রেলের ব্যাপক উন্নয়ন চলছে। আসলে যে কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা দীর্ঘস্থায়ী এবং নিরাপদ যাতায়াতের জন্য রেলের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশ বান্ধব, জ্বালানিসাশ্রয়ী ও নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে রেল একটি জনপ্রিয় পরিবহন। আমাদের সীমিত সম্পদ, জনসংখার আধিক্য, নিম্ন আয় ও কৃষিনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থায় রেলের গুরুত্ব ব্যাপক। যাতায়ত সুবিধা নিশ্চিতে, বেকার জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থানে, পণ্য পরিবহনে, অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের ব্যাপক প্রসারে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে রেলকে আধুনিক ও জনপ্রিয় করে তোলার বিকল্প নেই।
উপমহাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীপথের গুরুত্ব থাকলেও রেলপথের আবির্ভাব নতুন বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে, ঘটিয়েছে অভাবিত উন্নয়ন। রেল ব্যবস্থাকে উপমহাদেশের ক্ষেত্রে বলা হয় আধুনিকতার পথে প্রথম পদক্ষেপ। শিল্পায়ন, নগরায়ন, জ্ঞান, বিজ্ঞান ও আর্থ-সামাজিক বিনির্মাণে রেলওয়ে পালন করেছে অভূতপূর্ব ভূমিকা। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার দর্শনা জগতী সেকশনে ৫৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপনের মধ্য দিয়ে উপমহাদেশের এ অঞ্চলে রেলের গোড়াপত্তন হয়। শুরু থেকেই রেল এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে পালন করে আসছে যুগান্তকারী ভূমিকা।
ঔপনিবেশিক শাসনামলে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে রেলপথ ছিল কেন্দ্রীয় ভূমিকায়। এরই মাঝে ঘটেছে শিল্পায়ন, নগরায়ণ, বেড়েছে জনসংখ্যা। তার সাথে সঙ্গতি রেখে বেড়েছে জনগণের চাহিদা, সড়ক পথের ঘটেছে অভূতপূর্ব বিস্তার। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে আমাদের শহর জীবন হয়েছে জনাকীর্ণ, অতি যান্ত্রিকতায় পূর্ণ এবং এখানে জনসংখ্যা বেড়েছে অতিমাত্রায়। ফলে সড়ক পথের উপর পড়ছে অতিরিক্ত চাপ, প্রাইভেট গাড়ির আধিক্যও কম নয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশে দেশে সড়ক পথের অভূতপূর্ব বিস্তার ঘটেছে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু রেলওয়ের মাধ্যমে একসাথে বেশি পরিমাণ মালামাল পরিবহনের সুবিধা, যানজট সমস্যা না থাকায়, ভূমির পরিমিত ব্যবহার, জ্বালানি খরচ সাশ্রয়, নিরাপদ যাতায়াত এবং অপেক্ষাকৃত কম পরিবেশ দূষণ করার কারণে পৃথিবীজুড়ে সকল দেশেই রেলকে আবার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেয়া শুরু হয়েছে। অথচ, আমাদের দেশে এই খাতটি এখন পর্যন্ত চরম অবহেলার মধ্যে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসনের শেষে এ দেশে কেবলমাত্র ৬০০ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ছিল, তা বেড়ে এখন প্রায় ৪৯,৫০০ কিলোমিটার হয়েছে, যার মধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১৩,০০০ কিলোমিটার এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের ৩৬,৫০০ কিলোমিটার। অন্যদিকে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ১৯৪৭ সালের ২,৮০০ কিলোমিটার থেকে ২,৭০০ কিলোমিটারে নেমে গিয়েছিল। সম্প্রতি পার্বতীপুর হতে মধ্যপাড়া কঠিন শিলা ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি পর্যন্ত এবং যমুনা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় জামতৈল হতে জয়দেবপুর পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণের ফলে রেলপথের দৈর্ঘ্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২,৮৪৮ কিলোমিটার হয়েছে। এর ব্যাপ্তি আরো বাড়ানো প্রয়োজন। যে সব জেলা অথবা থানা রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নেই, সেসব জেলা ও থানাগুলোকেও রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে অন্যতম প্রধান পরিবহন রেল। রেলের সাহায্যে ধান, গম, চাউল, পাট, তামাক, আখ ইত্যাদি কৃষিজাত পণ্য এবং সার-কীটনাশক, কৃষি সরঞ্জাম এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনানেওয়া করা হয়। তাছাড়া এতে করে পরিবহন করা হয় শিল্পজাত পণ্য এবং নদী বন্দরের সাহায্যে যে সমস্ত পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করা হয় তারও একটা অংশ রেলওয়ের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। এতে পরিবহন খরচ কম থাকায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা সম্ভব। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয় তা হলো, দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বল্প আয়ের। এই স্বল্প আয়ের মানুষগুলোর যাতায়াত সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ রেলওয়েতে অর্থের মাপকাঠি এবং সুবিধা প্রদানের বিচারে তিন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরা, এখানে যারা বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত এবং আর্থিকভাবে বেশি স্বচ্ছল যাত্রীরা যাতায়াত করে থাকে। প্রথম শ্রেণিতেও যারা অপেক্ষাকৃত আরামে বা একটু পয়সা বেশি দিয়ে স্বাচ্ছন্দে যেতে চায় তারা যাতায়াত করে থাকেন। অপরটি দ্বিতীয় শ্রেণি। এই কামরায় সাধারণত কম পয়সাওয়ালা অর্থাৎ দরিদ্র শ্রেণির যাত্রীরা যাতায়াত করে থাকে। আমরা যদি বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী পরিবহনের চিত্রটি অবলোকন করি তাহলে দেখতে পাব এই দরিদ্র শ্রেণির মানুষ রেলে বেশি যাতায়াত করে থাকে। রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৯৮.৬% যাত্রী দ্বিতীয় শ্রেণিতে, ১.৩৬% প্রথম শ্রেণিতে এবং ০.০৫% যাত্রী শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় যাতায়াত করে থাকে।
সড়কপথে যাতায়াতের চেয়ে রেলপথে যাতায়াত অনেক বেশি আরামদায়ক। রেলে যাত্রীরা অনেক আরামে বসে যেতে পারে এবং এর কামরাগুলোতে যে সিট রয়েছে সেখানে দু সারির মধ্যে অনেক জায়গা থাকায় যারা দাঁড়িয়ে যায় তারাও স্বাচ্ছন্দে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। সিটে বসে প্রয়োজনে ঘুমাতে বা পড়ালেখা করতে পারে।
ট্রেন লাইনে সাধারণত কোনো যানজট থাকে না। সুতরাং নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো যায়। আমাদের দেশে সড়ক পথে অধিকাংশ সময় যানজট লেগে থাকে। যে কারণে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ট্রেন একটি আরামদায়ক পরিবহন ব্যবস্থা। এর লাইনগুলো সাধারণত মসৃণ। যে কারণে যাতায়াতে ঝাঁকি কম লাগে। একটি স্টেশনে এসে নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় অপেক্ষা করে যাত্রী এবং মালামাল উঠানামা করার জন্য। যে কারণে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, শিশু, মহিলাসহ সর্বস্তরের মানুষ নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে। অন্যদিকে বাসগুলো স্টপেজে স্থিরভাবে দাঁড়ায় না। সে কারণে গাড়িতে উঠা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ট্রেন যোগাযোগে দুর্ঘটনা, মৃত্যু এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম।
রেলওয়ে সরকারি একটি সেবাখাত। জনসাধারণের যোগাযোগ সুবিধার জন্য এর চেয়ে ভালো বাহন আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু দুর্নীতি আষ্টেপিষ্টে জেকে বসেছে রেলওয়েতে। অধিকাংশ সময় যাত্রী টিকেট কিনতে গিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কিনতে পারে না। তাকে কালোবাজারীদের কাছ থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে হয়। একাধিকবার যে যাত্রী কালোবাজারীদের মুখোমুখি হয় স্বাভাবিক কারণে সে রেল যাত্রায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। রেলের স্টোরকৃত মালের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। তেল-ডিজেল যা দরকার তার থেকে দু-তিনগুণ বেশি কেনা-বেচা হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন রেল স্টেশনে চলাচলকারী রেলের ইঞ্জিন থেকে শ’ শ’ লিটার ডিজেল চুরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। চুরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। রেল স্টেশন চত্বরে দোকানগুলোতে ও রেলের পরিত্যাক্ত বাসায় অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ, যা রেলওয়ের শক্তিকে সংকুচিত করে ফেলছে। রেলের যে সম্পদ ও সম্পত্তি আছে তা রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোনো ব্যবস্থা। প্রতিনিয়ত দখল হয়ে যাচ্ছে রেলওয়ের জমি ও সম্পদ। এগুলি দিনের পর দিন স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে। রেলের ক্রাপ, রেলপাত, ভাঙ্গা লোহা অবাধে পাচার হচ্ছে। একটি সংঘবদ্ধচক্র কাজগুলি করছে প্রকাশ্যে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। অথচ, এই সম্পদের চুরি ঠেকিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারলে এবং এ সকল অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরূদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব।
দেশের ক্রমবর্ধিত জনসংখ্যার যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে, বিশেষ করে ঢাকার উপর যে অব্যাহত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার লক্ষ্যে ঢাকার আশেপাশের শহরগুলোর সাথে রেল নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা এবং তার সঠিক ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেক্ষেত্রে রয়েছে প্রচুর সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধাতা কাটিয়ে আশপাশের জেলাগুলোর সাথে ঢাকাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসলে ঢাকা থেকে ধীরে ধীরে মানুষজন আশপাশের জেলাগুলোতে বসতি স্থাপন করবে। তাতে ঢাকার উপর চাপ কমে আসবে। এবং যানজট থেকেও ঢাকা অনেকটা মুক্তি পাবে। এছাড়া যেটি বলা দরকার তা হলো, ঢাকার আশপাশ জুড়ে রেলওয়ের যে নেটওয়ার্ক রয়েছে তার সময় ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, যাত্রী সাধারণের কখন বেশি যাতায়ত করা প্রয়াজন সে অনুযায়ী ট্রেনের সময়সূচি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। যেমন ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলো থেকে যে ট্রেন ঢাকায় আসে এই ট্রেনটি যদি অফিস সময়ের মধ্যে ঢাকা এসে পৌঁছায় এবং অফিস শেষ হওয়ার পরপরই যদি ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোর অভিমুখে যাত্রা করে তাহলে এ অঞ্চলের মানুষ ঢাকায় এসে ভিড় করবে না এবং ট্রেনও পর্যাপ্ত যাত্রী পাবে।
রেলওয়েরে সীমাবদ্ধতাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো এর কামরাগুলো খুবই অপরিচ্ছন্ন থাকে, সিটগুলো ভাঙ্গা এবং সময় বেশি লাগে। সময় বেশি লাগার কারণ ট্রেনকে অনেক ঘুরে যাতায়াত করতে হয় এবং জংশনগুলোতে লাইন পরিষ্কার না থাকার কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আন্তনগর ট্রেনগুলোতে আসনের বিপরীতে ৫-৬ গুণ টিকিট বিক্রি হয় ইত্যাদি।
রেলওয়ে ব্যবস্থায় অনুন্নয়নের পেছনে রাজনৈতিক অর্থনীতিও দায়ী। সেটি হলো এই যে, সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে বর্তমানে সড়ক পথে চালু হয়েছে বিলাসবহুল গাড়ি। আর এই গাড়ি ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছে রাজনৈতিক নেতা ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের স্বার্থ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেরাও এই ব্যবসার সাথে জড়িত। ফলে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই কাঠামোগতভাবে দুর্বল করে দেয়া হচ্ছে রেল ব্যবস্থা। সুতরাং বর্তমানের এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণেও এই ক্ষেত্রটি বিকশিত হতে পারছে না।
নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, ‘আধুনিক উন্নয়ন চিন্তার কেন্দ্রীয় বিষয়গুলো হলো দীর্ঘস্থায়ী ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা।’ ইতোমধ্যে পৃথিবী জুড়ে রেলওয়ে এক শক্তিশালী ও সম্ভাবনাময় পরিবহন মাধ্যম হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। আমাদের দেশেও এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে জাতীয় স্বার্থেই সত্যি করে তুলতে হবে। তার জন্যে বাজেটে রেলের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, দক্ষতার সাথে ট্রেনের সময় ব্যবস্থাপনা করা, সেবার মান বৃদ্ধি করা, সর্বোস্তরের দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া ও টিকিট চেকের ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করা, দক্ষ লোকবল বৃদ্ধি করা, পর্যায়ক্রমে ঢাকার কাছাকাছি জেলাগুলোতে ট্রেনের যোগাযোগ সম্প্রসারিত করা, মিটিং, সেমিনার, গোলটেবিল বৈঠক, টিভি টকশো, মতবিনিময় সভা ইত্যাদির মাধ্যমে এর অপরিহার্যতার বিষয়টি সরকার ও নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টিগোচর করা গণমাধ্যমগুলোতে রেল ব্যবস্থাপনার অসঙ্গতি এবং সম্ভাবনার জায়গাগুলো সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা ইত্যাদি।
লেখক: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
belaYet_1@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন