শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সব ভোগান্তি যাত্রীদের

গণপরিবহনগুলো কখনোই যাত্রীদের কথা ভাবা হয় না

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সব ভোগান্তি যেন গণপরিবহনের যাত্রীদের। নিত্য দুর্ভোগের কারণে নিরাপদে গন্তব্যে যাওয়া যেন স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকাল বেলা ঘর থেকে বের হলেই মুখোমুখী হতে হয় নানা ভোগান্তির। উন্নয়ন কাজে রাস্তা বন্ধ, কখনো যানজট, কখনো গাড়ি সঙ্কট, বাসে ভাড়া বেশি নিয়ে বাকবিতণ্ডা, দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে থেকে গন্তব্যে যেতে না পারা। বাসের চালক ও হেলপারের কাছে যাত্রী হয়রানি এখন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস যাত্রীরা একই স্থানে বসে থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিচ্ছেন। এতে অর্থ ও সময় দুইই নষ্ট হচ্ছে।

বাস যাত্রীদের ভোগান্তির পাশাপাশি ট্রেনে চলাচলকারীদেরও পড়তে হয় বিপাকে। ট্রেনে টিকিট জালিয়াতি ও নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট না পাওয়া এখন বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। ঈদ বা অন্যকোন উৎসবের সময় এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এছাড়া ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে প্রায় সব দিনে। নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যায় এমন ট্রেনের সংখ্যা খুবই কম। ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সাধারণ যাত্রীরা এই নিরাপদ বাহনটিকে দুর্ভোগের বাহন হিসেবেই দেখছেন। ইতপূর্বে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়, টিকিট কালোবাজারি ও যাত্রীসহ বগি রেখে ট্রেন চলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
জানতে চাইলে সেভ দ্য রোডের মহাসচিব শান্তা ফারজানা ইনকিলাবকে বলেন, যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে বিআরটিএকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনা। ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বিআরটিএ দিলেও যাত্রীদের বিষয়ে কিছু বলে না। বাসে মহিলা যাত্রীদের আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে। দেখা যায় মহিলা সিটে পুরুষ বসে থাকেন। সিট তাদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও তারা বসতে পারেন না। ট্রেনের যাত্রীরাও নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন। সেক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে পুলিশকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে।
জানা যায়, রাজধানীতে চলাচলরত বাস বা গণপরিবহনের ভাড়া নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। সরকার নির্ধারিত রুটে সঠিক কোন ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। বিআরটিএর বাস ভাড়া নির্ধারণ নিয়েও রয়েছে যাত্রীদের অভিযোগ। আবার যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে তাও নেয়া হচ্ছে না। তারচেয়ে বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যাত্রীরা। অন্যদিকে সর্বনিম্ন ভাড়া ৮ থেকে ১০ টাকা হলেও তা নেয়া হয় কমপক্ষে ১৫টাকা। কোন স্থানে ১৩ টাকা ভাড়া হলে নেয়া হয় ১৫ টাকা। ১৮ টাকা হলে নেয়া হয় ২০ টাকা, ২২ টাকা ভাড়া হলে নেয়া হচ্ছে ২৫ টাকা। এভাবে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়েও বেশি নেয়া হচ্ছে।
আর বাস ভাড়া নির্ধারণে মালিকরা যে ব্যয় দেখান, তার বেশিভাগই আসলে শুভঙ্করের ফাঁকি। তাতেই যাত্রী ভোগান্তি বা প্রতারণার শেষ নয়। ওয়েবিল, সর্বনিম্ন ভাড়া অথবা গ্যাস নাকি ডিজেলে চলে; এমন নানা খাতে যাত্রীদের পকেট কাটছে পরিবহন মালিকরা। এছাড়া লক্করঝক্কর বাস বন্ধ থাকার কথা থাকলেও এসব বাস দিয়েই চলছে যাত্রী পরিবহন ও বেশি ভাড়া আদায়।
যাত্রীরা বলছেন, বাসের সিট পরিবর্তনসহ নানা সমস্যা দেখা যায় বাসগুলোতে। সিট ঠিক থাকে না। গ্লাস ভাঙা থাকে। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে। ওয়েবিলের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে বাকবিতণ্ডা নিত্যদিনের ঘটনা। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সকাল আটটা থেকে শুরু হয়েছে। নতুনসূচিতে এ অফিস চলবে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অফিসের নতুন সময়সূচির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য পরিবর্তিত অফিসসূচির কারণে রাজধানীর সড়কে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রীরা। এ সময়সূচির কারণে আগে সড়কে সকাল ৮টার পর যানজট দেখা যেত। তবে নতুন অফিসসূচির প্রথম দিন থেকে ৭টার দিকেই দেখা গেছে যানজট।
ওয়েবিলের নাম করে অযথা বেশি ভাড়া আদায় ও সময় ক্ষেপন করেন গণপরিবহনের চালক ও কর্মচারীরা। প্রতারণার মাধ্যমে ওয়েবিলের নামে টাকা বেশি নেয়ায় নিয়মিতই যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাস মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে এই ওয়েবিল নামক যন্ত্রণার পদ্ধতি বন্ধ ঘোষণা করলেও রাজধানীর কোন রুটেই এই পদ্ধতি এখনো বন্ধ হয়নি।
এদিকে, রাজধানীর অভ্যন্তরীণ পরিবহণ ব্যবস্থায় যাত্রী ভোগান্তি নিরসনে চালু হলো ই-টিকেটিং ব্যবস্থা করা হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ীতে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করে ট্রান্সসিলভা পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির উদ্যোগে ই-টিকিট ব্যবস্থা চালুর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে যাত্রীরা নির্দিষ্ট কাউন্টারে পজ মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন। টিকিটের গায়ে যাত্রার বিবরণ থেকে টাকার পরিমাণ সবই উল্লেখ থাকবে। তাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো সুযোগ থাকবে না। যাত্রীদের প্রত্যাশা, এর ফলে ভোগান্তি কমে সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা কমে আসবে।
ট্রেন যাত্রী নাজমুন নাহার বলেন, কমলাপুর থেকে তিতাস কমিউটার ট্রেনে ভৈরবে যাওয়ার জন্য টিকিট কেটে বসে থাকার ৩০ মিনিট পরও ট্রেন আসে। পরে দেড়িতে ট্রেন আসার কারণে ঠিক সময়ে গন্তব্যে যেতে পারি নি। তিনি নিয়মিত তিতাস কমিউটার ট্রেনের যাত্রী বলে জানান তিনি। এছাড়াও অন্য ট্রেনেও সিডিউল বিপর্যয় রয়েছে।
বাস যাত্রী মামুন বলেন, গণপরিবহনের যাত্রী হিসেবে আমরা যেন এক পণ্য হয়ে গেছি। তাদের কথা মতো চলতে হয়। সঠিক কথা বললে বাকবিতণ্ডা। ওয়েবিল নামক পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের উপর চাপানো হয়েছে বাড়তি ভাড়া।
রাইদা পরিবহনের যাত্রী আশিক কামাল ইনকিলাবকে বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তির কোন শেষ নেই। বেশি ভাড়া দিয়েও ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় যেতে পারিনা। যানজটে পড়ে রাস্তায় বসে থাকতে হয়। কোন দিনই কতক্ষণ রাস্তায় বসে থাকতে হবে তার কোন ঠিক নেই। ভাড়া কম বেশি নিয়ে প্রত্যেকদিনই হেলপারের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। অনেক যাত্রীকে মাঝে মাঝে বাস থেকে নামিয়েও দেয়া হয়। ###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন