বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গণপরিবহনের স্টিয়ারিং কার হাতে

যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে :: হয়তো দুয়েকটি বাস : বিআরটিএ চেয়ারম্যান :: গণপরিবহনে নৈরাজ্য থামাতে ডিজিটাল :: পদ্ধতি অবলম্বন প্রয়োজন : যাত্রী কল্যাণ সমিতি

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ঘোষণার পর থেকে গণপরিবহনে নানা অস্থিরতা শুরু হয়েছে। গণপরিবহন খাতের দায়িত্বশীলরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের ফাঁকা বুলি বলে যাচ্ছেন। কারো কোন কথাই যেন কাজে আসছে না। বিআরটিএ, পরিবহন মালিক সমিতির কোন কথা বা সিদ্ধান্ত গণপরিবহনের সাধারণ যাত্রীদের কোন উপকারে আসেনি।

বরং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সাধারণ যাত্রীদের জীবনে নেমে এসেছে ভাড়া বৃদ্ধি নামক খড়গ। এই যন্ত্রণায় দিশেহারা এখন দেশের সাধারণ যাত্রী। দায়িত্বশীলদের আচরণে নিরুপায় সাধারণ যাত্রীরা নানা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। রাজধানীর সাধারণ বাস যাত্রীরা বলছেন, গণপরিবহনের স্টিয়ারিং এখন কার হাতে। তাদের দাবি সরকারের সঠিক তদারকির মাধ্যমে গণপরিবহনের সকল অরাজকতা দূর করা প্রয়োজন। ভাড়া বৃদ্ধি নামক নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির দাবি তাদের। এছাড়াও গণপরিবহনে ধর্ষণ, ডাকাতি ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা এখন নিত্যদিনের। রাজধানীসহ সারা দেশে বাস টার্মিনালগুলো অব্যবস্থাপনা, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, চাঁদাবাজি, মহাসড়কে তিন চাকার যানের অবাধ চলাচল তো রয়েই গেছে।

২০১৮ সালে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব ও মীম নিহত হন। এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন সমর্থন পায় সর্বক্ষেত্রে। সাধারন যাত্রীরা অনেক আশায় বুক বাঁধেন এবার হয়তো সড়কের নৈরাজ্য কমবে। কিন্তু সেই আন্দোলনের পর শুধুমাত্র মোটরসাইকেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে হেলমেট ব্যবহারের সচেতনতা বেড়েছে সাধারণ মানুষের। এছাড়া গণপরিবহনের কোন ভালো পদক্ষেপ আসেনি বলে জানিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।

জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর দেশের সব গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্দেশনা দেয়ার পরও ঢাকার গণপরিবহনে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়ার মূল্য তালিকা টানানো হয়নি। রাজধানীতে বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩৫ পয়সা বাড়ানো হলেও তা মানছে না পরিবহনগুলো। স্টপেজ প্রতি বাড়তি ৫ থেকে ১০ টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এই চিত্র এখন রাজধানীতে চলাচলরত সকল রুটের গণপরিবহনে দেখা যায়। গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির তালিকা টানিয়ে রাখার কথা থাকলেও কোন বাসে তা দেখা যায়নি। সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ থেকে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা মানা হয় না। এখন সর্বনিম্ন ভাড়া যেন ২০ টাকা। ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে বাস বন্ধ রেখে সঙ্কট সৃষ্টি করেছে মলিকপক্ষ। তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে তাদের পরিবহন চলাচলের ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই ভাড়া বৃদ্ধি না করলে বাস চালাতে পারবেন না। তাই তরিঘড়ি করে বাড়ানো হয় বাস ভাড়া আর এই চাপ এসে পড়ে সাধারণ যাত্রীদের কাঁধে। সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে তারা যখন দিশেহারা ঠিক তখনই বাড়ানো হয় আরেক দফা বাস ভাড়া। একারণে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। দূরপাল্লার বাসে ২২ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা করা হলেও। একেক বাসে এক এক রকম ভাড়া নিতে দেখা গেছে। তবে কোন বাসেই সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেখা যায়নি।

তবে রাজধানীতে চলা অধিকাংশ বাস সরকার নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে। হয়ত দু’য়েকটি বাস যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। দূরপাল্লার বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ খুব কম বলেও জানান তিনি। গতকাল শনিবার গাবতলীতে বাস যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। এ সময় তিনি তাৎক্ষণিকভাবে বাড়তি ভাড়া ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। বিআরটিএ চেয়ারম্যান জানান, এখনও অনেক পরিবহন ওয়েবিল সিস্টেম চালু রেখেছে। বিআরটিএ রাজধানীর ৯টি স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ভাড়তি ভাড়া, ভাড়ার চার্ট, ওয়েবিল বন্ধে কাজ করছে। বাস মালিকরা বিআরটিএকে সহযোগিতা না করলে এসব অনিয়ম বন্ধে কঠোর হওয়ার কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি বাস মালিকদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। বাস ভাড়া নির্ধারণে ত্রুটি রয়েছে। বাস ভাড়া আদায়, ভাড়া নির্ধারণ-প্রনয়ণ ও কর্মচারি-শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা সুনির্দিষ্ট নয়। একারণেও ভাড়া বেড়ে যেতে পারে।
সেই সরকার নির্ধারিত ভাড়াও কার্যকরে কোন পদক্ষেপ নেই। বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। ভাড়া নির্ধারণে বিআরটিএ পুরোপুরি ব্যর্থ, তারা বাসের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সরকারের উচিত এখনই গণপরিবহনের ভাড়া নৈরাজ্য ঠেকানো। এই নৈরাজ্য থামানোর জন্য গণপরিবহনে ডিজিটাল পদ্ধতি নিতে হবে। ###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন