জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও মিনিবাসে ভাড়া ৩৫ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। দূরপাল্লায় বাসভাড়া বাড়িয়েছে ৪০ পয়সা। গতকাল শনিবার রাতে বনানীতে বিআরটিএর কার্যালয়ে অংশীজনের সঙ্গে বাসভাড়া পুনঃনির্ধারণী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহসহ অংশীজন। বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এবং বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে আমরা বাসভাড়া পুনঃনির্ধারণী বৈঠক করেছি। পাশাপাশি আমদানি ব্যয় বাড়ায় বাসের বিভিন্ন সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণেও বাস মালিকদের কিছু দাবি ছিল। বৈঠকে সবার আলোচনা পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এখন দূরপাল্লার বাসে ভাড়া হবে কিলোমিটারপ্রতি ২.২০ টাকা, মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে বাসে ২.৫০ টাকা, মিনিবাসে ২.৪০ টাকা ভাড়া হবে। আগে ভাড়া ছিল দূরপাল্লার বাসে ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১.৮০ টাকা, মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে বাসে ২.১৫ টাকা, মিনিবাসে ২.১০ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা। এতে বাস ভাড়া ১৬ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রোববার থেকে এই সীদ্ধান্ত কার্যকর হবে। যদি কেউ এর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তাঅধিকারে অভিযোগ করা যাবে। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করবো। মালিক সমিতির লোকজন সাথে থাকবেন।
গতকাল গণপরিবহন সঙ্কটের কারণে চরম যাত্রী ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে। এক সিদ্ধান্তের কারণেই দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীসহ সারাদেশের গণপরিবহন যাত্রীরা। ঢাকার রাজপথের পরিবহন সঙ্কটে সকাল বেলা গন্তব্যের জন্য বের হওয়া মানুষগুলো পড়েছেন বিপাকে। ফাঁকা রাস্তায় গণপরিবহন না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েন নগরবাসী। সিএনজি চালিত অটোরিকশায় গন্তব্যে যেতে চাইলেও আকাশছুঁয়া ভাড়া চাওয়ার কারণে অনেকেই সিএনজি চালিত অটোরিকশায় উঠার সাহস পাননি।
এছাড়া বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দেখা গেছে, একটি রিকশা সিএনজি অথবা দীর্ঘক্ষণ পর বাস আসলে শত শত মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে বাসে উঠার জন্য। গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার পর থেকে গতকাল শনিবার রাজধানীতে এমন চিত্রই দেখা গেছে। সাধারণ যাত্রীরা পরিবহনের এই সঙ্কটকে বাস মালিকদের ইচ্ছাকৃত বলে দাবি করেন। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দূরপাল্লার গণপরিবহনের ভাড়াও। গতকাল সকাল থেকেই প্রায় সব গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর মালিকপক্ষ পরিকল্পিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন বলে অভিযোগ যাত্রীদের। আর এ সুযোগে যাত্রীদের কাছে ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখো গেছে, শত শত মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন বাসের অপেক্ষায়। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর কোনো কোনো রুটে একটি বাস এলেও সেটিতে ওঠার আশায় ছুটে যাচ্ছেন অনেক বেশি মানুষ। সেসব বাসগুলো আগে থেকে যাত্রীতে পরিপূর্ণ হয়ে আসছে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে বাসগুলোতে কেউ উঠতে পারছেন না।
রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, সিটি কলেজ, মোহাম্মদপুর, মহাখালী, ফার্মগেট, মিরপুর, আগারগাও, মালিবাগ, বাড্ডা, রামপুরা, কুড়িল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া, কাজলা, যাত্রাবাড়ি এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
বাস যাত্রী সুমিত দত্ত বলেন, সকালে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কোনরকমে একটি বাস পেয়েছি। মতিঝিল থেকে এলিফ্যান্টরোড পর্যন্ত আসলাম ভাড়া নিল অন্য দিনের চেয়ে ১৫ টাকা বেশি। আগের দিনও মতিঝিল থেকে ১০ টাকা দিয়ে এসেছি। কিন্তু ১০ টাকার ভাড়া তারা নিচ্ছে ২৫ টাকা। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার এক ঘোষণাতেই সব বেড়ে গেলো। এটা আমাদের উপর অরাজকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সরকার ও বাস মালিকরা তারা তাদের সুবিধামতো ভাড়া বাড়াচ্ছে এখানে সাধারণ মানুষের কষ্টকে কোন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছেনা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে দেশে জ্বালানি তেলের দাম গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। এতে বাস পরিচালনার ব্যয় বেড়ে গেছে। তাই বাস ভাড়া সমন্বয় করা জরুরি।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন বলেন, বিশ্ববাজারে বর্তমানে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী। এ সময়ে বাজার পর্যবেক্ষণ না করে কেবল আইএমএফের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাই। তিনি আরও বলেন, জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছির বাড়ানোয় জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত তেলের দাম যে পরিমাণ বাড়ে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বাড়ে বাস ও অন্যান্য গণপরিবহন ভাড়া। পণ্য পরিবহন ভাড়াও ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে দেন ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিকেরা। ভাড়া যে পরিমাণ বাড়ে, বাসে বাসে তার কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন