শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আকস্মিক ধর্মঘটে জনদুর্ভোগ

চট্টগ্রামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য থামছে না

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০২১, ১২:০৪ এএম

চট্টগ্রামে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছেই। কোনো ঘোষণা ছাড়াই গতকাল গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির সময় গত বুধবার র‌্যাবের হাতে পাঁচজন পরিবহন শ্রমিক ধরা পড়েন। এই ঘটনার প্রতিবাদে অঘোষিত ধর্মঘট শুরু হয়। আকস্মিক এ ধর্মঘটে দুর্ভোগে পড়েন নগরবাসী। বিশেষ করে কর্মজীবীদের চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সকালে অফিস শুরু এবং বিকেলে ছুটির পর শত শত মানুষকে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মজীবী নারীদের দুর্ভোগ ছিলো চরমে। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘর থেকে রেব হয়েছেন, তাদের রাস্তায় দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। গণপরিবহন না পেয়ে অনেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান।

এই সুযোগে রিকশা অটোরিকশা চালকেরাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন। নগরীর ইপিজেড মোড়, কাস্টমস, বিশ^রোড, বারিক বিল্ডিং মোড়, আগ্রাবাদ, বড়পুল, দেওয়ানহাট, টাইগার পাস, নিউ মার্কেট, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, এ কে খান মোড়, ষোলশহর, চকবাজার, অক্সিজেনসহ নগরীর প্রতিটি মোড়ে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশা এবং অটোরিকশায় গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন। কয়েকটি রুটে হাতে গোনা কিছু গণপরিবহন চলাচল করলেও তাতে যাত্রীর চাপ ছিলো বেশি।
আগাম কোনো ঘোষণা ছাড়াই গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হলেও ট্রাফিক পুলিশসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ছিলেন নির্বিকার। এই ঘটনায় যাত্রীদের অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা গণপরিবহনের নৈরাজ্য প্রতিরোধে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার আহবান জানান। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীতে গণপরিবহন খাতে চরম বিশৃঙ্খলা চলছে। রুট পারমিট থাকার পরও অনেক বাস, মিনি-বাস রাস্তায় নেই। যেসব বাস চলছে সেগুলোর বেশির ভাগেরই নেই ফিটনেস। লক্কর, ঝক্কর বাসে যাত্রী বহন করা হয় ঠাসাঠাসি করে। গণপরিবহন সঙ্কট চরমে। প্রতিটি রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

শ্রমিকসহ কর্মজীবী এবং স্বল্প আয়ের মানুষের আয়ের বিরাট অংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে যাতায়াতে। ব্যস্ততম মোড় ও সড়কের যত্রতত্র বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী উঠানামা করায় নগরীতে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। প্রায় প্রতিটি রুটের বাস, মিনিবাসের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট গন্তব্যে চলাচল না করার অভিযোগ আছে। মাঝপথে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিস থাকলেও তাতেও নেই কোন শৃঙ্খলা। দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েও এসব বাসে ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তোলা হচ্ছে। নগরীতে অবৈধ যানবাহনের ছড়াছড়ি চলছে। চলছে অবৈধ রিকশা, অটোরিকশা, টমটম এবং ব্যাটারিচালিত রিকশা। আছে পরিবহন মালিক, শ্রমিকসহ নানা সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি। সব মিলিয়ে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

চাঁদাবাজি রোধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হলেই মালিক শ্রমিকরা নানা অজুহাতে যাত্রীদের জিম্মি করা শুরু করে। গত বুধবার নগরীর অলঙ্কার মোড়ে পরিবহনের লাইনম্যান অফিসে অভিযান চালিয়ে চাঁদাবাজির টাকাসহ পাঁচ পরিবহন শ্রমিককে হাতেনাতে পাকড়াও করে র‌্যাব। তাদের বিরুদ্ধে নগরীর আকবর শাহ থানায় চাঁদাবাজির মামলা হয়। এর আগেও নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, পতেঙ্গা এবং জেলার হাটহাজারীতে পরিবহন শ্রমিকদের নানা সংগঠনের নামে চাঁদাবাজির সময় র‌্যাব পুলিশের অভিযানে অনেকে ধরা পড়ে। এরপরও চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি।

এদিকে অলঙ্কার এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে গত বুধবার রাতেই মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বৈঠক করে নগরীতে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ধর্মঘটের কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া থেকে তারা বিরত থাকেন।

অলঙ্কার এলাকা থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল এস এম ইউসুফ সাংবাদিকদের বলেন, প্রকাশ্যে অফিস খুলে বাস, হিউম্যান হলারসহ গণপরিবহনে তারা চাঁদাবাজি করছিলেন। তাদের অফিস থেকে চাঁদাবাজির টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে। চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গাড়ি বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের এমন অন্যায় আচরণ বরদাশত করা হবে না।

চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, পরিবহন মালিক বা শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন দাবি দেওয়া হয়নি। ধর্মঘটের কোনো ঘোষণা তারা দেয়নি। গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।
তবে পরিবহন মালিকরা বলছেন, প্রশাসনের জুলুম নির্যাতনের কারণে তারা গাড়ি চালাতে পারছেন না। এজন্য বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব মনজুরুল আলম মঞ্জু অভিযোগ করেন তারা প্রতিনিয়তই প্রশাসনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কোনোও কারণ ছাড়াই মামলা দেওয়া হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজন পরিবহন শ্রমিকদের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাচ্ছে। আর পারছি না, তাই বাধ্য হয়ে গাড়ি বন্ধ রেখেছি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন