্নার আওয়াজ কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। তারপরেও থামছে না নরঘাতকের নিষ্ঠুর লোমহর্ষক ঘটনা। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি কেমন তা অনুধাবন করার জন্য কাজী ফিরোজ রশীদ এমপির বক্তব্যই যথেষ্ট। জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেছেন,সম্প্রতি স্কুলের শিশু ও নারী হত্যার প্রবণতা বেড়েছে। এ নরপশুদের ক্রসফায়ায়ে মেরে ফেলা উচিত। উইলস লিটল স্কুলের রিশা, মিরপুরের আফসানাসহ প্রতিদিন অসংখ্য নারী-শিশু বখাটের দ্বারা খুন হচ্ছে। প্রতিদিন নিউজ পেপারে ছাত্রছাত্রী হত্যার নিউজ দেখতে হচ্ছে। এটা কিসের আলামত? এই নরপশুদের ক্রসফায়ারে মেরে ফেলতে হবে। এ ধরনের নরপশুদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তিনি আরো বলেন, জঙ্গির চেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে এই সকল সমাজবিরোধী। এদের হাত থেকে সমাজকে কলুষমুক্ত করতে হবে। কাজী ফিরোজ রশীদের এ বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য এবং অনেকেই তা সমর্থন করবেন। তবে ক্রসফায়ারই একমাত্র সমাধান নয়। আমরা আশা করব, খাদিজাকে যে কুপিয়েছে সেই বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। সন্ত্রাসীর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় থাকে না। সন্ত্রাসী সন্ত্রসীই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন